গত দু’মাস ধরে সিউড়ি সদর হাসপাতালে রাজ্য সরকার নির্ধারিত সংস্থাগুলি থেকে স্যালাইন, শ্বাসকষ্টের ইঞ্জেকশন ডেকাড্রন-সহ বেশ কিছু জীবনদায়ী ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে চরম সঙ্কটে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সঙ্কট মেটাতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে হাসপাতাল কতৃর্পক্ষের। বাধ্য হয়ে ওই সব ওষুধ কিনতে হচ্ছে খোলা বাজার থেকে। কিন্তু সেখানেও যোগান প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বেশ কিছু রোগীকেও বাইরে থেকে চড়া দামে ওষুধ কিনতে হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সব চেয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে শ্বাসকষ্টের ইঞ্জেকশন ডেকাড্রন নিয়ে। এমনিতে সরকার নির্ধারিত দাম প্রতিটি আড়াই টাকা করে। কিন্তু বাইরে থেকে তার দাম বেশি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীদের একাংশকে সাড়ে ৬ টাকা দিয়ে ওই ওষুধ কিনতে হচ্ছে। তাতেও অবশ্য চাহিদা মিটছে না। একই ভাবে মিলছে না পেটে ব্যাথার ইঞ্জেকশন, মানসিক রোগীর ওষুধ প্রভৃতি।
সমস্যাটা ঠিক কোথায়?
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এক বছর আগে পর্যন্ত ৭-৮টি সংস্থা হাসপাতালগুলিতে বিভিন্ন ওষুধ সরবরাহ করত। ওষুধের যোগানে তখন তেমন কোনও টান পড়ত না। কিন্তু রাজ্যের নতুন সরকার গত বছর সিদ্ধান্ত নেয় ওষুধের এক একটি আইটেম এক একটি সংস্থা সারা রাজ্যে সরবরাহ করবে। ওই সংস্থাগুলির প্রায় সবই ভিন রাজ্যের। যেমন স্যালাইন সরবরাহ করে পঞ্জাবের একটি সংস্থা। আবার ডেকাড্রন ইঞ্জেকশন আসে হরিয়ানা থেকে। গুজরাত থেকেও অন্য ওষুধ আসে। এতদিন সব ঠিকঠাক চললেও গত দু’মাস ধরে নির্ধারিত ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে সমস্যায় পড়ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সিউড়ি সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে প্রতিদিন ৫০০ বোতল করে স্যালাইন লাগে। সেই স্যালাইনের সরকার নির্ধারিত দাম বোতল পিছু সাড়ে ১১ টাকা। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় স্থানীয় বাজার থেকে বোতল পিছু সাড়ে ১৮ টাকা দরে তা কিনতে হচ্ছে। হাসপাতাল সুপার মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “রোগীদের বাঁচাতে হবে। এ ছাড়া তো কোনও উপায় নেই।” তিনি জানিয়েছেন, স্যালাইন খোলাবাজারে মিললেও ডেকাড্রন পাওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। এ দিকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিসকুমার মল্লিক বলেন, “ওই সব সংস্থাগুলিকে আমরা একাধিক বার চিঠি পাঠিয়েছি। ঠিক কী কারণে তারা ওষুধ সরবরাহ করছে না, তা বুঝতে পারছি না।”
একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রামপুরহাট ও বোলপুর মহকুমা হাসপাতালেও একই সমস্যা চলছে। আশিসবাবু আরও বলেন, “ওই দুই হাসপাতালেও সঙ্কট চলছে। তবে সদর হাসপাতালের সঙ্কটের চেহারাটা আরও বেশি। কারণ ওই দুই হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে রোগীরা সদর হাসপাতালেই ভর্তি হচ্ছেন।” অতিরিক্ত রোগী এবং অপ্রতুল ওষুধ এই দু’য়ের চাপে এখন জেরবার জেলার সদর হাসপাতাল। |