মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক-চিকিৎসক বিক্রম সাহাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ায় অভিযুক্ত ৬ চিকিৎসকের মধ্যে ‘উধাও’ ৫ জন। এঁদের ৪ জন মেদিনীপুর মেডিক্যালে কর্মরত। এক জন মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে ইস্তফা দিয়ে মেদিনীপুর শহরেই ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, এই ৫ জন ‘এলাকায় নেই’ রবিবার থেকে। সোমবার বহু চেষ্টা করেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ষষ্ঠ অভিযুক্ত, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অনুপ রায় এ দিন ছিলেন কলকাতায়। স্বাস্থ্য ভবনে দেখা করেছেন বিভাগীয় শীর্ষ-কর্তাদের সঙ্গে। খোদ অনুপবাবুর কথায়, “আমি একটু বাইরে আছি।”
মৃত চিকিৎসকের স্ত্রী শালিনী সাহার করা অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার বিক্রমবাবুকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও হুমকি দেওয়ার মামলা নথিভুক্ত করে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানা। রবিবার রাতে মেদিনীপুর শহরের কেরানিতলায় বিক্রমবাবুর বাড়ি যায় সিআইডি-র তদন্তকারী দল। স্বাস্থ্য দফতর ও পুলিশ সূত্রের দাবি, রবিবার থেকেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে জাননি সেখানে কর্মরত চার অভিযুক্ত চিকিৎসকঅশোক মাইতি, আশিস হাজরা, মৃণাল বর্মন ও অরুণ আচার। |
অভিযুক্ত ডাক্তারের চেম্বার বন্ধের নোটিস । ছবি: রামপ্রসাদ সাউ । |
অশোকবাবু প্যাথলজি বিভাগের স্পেশালিস্ট মেডিক্যাল অফিসার। বাড়ি শহরের মিত্র কম্পাউন্ডে। সোমবার তাঁর চেম্বারে বসে থাকা এক কর্মী বলেন, “ডাক্তারবাবু নেই। শুক্রবারের আগে পাবেন না। ওই সময় এলেও ফোন করে আসবেন।” মৃণাল বর্মন চর্ম বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার। বাড়ি শহরের রাঙামাটিতে। তাঁর বাড়িতেও এ দিন তালা। শিশু বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার আাশিসবাবুর রবীন্দ্রনগরের বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকেরা বলেন, “উনি বাড়িতে নেই। কোথায় গিয়েছেন, জানি না। কবে আসবেন, বলতে পারব না।’’ বার্জটাউন এলাকায় বাড়ি চর্মরোগ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অরুণবাবুর। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সীমানা প্রাচীরের ভিতরে ও বাইরে দু’টি বোর্ড টাঙানো। বাইরের বোর্ডটিতে লেখা, ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য চেম্বার বন্ধ থাকবে।’ ভিতরের বোর্ডটিতে লেখা রয়েছে, ‘১৭ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত চেম্বার বন্ধ থাকবে।’ তালা ছিল, মেদিনীপুর মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন স্পেশালিস্ট মেডিক্যাল অফিসার দেবাশিস মজুমদারের (সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে এখন প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন) রবীন্দ্রনগরের বাড়ির দরজাতেও। ওই পাঁচ চিকিৎসকের মোবাইলও বন্ধ।
অনুপবাবু অবশ্য মোবাইলে কথা বলেছেন। তবে ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে মেদিনীপুর মেডিক্যালে তাঁর প্রাক্তন সহকর্মীদের ‘উধাও’ হওয়ার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে তাঁর জবাব, “তদন্তাধীন বিষয়ে আর কিছু বলা যাবে না। ওই চিকিৎসকেরা কোথাও চলে গিয়েছেন কি না, বা কেন গিয়েছেন, জানি না।” পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী ওই পাঁচ চিকিৎসকের ‘উধাও’ হওয়া প্রসঙ্গে মন্তব্য করেননি।
একই মামলায় অভিযুক্ত সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার অবশ্য বাড়িতেই রয়েছেন। তাঁর দাবি, “এটা মিথ্যে মামলা। আমি ওই চিকিৎসকের (বিক্রম সাহা) নাম শুনেছি। কিন্তু, চিনতাম না।”
রবিবার বিক্রমবাবুর বাড়িতে যাওয়া সিআইডি-র দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডিএসপি পূর্ণশিব মুখোপাধ্যায়। ঘণ্টাখানেক ধরে তাঁরা শালিনীদেবীর সঙ্গে কথা বলেন। ‘সুইসাইড নোট’ সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে খোঁজ নেন। জানা গিয়েছে, এ দিন প্রাথমিক একটি রিপোর্ট ভবানী ভবনে ডিআইজি’র (সিআইডি) কাছে পাঠানো হয়েছে। সিআইডি কি তা হলে তদন্ত শুরু করল? ডিআইজি (সিআইডি) বিনীত গোয়েল বলেন, “সরকারি ভাবে সিআইডি এখনও কোনও তদন্ত করছে না। এ রকম কোনও ঘটনা ঘটলে সিআইডি-র অফিসারেরা স্বাভাবিক নিয়মেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে যান। এ ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে।” |