‘আড্ডায় মশগুল’ কর্মীরা, দেহ গেল না ময়না-তদন্তে
হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু হয়েছে সকাল ১০টায়। কিন্তু বিকেল চারটে পর্যন্ত মৃতদেহ পৌঁছল না মাত্র কয়েক পা দূরত্বে, ওই হাসপাতালেরই ফরেন্সিক বিভাগে। তাই ময়না-তদন্ত হল না, আর দেহ হাতে পেলেন না বাড়ির লোকজন। পরিবর্তে সন্ধ্যায় মৃতদেহের ঠাঁই হল হাসপাতালের মর্গে।
অভিযোগ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে দেহটি ফরেন্সিক বিভাগে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করার দায়িত্ব যাঁদের, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সেই নার্সরা এবং কর্তব্যরত ওয়ার্ডমাস্টার তখন গল্প করছিলেন। তাই তাঁরা ‘সময় বার করতে’ পারেননি। ঘটনাস্থল এসএসকেএম হাসপাতাল। মৃতের পরিবারের তরফে এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ভবানীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শুধু গল্পগুজব নয়, কর্তব্যরত ওয়ার্ডমাস্টার তখন সিগারেটে সুখটান দিয়ে তাস খেলছিলেন বলেও অভিযোগ। চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ স্বীকার করেছেন, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কর্মসংস্কৃতির মান এমনই তলানিতে যে, সময়ে কাজ না করে মানুষের ভোগান্তি বাড়ানোটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনায় সরকারি হাসপাতালে কর্মসংস্কৃতির বেহাল ছবিটা আরও এক বার সামনে এসেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা ঘটনাটিকে একেবারেই লঘু করে দেখছেন না। এসএসকেএমের সুপার তমালকান্তি ঘোষ বলেন, “অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কড়া শাস্তি হবে। আমাদের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মুষ্টিমেয় কয়েক জনের জন্য গোটা হাসপাতালের বদনাম হচ্ছে। মৃতের বাড়ির লোকজনের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করলেই হয়রানির মাত্রাটা ভেবে শিউরে উঠছি। এমন ঘটনার জন্য গোটা হাসপাতালের তরফে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি।”
বেহালার পর্ণশ্রীর বাসিন্দা বিমলকুমার দে এসএসকেএমের নিউ ইমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি হন গত বৃহস্পতিবার। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরে বিষক্রিয়া হয়েছিল। সোমবার সকাল ১০টায় তাঁর মৃত্যু হয়। যেহেতু ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’, তাই দেহটির ময়না-তদন্ত হওয়ার কথা। সেই অনুযায়ী বাড়ির লোকজনকে ওয়ার্ডমাস্টারের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ ময়না-তদন্তের জন্য কাগজপত্র তৈরি করে হাসপাতালকে দেয় এবং হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড থেকে মৃতদেহটি ফরেন্সিক বিভাগে পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ওয়ার্ডমাস্টার পুলিশের উপরে দায় চাপালেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পুলিশ দুপুর দেড়টার মধ্যে কাগজপত্র তৈরি করে ফেলেছিল। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড এবং ওয়ার্ডমাস্টারের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই দেহটি ফরেন্সিক বিভাগে পৌঁছতে বিকেল পাঁচটা বেজে যায় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, বিকেল চারটের পরে ময়না-তদন্ত হয় না। এ ক্ষেত্রে তাই মৃতদেহটি মর্গে পাঠিয়ে দেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা।
বিমলবাবুর ছেলে বিদ্যুৎ দে-র অভিযোগ, পিংপং বলের মতো এক বার ওয়ার্ডের নার্স, আর এক বার ওয়ার্ডমাস্টারের ঘরে ধাক্কা খেয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “নার্সরা গল্পে এতটাই মশগুল ছিলেন যে, আমার অনুরোধ কানে তোলার সময়ই পাচ্ছিলেন না। আমরা বারবার বলছিলাম, তাড়াতাড়ি করুন, না-হলে বাবার দেহটা আজ সৎকার করতে পারব না। ওঁরা কান দিচ্ছিলেন না। ওয়ার্ডমাস্টারের ঘরে দিয়ে দেখলাম, তিনি সিগারেটে টান দিতে দিতে তাস খেলছেন। আমরা কাজের কথা বলায় অপমান করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিলেন।” শুধু তা-ই নয়, নার্সদের বারবার ফোন করে অনুরোধ করায় তাঁরা ওয়ার্ডের ফোনটি নামিয়ে রেখেছিলেন বলেও অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট নার্সদের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে অভিযুক্ত ওয়ার্ডমাস্টার আফুয়ান শেখ তাঁর বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি সিগারেটও খাইনি, তাসও খেলিনি। হয়তো আমার চেয়ারে অন্য কেউ বসেছিলেন। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।”
তাঁর অপরিচিত এক রোগীর পরিবার খামোখা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে যাবেন কেন, সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর অবশ্য তাঁর কাছে পাওয়া যায়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.