দুই পরিবারের মিল অনেক। বাড়ির পুরুষ মানুষটি কাজে না গেলে হাঁড়ি চড়া অনিশ্চিত। কিন্তু মেয়েদের উচ্চশিক্ষার অদম্য ইচ্ছা। মাধ্যমিকের পরে উচ্চ মাধ্যমিকেও তাঁরা এলাকায় নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু এ বার কলেজে পড়া নিয়ে তাঁরা সংশয়ে।
একজন মামণি গড়াই। পুঞ্চার লৌলাড়া রাধাচরণ আকাডেমির এই ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকে ৪০২ নম্বর পেয়েছেন। অন্য জন, সোমা পরামাণিক। হুড়া থানার নপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৮০ পেয়েছেন। মামণির বাবা জনমজুরের কাজ করেন। কাল কী খাবে, তার ঠিক নেই। মাটির ঘরের খড়ের ছাউনিতে অনেক বছর হল নতুন খড় পড়েনি। মামণির বাবা সাধন গড়াই বলেন, “তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার সংসার। দিন মজুরের কাজ ও মাথায় মাল বয়ে সংসার চালাই। সব দিন কাজ জোটে না।” |
তিনি জানান, লৌলাড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকরা সহযোগিতা না করলে মামণিকে আর পড়ানো সম্ভব হত না। স্কুলের বই-খাতা সব তাঁরাই জুগিয়েছেন। কিন্তু মেয়েকে কলেজে পড়ানোর ক্ষমতা তাঁর নেই। লৌলাড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিয় চক্রবর্তী বলেন, “মেয়েটি পড়াশোনায় অত্যন্ত ভাল। আমরা স্কুল থেকে যথাসাধ্য সাহায্য করেছিলাম। সে স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে।” মামণির ইচ্ছা, “শিক্ষকতা করে পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করতে চাই। কিন্তু পরিবারের এই আর্থিক অবস্থায় তা পূরণ হবে কি না জানি না।”
একই চিন্তায় হুড়ার কুলবহাল গ্রামের সোমা পরামাণিক-ও। তিনি ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করতে চান। তাঁর বাবা সন্তোষ পরামাণিক পেশায় নাপিত। গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুল-দাড়ি কাটেন। রোজগার খুবই সামান্য। তিনি বলেন, “বাড়ির বাইরে না বের হলে রোজগার নেই। সামান্য জমি রয়েছে। সোমার মামারবাড়ি আর স্কুলের সাহায্য পেয়েছি বলেই ওকে এই পর্যন্ত পড়াতে পেরেছি। এ বার কী হবে, বুঝতে পারছি না।” নপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাম্যবিপ্লব মাহাতো বলেন, “সোমাকে স্কুলের ছাত্রাবাসে রেখে পড়াশোনার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সে ভাল ফল করে স্কুলের মর্যাদা রেখেছে।”
|
প্রতিবেদক: সমীর দত্ত ও প্রশান্ত পাল। |