স্বামীর মৃত্যুর পরে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। আশ্রয় নিয়েছিলেন বাঁকুড়ায় নিজের মেয়ের কাছে। নিজের অসহায় অবস্থার কথা জানিয়ে সাহায্যের আবেদনও করেছিলেন প্রশাসনের কাছে। সোমবার প্রশাসনের হস্তক্ষেপেই ফের বাড়ি ফিরলেন এক বৃদ্ধা।
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিমলা শীলের স্বামী ভোলানাথ শীলের মৃত্যু হয় ২০১১ সালের এপ্রিলে। মহকুমাশাসক (পুরুলিয়া সদর) সুদীপ্ত ভট্টাচার্য জানান, স্বামী-বিয়োগের পরে বাড়িতে থাকা ওই বৃদ্ধার পক্ষে মুশকিল হয়ে উঠেছিল। মাস সাতেক আগে তিনি বাড়ি ছাড়েন। আশি ছুঁই ছুঁই বিমলা দেবী বাঁকুড়ার মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে দাবি করেছেন, সম্পত্তির জন্য অত্যাচার হওয়ায় তিনি বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের সুরক্ষা আধিকারিক (প্রোটেকশন অফিসার) সুমা ঘোষ জানিয়েছেন, বিমলা দেবীর তিন সন্তান। বড় ছেলে অরুণ শীল প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের কর্মী। তাঁর স্ত্রী ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মী। মেজো ছেলে তরুণ শীল মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁর স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। ছোট জন বরুণ শীল আসবাবপত্র তৈরির কাজ করেন। প্রশাসনের কাছে বিমলা দেবীর অভিযোগ, মূলত বড় ছেলে-বৌমা তাঁকে ‘নির্যাতন’ করতেন। তবে ছোট ছেলে-বৌমাও ‘নির্যাতনের’ প্রতিবাদ করেননি। |
মহকুমাশাসক বলেন, “ওই বৃদ্ধা অত্যাচার সইতে না পেরে মানসিক ভারসাম্যহীন মেজো ছেলের একমাত্র পুত্র, এগারো বছরের নাতিকে নিয়েই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। পরে বাঁকুড়ার মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন করেন। তিনি আমার কাছে বিষয়টি পাঠিয়ে দেন। আমরা ওঁর ছেলে-বৌমাদের বুঝিয়েছি। মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ‘মেন্টেন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অফ পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট’, ২০০৭ অনুযায়ী কী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, তা-ও ছেলে-বৌমাদের বোঝানো হয়।” এর পরেই সোমবার বৃদ্ধাকে নিয়ে দুই প্রশাসনিক আধিকারিক নামোপাড়ায় তাঁর বাড়িতে যান।
মহকুমাশাসক আরও বলেন, “নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বড় ছেলে প্রতি সপ্তাহে মাকে ৩০০ এবং ছোট ছেলে ১০০ টাকা করে দেবেন। পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে তাঁরা একবার করে বিমলা দেবীকে এখানে হাজির করবেন। আমরা তাঁর মুখ থেকে শুনব ওই বাড়িতে থাকতে তাঁর কোনও অসুবিধে হচ্ছে কি না। তবে বৃদ্ধা যে ঘরে থাকতেন, সেটি বর্তমানে বাসযোগ্য নেই। তিন দিনের মধ্যে ঘরটিকে ঠিক করে দেওয়ার জন্য বড় ছেলেকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পুরসভা থেকে ওই বৃদ্ধার বার্ধক্য ভাতা চালু করা হবে। তবে ঘর তৈরি না থাকায় এ দিন উনি মেয়ের সঙ্গে বাঁকুড়াতেই ফিরে গিয়েছেন।”
অনেক দিন পরে নিজের বাড়িতে পা দিয়ে কাঁদছিলেন বিমলাদেবী। কারও সঙ্গে খুব একটা কথা বলেননি। শুধু বললেন, “স্বামীর মৃত্যুর পরে বাড়িতে আমার উপরে যে রকম অত্যাচার চলছিল, তাতে আর বাড়িতে থাকা সম্ভব ছিল না।” বড় ছেলে অরুণবাবু অবশ্য বলেন, “অত্যাচারের অভিযোগ ঠিক নয়। মা নিজেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আর ফেরেননি। এখন প্রশাসন যা বলবে তাই করব।” |