এক নয়, একজোড়া গোল। রবেনদের উড়িয়ে, মৃত্যু গ্রুপের বাধা-বিপত্তি টপকে যা পর্তুগালকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলে দিল। আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো স্বপ্নের গোল দু’টো উৎসর্গ করলেন কাকে?
আর এক ক্রিশ্চিয়ানোকে!
এই ক্রিশ্চিয়ানোর বয়স অবশ্য দুই। পরিচয়— পর্তুগিজ মহাতারকার ছেলে। নিজের নামেই যার নাম রেখেছেন রোনাল্ডো। ‘জুনিয়র’ ক্রিশ্চিয়ানোর মা কে, তা এখনও জানা নেই। আচমকাই এক দিন একটি বাচ্চাকে ফুটবল বিশ্বের সামনে হাজির করে রোনাল্ডো জানান, এই তাঁর ছেলে। দু’বছরের ক্রিশ্চিয়ানোর মাতৃপরিচয় অজ্ঞাত থাকতে পারে, কিন্তু আদর-যত্নের কোনও অভাব নেই। রবিবারই ছিল ছেলে ক্রিশ্চিয়ানোর দু’বছরের জন্মদিন। সে দিনই কি না বাবা ক্রিশ্চিয়ানোর দু-দু’টো গোল। ডাচদের বিরুদ্ধে দেশের জার্সির তলায় আরও একটা জার্সি পরেছিলেন রোনাল্ডো। যেখানে লেখা ছিল: জুনিয়র। গোলের পর যা তুলে ধরেন রোনাল্ডো। এবং ‘সিনিয়র’ রোনাল্ডোর উচ্ছ্বাস এতটাই যে বলে দিচ্ছেন, “আজ আমি প্রচণ্ড খুশি। গোল করেছি, টিম জিতেছে, তার উপর আবার আজই আমার ছেলের জন্মদিন। দু’টো গোলই ছেলেকে উৎসর্গ করলাম।”
|
রবিবার পর্যন্ত তুমুল সমালোচনা চলছিল রোনাল্ডোকে নিয়ে। অভিযোগ উঠছিল, রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে তাঁর যা ফর্ম থাকে, তার ছিটেফোঁটাও দেশের জার্সিতে দেখা যাচ্ছে না। সঙ্গে আবার যোগ হয়েছিল মেসি-র নাম তুলে বিপক্ষ সমর্থকদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। রবিবারের রাত এক ঝটকায় সব বদলে দিল। প্রথমে গোল করে ডাচদের এগিয়ে যাওয়া, ফান ডার ভার্টের শিল্প, সব ঢাকা পড়ল ‘সি আর সেভেনে’র দুর্ধর্ষ স্কিলে। নিজে দু’টো গোল করলেন। গোটা চারেক গোলের সুযোগ প্লেটে করে সাজিয়ে দিলেন সতীর্থদের জন্য। কপালে থাকলে হ্যাটট্রিকও হয়ে যেত।
কিন্তু তবু রোনাল্ডোর মুখে আমি নয়, আমরা। তিনি নন, গোটা টিম। “গোটা টিমটাই তো চোখ ধাঁধানো ফুটবল খেলেছে। আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার যোগ্য ছিলাম। কারণ আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যে পরের পর্বে যাওয়া সম্ভব। পর্তুগালের প্রত্যেক ফুটবলারকে এ জন্য অভিনন্দন জানানো উচিত,” বলেছেন রোনাল্ডো।
ইদানীং রোনাল্ডোকে নিয়ে তীব্র খোঁচাখুঁচির জন্য মিডিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা বলা বন্ধ করেছেন পর্তুগিজ ফুটবলাররা। ব্যতিক্রম শুধু রোনাল্ডো নিজে এবং কোচ পাওলো বেন্তো। কিন্তু পর্তুগালের এই সাফল্যের কারণ হিসেবে ব্যক্তি নয়, বেন্তো তুলে আনছেন সমষ্টিকে। রোনাল্ডোর আগুনে ফর্ম নিয়ে তাঁর মুখ থেকে একটা শব্দও বার করা যায়নি। বরং বেন্তো বলেছেন, “টিম হিসেবে আমরা যা খেলেছি, তাতে আমি অসম্ভব তৃপ্ত। আমি বরাবরই বলছিলাম যে, একটা নির্দিষ্ট স্টাইল মেনে আমার খেলার চেষ্টা করছি। আমি খুশি যে ছেলেরা সেটা রপ্ত করতে পেরেছে। ডাচদের বিরুদ্ধেই এখনও পর্যন্ত সেরা ম্যাচটা খেললাম আমরা।”
বৃহস্পতিবার শেষ চারের যুদ্ধে চেকদের বিরুদ্ধে মোটেই নিজেদের ফেভারিট হিসেবে ধরছেন না পর্তুগাল কোচ। উল্টে বলে রাখছেন, “আমরা এখনও পর্যন্ত যা খেলেছি, সেটা যদি খেলতে পারি সেমিফাইনালে যাওয়ার একটা সুযোগ আসতে পারে।’’ ‘সি আর সেভেন’-এর গলাতেও কোথাও যেন সতর্কতার ছোঁয়া। “ইউরো যখন শুরু হয়, তখন আমাদের টার্গেট ছিল কী ভাবে প্রথম রাউন্ড টপকাব। সেটা হয়ছে। এখন সব কিছুই সম্ভব,” বলেছেন রোনাল্ডো। সঙ্গে একটু বোধহয় টেনশনও লুকিয়ে আছে। নইলে আর বলবেন কেন, “মনে রাখা ভাল চেকদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠিন একটা ম্যাচ আমরা খেলতে যাচ্ছি। ম্যাচ কিন্তু পঞ্চাশ-পঞ্চাশ।”
রোনাল্ডোর রিংটোন বোঝা যাচ্ছে? নিজের ফর্ম, গোল, শেষ আটের রাজপথ— সব অতীত। সি আর সেভেন শুধু ভবিষ্যৎ দেখছেন। যার নাম সেমিফাইনাল।
|