|
|
|
|
শহরে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শিকেয়
বাড়ছে বাইকের সংখ্যা, দুর্ঘটনাও |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
বাড়ছে বসতি। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। অথচ মেদিনীপুর শহর ও শহরতলির গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলির সম্প্রসারণ হচ্ছে না। পরিণাম, হামেশাই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। পথচারীর মৃত্যু হচ্ছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর হয়েই চলে গিয়েছে ৬ ও ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এই দুই সড়কের কয়েকটি এলাকা যেন ‘মৃত্যু-ফাঁদ’। ঠিক কী হারে বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা? জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ১৯৪৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত জেলায় বাস, লরি, মোটর সাইকেল প্রভৃতি মিলিয়ে মোট ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৩৪০টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে (মনে রাখা প্রয়োজন ২০০২-এর ১ জানুয়ারি মেদিনীপুর ভাগ হয়)। অন্য দিকে, শুধু ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩৯ হাজার ১১৫টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। সবথেকে বেশি বেড়েছে মোটর সাইকেলের সংখ্যা। জেলায় এখন বছরে প্রায় ৩০ হাজার মোটর সাইকেল বিক্রি হচ্ছে। শহর ও শহরতলির গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো সম্প্রসারণ না-হলে যে অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হবে, তা মানছে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের একাংশও। তাই নতুন করে ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যে কারণে বুধবারই মেদিনীপুর কালেক্টরেটে আইজি, ডিআইজি-দের উপস্থিতিতে উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “দুর্ঘটনাপ্রবণ কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ করা হবে।” |
|
চলাফেরাই দায়। মেদিনীপুর স্কুলবাজারে। ছবি: কিংশুক আইচ। |
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থা এখনও সে ভাবে গড়ে ওঠেনি বলেই অভিযোগ। খড়্গপুর শহরের চেহারা এখন পাল্টেছে। মূলত রেলকে কেন্দ্র করে এ শহরের গুরুত্ব। এখন এখানে নতুন বসতিও গড়ে উঠছে। তৈরি হচ্ছে একের পর এক বহুতল। শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থা না-বদলানোর ফলে প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় যানজট দেখা দেয়। দুর্ভোগে পড়েন পথচলতি সাধারণ মানুষ। রেলশহরের ইন্দা, পুরাতন বাজার, কৌশল্যা, ঝাপেটাপুর, খড়িদা, গিরি ময়দান, পুরী-গেট, প্রেমবাজার প্রভৃতি এলাকা অধিকাংশ সময়েই ব্যস্ত থাকে। ট্রমা-সেন্টারের জন্য বারবেটিয়া থেকে পুরী-গেট পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু, এই রাস্তার একাংশও ‘দখল’ হয়ে গিয়েছে। চৌরঙ্গি থেকে কলেজ মোড়, ইন্দা হয়ে লোকাল থানা পর্যন্ত রাস্তাটি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন শহরবাসী। আগে এক বার এ নিয়ে পরিকল্পনাও হয়। তবে কাজ আর এগোয়নি। একই অবস্থা মেদিনীপুরে। পরিস্থিতি দেখে কয়েক বছর আগে শহরের কেরানিতলা থেকে জজকোর্ট পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণ হয়েছিল। এখন রাস্তার দু’পাশে ফের অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে। ফলে প্রায়ই এখানে যানজটের সৃষ্টি হয়। শহরের বটতলাচক থেকে স্কুলবাজার হয়ে জগন্নাথমন্দির-চক পর্যন্ত রাস্তাটিও গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রসারণের কথা ভেবে এক সময়ে রাস্তাটি মাপজোকও করা হয়। কিন্তু, এখন সেই পরিকল্পনাও শিকেয় উঠেছে। এলআইসি মোড়, রাজাবাজার, সিপাইবাজার, স্কুলবাজার, স্টেশন রোড, কেরানিতলা এলাকা অধিকাংশ সময়েই ব্যস্ত থাকে। জানা গিয়েছে, বছরে যে সংখ্যক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়, তার একটা বড় অংশই শহর ও শহরতলিতে চলাচল করে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ১৯৪৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত জেলায় সব মিলিয়ে যে ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৩৪০টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে, তার মধ্যে ২ লক্ষ ১০ হাজার ৩৩৮টিই মোটর সাইকেল। বাস রয়েছে ১ হাজার ৫১৩টি। লরি রয়েছে ৯ হাজার ৩৩৩টি। মোপেড রয়েছে ৪ হাজার ৬৪৯টি। স্কুটার রয়েছে ২ হাজার ৫৫৫টি। অবশ্য এর একাংশ এখন অচল হয়ে গিয়েছে। তবে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক বছরে মোটর সাইকেল বিক্রির সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কেমন? জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৫০৯টি মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৬১৭টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়। পরের এক বছরে, অর্থাৎ ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৯৮০টি মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার ৭৬টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়। অন্য দিকে, ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৫৯৬টি মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সব মিলিয়ে ৩৯ হাজার ১১৫টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়। |
বছর |
বাইকের রেজিস্ট্রেশন |
২০০৯ - ১০ |
২৩,৫০৯ |
২০১০ - ১১ |
২৮,৯৮০ |
২০১১ - ১২ |
৩০, ৫৯৬ |
|
|
পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, প্রতি বছরই রাস্তায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটর সাইকেলের সংখ্যা। জেলার ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল ও তার আশপাশ এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তাও ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ’ বলেই চিহ্নিত। প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। আবার মেদিনীপুর- খড়্গপুরের মতো সমস্যা রয়েছে এই দুই শহরেও। জেলা পুলিশের অবশ্য দাবি, মেদিনীপুর শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হচ্ছে। অন্য শহরের জন্যও কিছু পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, শহরের মধ্যে গাড়ির গতিবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ না-রাখা গেলে অদূর ভবিষ্যতে দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও বাড়বে। পরিস্থিতি আরও ‘উদ্বেগজনক’ হবে। কারণ, ছোট-গাড়ির মধ্যে শুধু মোটর সাইকেল নয়, মোপেড-স্কুটারের সংখ্যাও বাড়ছে। ২০০৯-’১০ সালে ১ হাজার ১৮৫টি মোপেডের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। অর্থাৎ, এই সংখ্যক গাড়ি রাস্তায় চলাচল করে। ওই বছর ৭৪৩টি স্কুটারেরও রেজিস্ট্রেশন হয়। ২০১০- ’১১ সালে ১ হাজার ৫৮৭টি মোপেডের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এই বছর ৪৪৯টি স্কুটারেরও রেজিস্টেশন হয়। অন্য দিকে, ’১১- ’১২ সালে ১ হাজার ৪৩৩টি মোপেডের রেজিস্ট্রেশন হয়। আর এই সময়ের মধ্যে ১ হাজার ৩২৬টি স্কুটারের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। জেলা পরিবহণ আধিকারিক বিপুল বিশ্বাস বলেন, “গাড়ির সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। বিশেষ করে, মোটর সাইকেলের সংখ্যা।”
আর এই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা এড়াতে যে ‘বিশেষ’ কিছু পদক্ষেপ জরুরি, তা মানছে জেলা পুলিশও। ৬ ও ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেশ কয়েকটি এলাকাকে ইতিমধ্যে ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছে খড়্গপুর লোকাল, শালবনি, ডেবরা, নারায়ণগড়, বেলদা থানার কয়েকটি এলাকা। জেলা পুলিশ সুপারের আশ্বাস, “এ ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ করা হবে। দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানোর জন্যেই এই পদক্ষেপ। এ জন্য কিছু পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|