|
|
|
|
খড়্গপুরে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব |
দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে গরহাজির তৃণমূলের ৮ জন কাউন্সিলর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
‘উৎসবের’ মধ্যেও তাল কাটল। দলীয় কর্মসূচিতে হাজির হলেন না দলেরই একাংশ কাউন্সিলর। পুরবোর্ডের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সোমবার খড়্গপুর পুরসভার সামনে এক উৎসবের আয়োজন করেছিল শহর যুব-তৃণমূল। দলের ১৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে সেখানে হাজির হয়েছিলেন পুরপ্রধান জহরলাল পাল-সহ মাত্র ৭ জন কাউন্সিলর। গরহাজির ছিলেন উপ-পুরপ্রধান তুষার চৌধুরী-সহ বাকি ৮ কাউন্সিলর। বর্ষপূর্তি ‘উৎসবে’ দলীয় কাউন্সিলরদের এই অনুপস্থিতি ঘিরে দলেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রকাশ্যে এসে পড়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের বিষয়টি। কেন এলেন না দলীয় কর্মসূচিতে? উপ-পুরপ্রধান বলেন, “আমি খড়্গপুরেই ছিলাম না। ছেলের ভর্তির ব্যাপারে কলকাতায় এসেছিলাম। তাই যেতে পারিনি।” এই পরিস্থিতিতে দলের মধ্যে ‘মতানৈক্য’ রয়েছে বলে মানতে নারাজ পুরপ্রধান। তাঁর বক্তব্য, “জরুরি কাজ ছিল বলেই দলের একাংশ কাউন্সিলর আসতে পারেননি।” ২০১০ সালের ১৮ জুন খড়্গপুরে পুরবোর্ড গঠন করেছিল তৃণমূল। বোর্ড গঠনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সোমবার খড়্গপুর পুরসভার সামনে এক সভার আয়োজন করে শহর যুব তৃণমূল। এই কর্মসূচীর সমর্থনে শহর জুড়ে পোস্টারিং করা হয়েছিল। পাল্টা হিসেবে এদিন সকালে বোগদায় এক সভার আয়োজন করে শহর কংগ্রেস। সভা চলাকালীন পথচলতি সাধারন মানুষের মধ্যে লিফলেট বিলি করা হয়। যুযুধান দু’পক্ষের কর্মসূচি ঘিরে এ দিন দিনভর সরগরম ছিল রেলশহর। খড়্গপুর পুরসভায় ৩৫টি আসন রয়েছে। ২০১০ সালের পুরসভা নির্বাচনে এরমধ্যে ১৫ টি দখল করে তৃণমূল। কংগ্রেস ১২ টি। সিপিএম ৩ টি। সিপিআই ৩ টি। বিজেপি ১ টি। বাকি ১ টি আসনে জেতেন নির্দল প্রার্থী। পরে অবশ্য এই সমীকরণ পাল্টায়। গত বছর দুই সিপিএম কাউন্সিলর দল ছেড়ে কংগ্রেস যোগ দেয়। ফলে এখন কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ১৪। এই পরিস্থিতিতে অনাস্থা এলে তৃণমূলের পক্ষে বোর্ড ধরে রাখা সহজ হবে না বলেই মনে করছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। যুব তৃণমূলের কর্মসূচিতে একাংশ দলীয় কাউন্সিলরের অনুপস্থিতি আবার এই আশঙ্কা উসকে দিয়েছে। কারন, অনাস্থা এলে ‘ক্রস’ ভোটের আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। |
|
মঞ্চে উপস্থিত পুরপ্রধান-সহ ৭ জন কাউন্সিলর। —নিজস্ব চিত্র। |
তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে চেয়ে ইতিমধ্যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছেন রেলশহরের কংগ্রেস কাউন্সিলররা। অবস্থা বুঝে পুরবোর্ডের উপর ‘চাপ’ বাড়তে শুরু করেছে সিপিএম-সিপিআইও। বিরোধীদের অভিযোগ, পুরসভার কাজের ক্ষেত্রে কোনও স্বচ্ছতা নেই। টেন্ডার ছাড়াই একের পর এক কাজ হচ্ছে। শহরবাসীর উপর নানা ভাবে ‘বোঝা’ চাপানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ফর্মের দাম বাড়ানো হয়েছে। পুরকর বাড়ানো হচ্ছে। একই অভিযোগ কংগ্রেসের। সোমবার সকালে বোগদার সভা থেকেও পুরসভার কাজকর্মের কড়া সমালোচনা করেন প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পান্ডে, শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস প্রমুখ। প্রাক্তন পুরপ্রধান বলেন, “পুরসভার এখন কাজ বিক্রি হচ্ছে! টেন্ডারের বালাই নেই। বোর্ড মিটিংয়ের অনুমতি ছাড়াই প্রায় ৩ কোটি টাকার জিনিসপত্র কেনা হয়েছে।” তাঁর দাবি, “তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার কাজকর্মে শহরবাসী অতিষ্ঠ।” শহর কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “শুরুতে আমরা পুরবোর্ডকে সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু, পরিস্থিতি দেখে গত বছর সমর্থন প্রত্যাহার করেছি। এখন প্রতিবাদ করার সময় এসেছে। আমরাই খড়্গপুর শহরকে আবার বাঁচিয়ে এবং সাজিয়ে তুলতে পারি।”
পাল্টা আক্রমনের রাস্তায় নেমেছে তৃণমূলও। এদিন বিকেলে বর্ষপূর্তির সভায় পুরপ্রধান বলেন,“ ২ বছরের কাজ দেখে ওদের ঈর্ষা হচ্ছে। ব্যক্তিস্বার্থে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে। আমরা নয়, দুর্নীতির সঙ্গে ওরাই যুক্ত ছিল। শহরের মানুষ তা জানেন। এই সময়ের মধ্যে ১০০ কোটি টাকারও বেশি প্রকল্প এসেছে।” তাঁর কথায়,“ কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা- কাউন্সিলর নিজের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য পুরবোর্ড ভাঙার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। কাজের ক্ষেত্রে প্রতি পদে- পদে বাধা দিচ্ছেন। আমরা মনে করি, এই শহরকে উন্নত করতে গেলে উন্নয়নের কাজে আপনাদের (শহরবাসী) সরাসরি যুক্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবেই আপনারা প্রকৃত উন্নয়ন দেখতে পাবেন।” এদিন একটি প্রচারপত্রও বিলি করেছেন পুরপ্রধান। সেখানেও এই আবেদন রাখা হয়েছে। কিন্তু, অনাস্থা এলে কী হবে? পুরপ্রধান বলেন, “অনাস্থা আসছে-আসছে বলেই তো ২ বছর পেরিয়ে গেল। আরও ৩ বছর পেরিয়ে যাবে। অস্থিরতা তৈরির চেষ্টাকে মানুষ ভাল চোখে দেখছে না।” তাঁর কথায়, “আমাদের চেয়ারের প্রতি মোহ নেই। আমরা কাজের জন্য এসেছি। একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও ওদের (কংগ্রেসের) মোহ কাটেনি! কেন কাটেনি? শহরবাসী সবই জানেন।”
পুরপ্রধানের দাবি, “কংগ্রেসের একাংশ কাউন্সিলরও এই অস্থিরতা তৈরির চেষ্টাকে ভাল ভাবে দেখছেন না। তাঁদের সমর্থন আমাদের দিকেই আছে।” যা শুনে প্রাক্তন পুরপ্রধানের বক্তব্য,“কাদের দলে মতানৈক্য রয়েছে, তা দেখা গেল। দলের কর্মসূচিতে দলীয় কাউন্সিলররাই এলেন না!” খড়্গপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। এক দিকে রয়েছেন পুরপ্রধান জহরলাল পালের অনুগামীরা। অন্য দিকে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর অনুগামীরা। যদিও জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করেন না। সোমবারের কর্মসূচিতে হাজির থাকার কথা ছিল জেলা যুব সভাপতিরও। কিন্তু, তিনি গরহাজির ছিলেন। কেন? দেবাশিসবাবু বলেন, “দলীয় কাজে কলকাতায় এসেছিলাম। তাই যেতে পারিনি।” অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, দাবি-পাল্টা দাবি রয়েছে। কিন্তু সব ছাপিয়ে উঠে আসছে অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গটি। |
|
|
|
|
|