নিজস্ব সংবাদদাতা • গুড়াপ |
দলীয় কার্যালয় থেকে সাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হল এক কংগ্রেস কর্মীকে। রবিবার রাতে হুগলির গুড়াপের ভাসতারা বাসুদেবপুর গ্রামের ঘটনা। নিহতের নাম রবীন ঘোষ (৪৭)। তাঁর স্ত্রী জানিয়েছেন, খুনের পিছনে কোনও রাজনীতি আছে বলে তাঁর জানা নেই। নিহতের পরিবারের তরফে থানায় খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও তা কারও নামে করা হয়নি। তবে, জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব ঘটনার পিছনে তৃণমূলকে দায়ী করেছেন। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশেষ বিশ্বাস বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খুনের মামলা শুরু করেছে। প্রাথমিক কিছু সূত্র মিলেছে। পুলিশ সব দিক খোলা রেখে তদন্ত করছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় প্রতিদিন রাতেই রবীনবাবু ওই গ্রামেই দলের কার্যালয়ে যেতেন। রবিবারে রাত ১০টা নাগাদ সেখান থেকে ফেরার সময়ে খেজুরদহ-মিল্কি অঞ্চলের কাছে তাঁর পথ আটকায় কয়েক জন দুষ্কৃতী। তার পরে তাঁকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে দেহটি রাস্তার পাশের ঝোপে ফেলে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। |
এ দিকে, রবীনবাবু না ফেরায় চিন্তিত পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজ শুরু করেন। রাস্তার পাশে ফাঁকা মাঠের মধ্যে তাঁর সাইকেল পড়ে থাকতে দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। কিছু ক্ষণ খোঁজার পর ঝোপের মধ্যে তাঁরা মৃতদেহটি দেখতে পান। রবীনবাবুর খুন হওয়ার খবর সকালে ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামে উত্তেজনা দেখা দেয়। গ্রামবাসীরা দেহ সরাতে পুলিশকে বাধা দেন। তাঁরা পুলিশ-কুকুর এনে তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অশেষ বিশ্বাস এবং ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) দেবশ্রী সান্যাল। পুলিশকর্তারা গ্রামবাসীদের দাবি মেনে ব্যারাকপুর থেকে পুলিশ-কুকুর আনলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুলিশ-কুকুরটি ঘটনাস্থলের আশপাশে ঘোরাঘুরি করে। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য চুঁচুড়া
|
নিহত রবীন ঘোষ। |
ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায়। পরে ওই হাসপাতালে আসেন কংগ্রেসের রাজ্য নেতা আব্দুল মান্নান এবং দলের জেলা সভাপতি দিলীপ নাথ।
নিহতের ৫ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। তাঁর স্ত্রী পুতুলদেবী বলেন, “ওঁর কোনও শত্রু ছিল না। সকলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল। কারা ওঁকে কেন খুন করল বুঝতে পারছি না। এর পিছনে রাজনীতি আছে বলে আমার জানা নেই। অপরাধীদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।” নিহতের দাদা নিমাইবাবু গুড়াপ থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, “ভাইয়ের কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল না। কারা ওকে এ ভাবে মারল অবিলম্বে তাদের খুঁজে বের করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করছি।”
তবে, কংগ্রেস খুনের ঘটনার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করেছেন। দলের জেলা সভাপতি বলেন, “আমাদের দলের কর্মী রবীন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। সে জন্যই তাঁকে খুন হতে হল। সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া লোকজনই এই ঘটনায় যুক্ত।” জেলা তৃণমূলের কার্যকারী সভাপতি দিলীপ যাদব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন,“কোনও রকম খোঁজ না নিয়ে কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে যুক্তিহীন অভিযোগ করতেই পারেন। আমরা খুনের যথাযথ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি পুলিশের কাছে।”
|