সম্পাদকীয় ২...
লাভজনক শিক্ষা
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সম্প্রতি উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিনিয়োগকে আবারও আহ্বান করিয়াছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়াছেন যে, রাজ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আইন শীঘ্রই প্রণয়ন করা হইবে। এই উদ্যোগ সময়োপযোগী, সন্দেহ নাই। রাজস্থান, গুজারাত, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা-সহ ভারতে অন্তত ১৫টি রাজ্যে ইতিমধ্যেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হইয়াছে। গত ছয় বৎসরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা পাঁচগুণ বাড়িয়া ২০ হইতে প্রায় ১০০টিতে পৌঁছাইয়াছে। ভারতে ৭ শতাংশ তরুণ-তরুণী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িতে যায়। এই হার চলিতে থাকিলে প্রতি বৎসর ৯ লক্ষ বাড়তি ছাত্র ভর্তি হইবে, অন্তত নয় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর ভারতে উচ্চশিক্ষাকে যদি চিনের হারে বাড়িতে হয়, অর্থাৎ বৎসরে যদি ১৪ শতাংশ ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষায় নথিভূক্ত হয়, তাহা হইলে বৎসরে ২৭ লক্ষ বাড়তি ছাত্র আসিবে, বৎসরে ২৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই বিপুল পরিমাণ টাকা কেন্দ্র কিংবা রাজ্য, কোনও সরকারের পক্ষেই বিনিয়োগ সহজ হইবে না। বেসরকারি পুঁজির শরণ না লইলে আর্থিক উন্নতি ও সামাজিক সমৃদ্ধি, উভয় দিকেই দেশের ক্ষতি হইবার সম্ভাবনা প্রবল। চিন এই পথেই সাফল্য পাইয়াছে। ২০০০ সাল পর্যন্ত ভারতে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীর নথিভুক্তি চিনের সহিত সমান ছিল। ২০০০ সালে চিন বেসরকারি বিনিয়োগের দরজা খুলিয়া দেয়। পরবর্তী এক দশকে চিনে ছাত্রদের সংখ্যাবৃ্দ্ধির হার ভারতের দ্বিগুণ হইয়া যায়। বর্তমানে চিনের ১৫ শতাংশ তরুণতরুণী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাইতেছে।
পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার আমলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সূচনা প্রসঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হইয়াছিল, কিন্তু কাজ বিশেষ অগ্রসর হয় নাই। এখন তৃণমূল সরকার সে বিষয়ে উদ্যোগী হইয়াছে। শিক্ষা দফতরের মনোভাব বিষয়ে যে ইঙ্গিত মিলিয়াছে, তাহাতে স্পষ্ট যে জমি অধিগ্রহণ, উচ্ছেদ এবং জমির যথাযথ ব্যবহার বিষয়ে সরকারি নীতি পালন, এবং শিক্ষার মান, আয়-ব্যয়ের হিসাব ও পরীক্ষা-ফলপ্রকাশ প্রভৃতি বিষয়ে নিয়মানুবর্তিতার বিষয়গুলিতে সরকার কঠিন হইবে। এই বিষয়গুলিতে সাবধান হইবার প্রয়োজন রহিয়াছে, এইগুলি নিয়ন্ত্রণ করিবার কাজ সরকারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়িবে। কিন্তু অধিক নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছায় হিতে বিপরীত হইবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিজস্ব শিক্ষার আদর্শ মানিতে দেওয়া প্রয়োজন। তাহাদের শিক্ষাক্রম ও শিক্ষাপদ্ধতি বিষয়ে সরকারি মত চাপাইবার প্রয়োজন নাই। চিরাচরিত পদ্ধতির সহিত ডিসট্যান্স এডুকেশন, অনলাইন এডুকেশন, মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, পেশাগত প্রশিক্ষণের স্বল্পমেয়াদি পাঠক্রম, এই শিক্ষাপদ্ধতিগুলি ইচ্ছানুসারে গ্রহণের স্বাধীনতা দিতে হইবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে। নূতন নূতন প্রযুক্তির ব্যবহারে তাহাদের উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। তৎসহ আরও দুইটি বিষয় চিন্তা করিতে হইবে। এক, একটি নূতন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হইবার আইন পাশ করিতে প্রায় পাঁচ বৎসর সময় লাগে। তৎপূর্বেই প্রায় ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করিতে হয় বেসরকারি লগ্নিকারীদের। স্বীকৃতির প্রক্রিয়াকে সরল করিয়া সময় কমাইলে প্রারম্ভিক খরচ ও অনিশ্চয়তা কমিবে, বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হইবেন। দুই, অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ন্যাক’ বা ‘এন বি এ’ পরিদর্শন হয় না বলিয়া তাহাদের মান বিষয়ে ছাত্রদের ধারণা নাই। ইহারও পরিবর্তন প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় ছাত্রদের অধিকারের সুরক্ষা এবং পঠনপাঠনের উচ্চমান, এই দুটিই নিশ্চিত করিতে হইবে বেসরকারি ক্ষেত্রে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.