সম্পাদকীয় ১...
তালিবানের শংসাপত্র
তালিবান নেতৃত্ব ভারতের প্রশংসা করিয়া বিবৃতি দিতেছে, ইহা আপাতদৃষ্টিতে অবাস্তব ঘটনা বলিয়া গণ্য হইতে পারে। কিন্তু বাস্তবে যখন তাহা ঘটে, তখন তাহার কার্যকারণ খতাইয়া দেখা আবশ্যক হইয়া পড়ে। তালিবান জঙ্গিরা আফগানিস্তানে ভারতীয়দের উপর ক্রমাগত নির্মম হামলা চালাইয়াছে। ভারতীয় দূতাবাস আক্রান্ত হইয়াছে, দূতাবাস-কর্মীরা হতাহত হইয়াছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পরিকাঠামো উন্নয়নে নিযুক্ত ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ ও কর্মীরা ফিদাইন হামলায় নিহত হইয়াছেন। আজ তবে তালিবানরা ভারতের বন্দনা গাহিতেছে কেন? কারণ কাবুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শূন্য স্থান পূরণ করিতে নয়াদিল্লি নাকি সম্মত হয় নাই। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লিওন পানেত্তা ভারত সফরে আসিয়া আফগানিস্তানে ভারতকে আরও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণে যে আহ্বান জানান, তালিবানের ধারণা, নয়াদিল্লি তাহা প্রত্যাখ্যান করিয়াছে। প্রশংসার কারণ সেটাই।
আফগানিস্তানে যে তালিবান জেহাদিরা ক্ষমতাসীন হইয়াছিল, ধর্মনিরপেক্ষতার ভারতীয় রাষ্ট্রনীতি তাহাদের পছন্দ হইতে পারে না। কাশ্মীরের মুসলিমদের নয়াদিল্লির আধিপত্য হইতে মুক্ত করার জেহাদি প্রকল্পও তাহাদের আছে। পাক গুপ্তচর সংস্থা আই এস আইয়ের সহিত ঘনিষ্ঠ সংশ্রব রক্ষা করিয়া চলা তালিবান মার্কিন ও ন্যাটো সমরাভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর হইতে দক্ষিণ এশিয়ার রণনীতিতে গণতন্ত্রের প্রধান অন্তরায় হইয়া উঠিয়াছে। আফগান সরকারের আমন্ত্রণে সে-দেশে রেলপথ নির্মাণের মতো উন্নয়ন প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগ ও সহযোগিতাও তালিবান জঙ্গিদের হামলায় ধাক্কা খাইয়াছে। তালিবান নেতৃত্ব এবং তাহার পরামর্শদাতা আই এস আই চাহে না, নয়াদিল্লি কোনও ভাবে কাবুলে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করুক। আজ তাহার ভারত-বন্দনা মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের অনুরোধ না-রাখার কাল্পনিক পরিতৃপ্তিতে। কিন্তু কাবুল সম্পর্কে ভারতীয় নীতি কখনওই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনও দেশের প্রভাবে নির্ধারিত হইবে না। তা ছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৯/১১-র প্রতিক্রিয়ায় আফগানিস্তানে সমরাভিযান চালাইয়া সে দেশে দখলদার বাহিনী ও পুতুল সরকার মোতায়েন করিয়াছে। তাহার সমস্যা মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করিয়াও কাবুলে একটি গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম রাখা। ভারতও নিশ্চয় কাবুলে গণতান্ত্রিক শাসন দেখিতে চায়। কিন্তু সে জন্য স্বতন্ত্র ভাবে কোনও সামরিক প্রচেষ্টা চালানোর প্রশ্ন ওঠে না। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতিতে বিশ্বাসী নয়াদিল্লি আফগানিস্তানের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতায় প্রস্তুত, অন্য কোনও বৃহৎশক্তির হইয়া প্রক্সি দিতে প্রস্তুত নয়। ইহা বরাবরই ভারতের বিদেশনীতির সার কথা। এ জন্য আলাদা করিয়া তালিবানদের নয়াদিল্লির প্রশংসা করার কিছু নাই।
তবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে জেহাদি সন্ত্রাসের জমানা কায়েম হওয়া নিঃসন্দেহে নয়াদিল্লির কাছে উদ্বেগের। বিশেষত সেই জমানা যদি রাজনৈতিক ইসলামের উত্থানের মধ্য দিয়া কায়েম হয় এবং পাকিস্তানের সামরিক মোল্লাতন্ত্র দ্বারা পরিপুষ্ট হইতে থাকে। তালিবান জঙ্গিরা যে আফগানিস্তানের ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করিয়া পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশগুলিতেও ঘাঁটি গাড়িয়াছে এবং ‘পাক তালিবান’ নামক এক জেহাদি ধারাকে পুষ্ট করিতেছে, এই ধারাটি যে প্রথমে কাশ্মীরকে ও পরে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াকে একটি অখণ্ড মৌলবাদী ইসলামি উম্মার পতাকাতলে সমাবেশিত করিতে চায়, ইহা নয়াদিল্লি বিলক্ষণ অবগত। ইহা যাহাতে ঘটিতে না পারে, সে জন্য সক্রিয় তৎপরতাও ভারতের থাকিবে। তখন তালিবান নেতৃত্ব ভারতকে প্রশংসা না করিয়া শাপ-শাপান্ত করিতে পারে। তবে তালিবান কিংবা অন্য কাহারও প্রশংসা পাইবার জন্য ভারত তাহার বিদেশ নীতি নির্ণয় করে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.