রাষ্ট্রপতি পদে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত প্রার্থী এ পি জে আব্দুল কালাম দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোয় প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থনের প্রশ্নে তৃণমূল শিবিরে ভাঙনের সম্ভাবনা দেখা দিল। দলীয় সূত্রের খবর, তৃণমূল সাংসদ এবং বিধায়কদের অনেকেই ভিতরে ভিতরে প্রণববাবুকে সমর্থন করছেন। ভোটে ব্যালটের চূড়ান্ত গোপনীয়তা রক্ষা হবে, তাই নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রার্থী বাছলে ‘ধরা পড়ার’ সম্ভাবনাও থাকবে না। পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত মমতা চেষ্টা চালাচ্ছেন, নিজের শিবিরকে অটুট রাখার।
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, তৃণমূলের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা একই সঙ্গে মমতা ও প্রণববাবুকে শ্রদ্ধা করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগেই তৃণমূল কেন্দ্রের উপর থেকে সমর্থন তুললে অন্য কথা। কিন্তু ইউপিএ-এর মধ্যে থেকে প্রণববাবুর বিরুদ্ধে ভোট দিতে চাইছেন না অনেকেই। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির কথায়, “প্রণববাবুর সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করেছেন এমন অনেক নেতাই তৃণমূলে রয়েছেন। তাঁদের অনেকের সঙ্গেই প্রণববাবুর ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। ফলে তাঁরা অবশ্যই চাইবেন প্রণববাবুকেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে। সে ক্ষেত্রে ‘ক্রস ভোটিং’-এর সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।”
শেষ পর্যন্ত মমতা যদি ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেন? অথবা হুইপ জারি করেন বিরুদ্ধ প্রার্থীকে (যদি আদৌ কেউ দাঁড়ান) ভোট দেওয়ার জন্য? এই প্রসঙ্গে দীপার ব্যাখ্যা, “ভোট যে-হেতু গোপন ব্যালটে হবে, তাই দলীয় নেতৃত্বের হুইপ থাকলেও, কে তা অমান্য করলেন, তা বোঝার উপায় থাকবে না। আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ না নিলে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবিধানিক অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।” প্রণববাবুর নাম ঘোষণা হওয়ার পর প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী তাঁকে অভিনন্দন জানান। বলেছেন, “প্রণববাবু রাজনীতিবিদ ও প্রশাসক হিসাবে দুর্দান্ত। উনি যোগ্য দাবিদার।” একটি আলোচনাচক্রে ‘ক্রস ভোটিং’-এর সম্ভাবনা নিয়ে দীপা তাঁকে প্রশ্ন করলে দীনেশ কোনও উত্তর না দিয়ে শুধু হেসে বলেন “নেত্রী বলেছেন এটা বিবেক ভোট।”
প্রণববাবুর হয়ে যিনি গোড়া থেকে প্রচার পরিকল্পনা চালাচ্ছেন সেই কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সচিব প্রদ্যোৎ গুহ বলেন, “প্রণববাবু সবার আগে মমতার কাছে আবেদন করেন। মমতাকে বোন হিসাবেও সম্বোধন করেন। তাঁর পক্ষ থেকে মমতা শিবিরে বার্তা গিয়েছে, মতপার্থক্যের উপরে উঠে মমতাকে পাশে চাওয়া হচ্ছে।” প্রণব-শিবির থেকে দল নির্বিশেষে সব সাংসদ-বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সার্বিক ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা চলছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, প্রণববাবুর যা রাজনৈতিক উচ্চতা তাতে তাঁকে যাতে প্রতিযোগিতা করতে না হয়, সেটাই সবার কাম্য হওয়া উচিত। |