বাকি সব সামলানো যাবে। কিন্তু সরকারের আপৎকালীন দু’টি শিরঃপীড়ার অবসান ঘটিয়ে তবেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করুন প্রণব মুখোপাধ্যায়। এই অনুরোধ খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের।
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা করার পরই প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই চিঠিতে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ কী? তাঁর নিজের ভূমিকাই বা কী হবে? অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, মন্ত্রিসভা ছেড়ে যাওয়ার আগে প্রণবকে টুজি স্পেকট্রামের নিলাম এবং খাদ্যশস্য মজুত ও বণ্টন সংক্রান্ত দু’টি মন্ত্রিগোষ্ঠীর আপৎকালীন বৈঠক ডাকতে বলেছেন মনমোহন। এই বিষয় দু’টির দ্রুত ফয়সালা করতে চান তিনি। তাই আগামিকাল খাদ্যশস্য মজুত ও বণ্টন সংক্রান্ত বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক ডেকেছেন প্রণববাবু। ২১ জুন বসবে টুজি স্পেকট্রামের নিলাম সংক্রান্ত বৈঠক।
গত আট বছর ধরে ইউপিএ-র বিভিন্ন সঙ্কটে বরাবরই ত্রাতার ভূমিকায় দেখা গিয়েছে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। এখন সেই ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’-কেই রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে এগিয়ে দেওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই মনমোহন সিংহের মাথায় গুরুভার। টুজি স্পেকট্রাম বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেকেই সরকারের মধ্যে কার্যত অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। দুর্নীতির ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে শিল্পমহল এবং বিরোধী শিবির থেকে। সুপ্রিম কোর্ট আগের টুজি স্পেকট্রাম বণ্টন প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছে। নতুন করে সেই স্পেকট্রাম নিলাম করা হবে। এই নিলামে স্পেকট্রামের ন্যূনতম মূল্য এবং গোটা প্রক্রিয়াটির স্বচ্ছতা বজায় রাখার পদ্ধতি স্থির করার কথা প্রণববাবুর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিগোষ্ঠীর। বিষয়টির স্পর্শকাতরতার দিকটি মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী চাইছেন যে প্রণববাবু থাকতে থাকতেই এর ফয়সালা হোক।
খাদ্যশস্য মজুত করা ও রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে তার বন্টনের বিষয়টিও সরকারের যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ। রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হওয়ায় উদ্বৃত্ত অংশ কী ভাবে ব্যবহার হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। গত বছর চাল-গমের রফতানির দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল। এ বছর উদ্বৃত্ত শস্য কতটা বিদেশে রফতানি করা হবে, কোন রাজ্যকে কতটা দেওয়া হবে বা দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের কাছে কোন ব্যবস্থার মাধ্যমে তা বণ্টন করা হবেএই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা প্রণবের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিগোষ্ঠীর। গোটা বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবে মনমোহন সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও বটে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ২৮ জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তাঁর মনোনয়ন পেশ করবেন প্রণববাবু। ৩০ জুন চেন্নাই থেকে শুরু করবেন তাঁর প্রচারসফর। মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর ইস্তফা দেওয়ার কথা ২৫ জুন। জানা গিয়েছে, কিছু রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তাঁর আসন্ন নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে বসে আলোচনা করতে চান প্রণব। তাই অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরের সময়টাকে কাজে লাগাতে চাইছেন। এই সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণের বিষয়গুলির মধ্যে নিজেকে জড়াতে চাইছেন না তিনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধেই দু’টি বিষয়ে মনোনিবেশ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। |