প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ফের তোপ দাগল অণ্ণা হজারের শিবির। অণ্ণা-ঘনিষ্ঠ অরবিন্দ কেজরিওয়াল আজ দাবি তুলেছেন, প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তাঁর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ রয়েছে অবিলম্বে সেগুলির ফয়সালা করতে হবে। কংগ্রেস শুধু নয়, প্রণববাবুকে সমর্থনের ব্যাপারে দ্বিধায় থাকা সত্ত্বেও বিজেপি-ও আজ এই জাতীয় আক্রমণের কড়া সমালোচনা করে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়েছে।
গত ২৬ মে প্রধানমন্ত্রী-সহ মন্ত্রিসভার ১৩ জন সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে সরব হয় ‘টিম অণ্ণা’। অভিযোগের তদন্তে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন দল গঠন করার জন্যও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানায় তারা। ওই  ১৩ জনের মধ্যে প্রণববাবুর নামও রয়েছে। কেজরিওয়াল আজ বলেন, “প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করা সম্ভব নয়। তাই তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার আগেই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করুক কেন্দ্র।” কংগ্রেস একে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে অণ্ণা শিবিরের কড়া সমালোচনা করেছে। তবে শুধু কংগ্রেস নয়, ‘টিম অণ্ণা’-র বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি-ও। দলের মুখপাত্র মুখতার আব্বাস নকভি অণ্ণাদের সমালোচনা করে বলেছেন, “কাউকে নির্বাচনে দাঁড়াতে গেলে টিম অণ্ণার কাছ থেকে ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র জোগাড় করতে হবে নাকি? এই ধরনের মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক।”
প্রণববাবুর বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ তুলেছেন অণ্ণারা? কেজরিওয়ালদের বক্তব্য, ২০০৭ সালে ঘানাতে চাল রফতানি করার কথা থাকলেও তা ঘানার বদলে তৃতীয় বিশ্বের অন্য একটি দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পিছনে দু’-আড়াই হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এবং সে সময় প্রণববাবু ছিলেন বিদেশমন্ত্রী। ২০০৫-এ প্রণববাবু প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন ফ্রান্সের কাছ থেকে ভারত ১৮ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকার বিনিময়ে স্করপেন সাবমেরিন কেনে। কেজরিওয়ালের দাবি, সেই চুক্তির আড়ালে ৪ শতাংশ কমিশন লেনদেনের অভিযোগ উঠেছিল। প্রণববাবু প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়েও তার তদন্তের নির্দেশ দেননি। কেজরিওয়াল আজ নৌবাহিনীর গোপন তথ্য ‘পেনড্রাইভ’-এর মাধ্যমে পাচার করার মূল অভিযুক্তকে আড়াল করারও অভিযোগ তুলেছেন প্রণববাবুর বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, “রাষ্ট্রপতির নামে কোনও অভিযোগ থাকা সমীচিন নয়। তাই প্রণববাবুর নামে থাকা অভিযোগের দ্রুত ফয়সালা করা হোক।”
‘টিম অণ্ণা’-র এই অভিযোগ রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টায় আজ দিনভর সক্রিয় ছিল কংগ্রেস শিবিরও। দলের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, “প্রণববাবুর নামে এ সব অভিযোগ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।” কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্করপেন কেনাবেচা নিয়ে অনিয়ম রয়েছে এই অভিযোগ তুলে ২০০৬ সালের ১০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। এর পর ২৬ এপ্রিল এ নিয়ে মামলা দায়ের করা হয় দিল্লি হাইকোর্টে। ২০০৭ সালের ২০ ডিসেম্বর সিবিআই তদন্ত শুরু হয়। ওই মামলায় সিবিআই চার্জশিট দাখিল করেছে। কিন্তু এখনও শুনানি শুরু হয়নি। মণীশ বলেন, “কোনও কিছু প্রমাণিত হওয়ার আগেই প্রণববাবুর নাম টেনে আনা আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত পদক্ষেপ। প্রণববাবুর পক্ষে যে সর্বসম্মতি গড়ে উঠছে তা দেখেই কিছু শিবির থেকে পরিকল্পনা করে এই অভিযোগ আনা হচ্ছে। তা ছাড়া দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিযোগ তোলাটা এখন কিছু লোকের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।” |