দলে বড় প্রশ্ন, মমতা কী করবেন
সাংমাকে সমর্থনের দিকেই ঝুঁকছে বিজেপি
কালাম সরে দাঁড়িয়েছেন। এখন সাংমাকে সমর্থন করারই সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি।
যদিও আজ রাতে নিতিন গডকড়ীর বাড়িতে দলের কোর কমিটির বৈঠকে গৃহীত এই সিদ্ধান্ত এখনও সরকারি ভাবে ঘোষণা করেনি বিজেপি। আগামিকাল এনডিএ-র বৈঠকে সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেওয়া হতে পারে। তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত কী করেন, তার দিকেও নজর রাখছে দেশের প্রধান বিরোধী দল। সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে মমতার সঙ্গে যোগাযোগও করবে তারা।
রবিবার রাত থেকে কালামকে বোঝানো এবং তার সঙ্গে তাঁর সমর্থনে সংখ্যা সংগ্রহের কাজে লেগে ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু সোমবার দুপুরের পরে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি যখন জানিয়ে দিলেন, তিনি এ বার আর দৌড়ে নামছেন না, তখন রীতিমতো শাঁখের করাতের মধ্যে পড়ে বিজেপি। এক দিকে পরিবর্ত প্রার্থীর খোঁজ। অন্য দিকে, ঘর বাঁচানোর চেষ্টা। কারণ, তত ক্ষণে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, অন্য কাউকে যদি বিজেপি সমর্থন করে তা হলে এনডিএ তো বটেই, দলের মধ্যেও ক্রস ভোটিং অনিবার্য। নীতীশ কুমার, বাল ঠাকরেরা যেমন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করবেন তাঁরা, তেমনই বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতার পক্ষে বিজেপির মধ্যেও সমর্থন বাড়ছিল।
কিন্তু নবীন পট্টনায়ক, জয়ললিতার মতো একাধিক অ-কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী মিলে যদি সাংমাকে প্রার্থী করে দেন, তা হলে বিজেপি কী করবে? এ দিন রাতে দলের কোর কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। নীতীশ, ঠাকরে যে প্রণবকে সমর্থনে অনড়, তা-ও আলোচনায় ওঠে। বিজেপি নেতৃত্বের যুক্তি, দুই বা তিন জন (নবীন, জয়ার সঙ্গে মমতাকে ধরলে) অ-কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী যদি সাংমার নাম প্রস্তাব করেন, তখন দেশের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিজেপির সেই নাম সমর্থন করা ছাড়া উপায় নেই। কারণ, তখন কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করার অর্থ নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেওয়া।
কিন্তু বিজেপির কাছে সব থেকে এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন, মমতা কি সাংমাকে সমর্থন করবেন? বস্তুত, নীতীশ, বাল ঠাকরেরা সেই কথাই বলেছেন বিজেপি নেতৃত্বকে। বলেছেন, আপনারা যে সাংমাকে নিয়ে উৎসাহ দেখাচ্ছেন, তাতে কি মমতার সমর্থন পাবেন? না হলে সংখ্যার হিসেবে হার তো নিশ্চিতই হয়ে যাবে? উল্টো দিকে মমতার বক্তব্য, এনডিএ-র শরিকরাই তো সাংমার পক্ষ নিতে রাজি নয়। আগে তারা সিদ্ধান্ত নিক এই অবস্থায় বিজেপির কৌশল হল, দু’পক্ষকে আলাদা ভাবে একটা কথাই বোঝানো, তুমি তো আগে রাজি হও, অন্যদের তার পর দেখছি।
মমতার কাছে বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, তিনি রাজি হলে নীতীশদের বুঝিয়েসুজিয়ে রাজি করবে বিজেপি। আবার নীতীশদের বলা হয়েছে, তাঁরা যদি রাজি হন, তা হলে মমতাকে বোঝানো সহজ হবে।
সাংমার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিতে বিজেপিকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। এই ব্যাপারে মূলত লড়াইটা চালাচ্ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী ও সুষমা স্বরাজ।
রাজনাথ সিংহ, যশবন্ত সিনহা, মুরলী মনোহর জোশী থেকে শুরু করে বিহার বিজেপির প্রধান সি পি ঠাকুর বা শত্রুঘ্ন সিনহা, সকলেই ছিলেন প্রণববাবুর দিকে ঝুঁকে। এমনকী, অরুণ জেটলিও। শত্রুঘ্ন তো প্রণববাবুকে ফোনও করেন। আজ মেনকা গাঁধী নর্থ ব্লকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে জানান, প্রণববাবুই ‘যোগ্য ব্যক্তি’।
আবার প্রণববাবু গত দু’দিনে একে একে কথা বলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান এবং জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে। এঁদের অনেকে ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণববাবুকে সমর্থন করার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে দল ও জোটের মধ্যে ব্যাপক ক্রস ভোটিংয়ের আশঙ্কাও করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। একই সঙ্গে সাংমাও যে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়িয়ে নিজের আখের গুছিয়ে পিঠটান দেবেন না, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত নন তাঁরা। আশঙ্কা রয়েছে, শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে লড়াই থেকে সরেও দাঁড়াতে পারেন সাংমা। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আজ কিছুটা রসিকতার ছলেই বলেন, “সাংমা হলেন উত্তর-পূর্বের রাম জেঠমলানী। কখন কী করে বসেন, কারও জানার উপায় নেই।” তাঁর কথায়, মনোনয়ন পেশের পর সাংমা যদি তাঁর মেয়েকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী করা বা অন্য কোনও শর্তে বেঁকে বসেন, তা হলে বিজেপির দু-কূলই যাবে। তবু আপাতত প্রাক্তন স্পিকার, মেঘালয়ের নেতা পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমাকে সমর্থন করা ছাড়া পথ দেখছে না বিজেপি। পরবর্তী এনডিএ বৈঠকেও শরিকদের সেই কথাটাই জানিয়ে দেবে তারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.