সরকার ভাঙবেন না মমতা, পাল্টা বার্তা সনিয়ারও
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে যতই টানাপোড়েন চলুক, তাঁরা যে নিজে থেকে ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন না, সোমবার দলীয় বৈঠকে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশিই তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রে ইউপিএ-রই তাঁদের ‘প্রয়োজন’। তাঁদের ইউপিএ-কে ‘দরকার’ নেই। তবু, তাঁরা কোনও সরকারকে ভাঙতে চান না।
অন্য দিকে, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীও চান মমতা ইউপিএ-তে থাকুন। এ দিন সেই বার্তা দিয়ে মমতার প্রকাশ্য সমালোচনা করার জন্য দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা দিগ্বিজয় সিংহকে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কার্যত প্রকাশ্যে ‘ভর্ৎসনা’ করা হয়েছে। দিগ্বিজয়ের ‘অপরাধ’, রবিবার তিনি তৃণমূল নেত্রীর আচরণকে ‘খামখেয়ালি ও অপরিণত’ বলে সমালোচনা করেছিলেন। কংগ্রেসের ধৈর্যের একটা সীমা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন। দিগ্বিজয়ের বক্তব্য যে কংগ্রেসের বক্তব্য নয়, এ দিন তা স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দলের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, ‘দিগ্বিজয় সিংহকে কংগ্রেসের তরফে বক্তব্য রাখার অনুমতি দেওয়া হয়নি’। পাশাপাশি, দলের তরফে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাকিল আহমেদ বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইউপিএ-র এক জন শক্তিশালী সহযোগী ছিলেন, আছেন এবং সব সময়ই থাকবেন।”
টাউন হলের সভায় মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
রাজ্য কংগ্রেস যাতে মমতাকে অযথা ‘উত্যক্ত’ না-করে, সেই মর্মেও তাদের বার্তা দিয়েছে দিল্লি। কংগ্রেস নেত্রী মালা রায়ের উপর তৃণমূলের ‘হামলা’র প্রতিবাদে এ দিনই হাজরা মোড়ে কংগ্রেসের ঘোষিত কর্মসূচি ছিল। কিন্তু তা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় টালিগঞ্জ থানার সামনে।
সব মিলিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের পারস্পরিক সম্পর্কের উত্তাপ বজায় থাকলেও পরিস্থিতি যাতে নাগালের বাইরে চলে না যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক দুই দলই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সেই কারণেই এ দিন যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে, দলীয় বৈঠকে মমতা প্রণব মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে কোনও ‘ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক’ আক্রমণ করেননি। তিনি শুধু জানিয়েছেন, তৃণমূল প্রণববাবুর রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড়ানোর বিরুদ্ধে। সে কথা তিনি সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকেও জানিয়ে দিয়েছিলেন।
বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ‘বাধ্য’ করা না হলে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার ছাড়ার কথা তাঁরা ভাবছেন না। তাঁর কথায়, “কোনও সরকারকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা আমরা করছি না। কংগ্রেস একা সরকার চালাতে পারবে না। কারণ, তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল।” তবে একই সঙ্গে সুদীপবাবু বলেন, “(সরকার ছেড়ে চলে আসার ব্যাপারে) মনের দিক দিয়ে আমাদের মন্ত্রীরা তৈরি। কংগ্রেসের মন্ত্রীরা যদি মনে করেন, আমরা জবরদস্তি সরকারে রয়েছি, তা হলে আমাদের মন্ত্রীরা ইস্তফা দিতে পিছপা হবেন না।”
অন্য দিকে মমতাকে ইউপিএ-তে ধরে রাখার ব্যাপারে সনিয়ার আগ্রহ নিয়ে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, কংগ্রেস সভানেত্রী মুলায়ম সিংহ যাদব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
কোনও সরকারকে ফেলে দেওয়ার
চেষ্টা আমরা করছি না
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
তৃণমূল নেতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইউপিএ-র একজন শক্তিশালী
সহযোগী ছিলেন, আছেন এবং সব সময়ই থাকবেন।

শাকিল আহমেদ
কংগ্রেস নেতা
১৯৯৯-এ লোকসভা ভোটের পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণনের কাছে সনিয়ার সরকার গঠনের দাবি সমর্থন জানাবেন বলেও ডিগবাজি খেয়েছিলেন মুলায়ম। পরমাণু চুক্তিতে বামেরা সমর্থন প্রত্যাহারের পর শেষ মুহূতের্র্ কংগ্রেসকে সমর্থন জানিয়ে প্রকাশ কারাট-এ বি বর্ধনদের মুখ পুড়িয়েছিলেন। ফলে তাঁর উপরে পুরোপুরি ভরসা করা কঠিন।
কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, মমতা-মুলায়ম দু’জনেই ইউপিএ-র সঙ্গে থাকলে ভাল। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন মতো রাজনৈতিক কৌশল বদলাতে পারবে কংগ্রেস। মমতা ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেও তাঁর কাছে এটা পরিষ্কার থাকবে যে, তিনি সমর্থন তুলে নিলেও সরকার পড়বে না। আবার মমতা থাকলে মুলায়মও নিজেকে ‘অপরিহার্য’ বলে ভাববেন না। ফলে মমতার সঙ্গে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ মেটাতে চাইছে কংগ্রেস।
কিন্তু দিগ্বিজয় যে ভাষায় মমতাকে আক্রমণ করেছিলেন, তাতে তৃণমূল শিবিরের ‘ক্ষুব্ধ’ হওয়ার যথেষ্ট রসদ ছিল বলেই মনে করছে কংগ্রেস। এ দিন রুটিন সাংবাদিক সম্মেলনের আগেই কংগ্রেস বিবৃতি জারি করে জানায়, দিগ্বিজয়ের বক্তব্য ‘দলের বক্তব্য’ নয়। দিগ্বিজয় দলে রাহুল গাঁধীর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। তা সত্ত্বেও দিগ্বিজয়ের মন্তব্য খারিজ করা থেকেই প্রমাণিত, মমতাকে ধরে রাখতে সনিয়া কতখানি মরিয়া!
সেই কারণেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে দিল্লি থেকে তৃণমূলের সঙ্গে ‘সঙ্ঘাতে’ না-জড়ানোর নির্দেশ এসেছে বলে প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রের খবর। যার জেরে এ দিন কলকাতায় সভার স্থান পরিবর্তন করে কংগ্রেস। আগে ঠিক ছিল, মিছিল করে টালিগঞ্জ থেকে হাজরা গিয়ে সভা করা হবে। কিন্তু যাঁর বাড়িতে হামলার প্রতিবাদ, সেই মালাদেবীকেই সভার স্থান বদলাতে বলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। কংগ্রেসের একাংশের দাবি, পুলিশের তরফেও তাঁদের হাজরায় সভা না-করার অনুরোধ করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত টালিগঞ্জ থানার সামনে শুধু সভা হয়।
তৃণমূলকে এই ‘বার্তা’ দেওয়ার পাশাপাশি কংগ্রেস যে এখনও রাষ্ট্রপতি ভোটে তাদের সমর্থন চাইছে, তা-ও এ দিন দলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, “আমরা চাইব, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী যাতে প্রণব মুখোপাধ্যায়কেই রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থন জানান।” প্রণববাবু যে নিজে মমতাকে ‘বোন’ বলে সম্বোধন করে তাঁকে সমর্থনের অনুরোধ জানিয়েছেন, আজ তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস মুখপাত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.