খরচ কমিয়ে, নতুন বিনিয়োগ এনে এবং বাজার বাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায় হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস। এত দিন এই পরিকল্পনা নিয়ে নানা কথা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে এ নিয়ে পাকা পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে।
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের চেয়ারম্যান হিসেবে ওএনজিসি-র শাখা সংস্থা মাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড (এমআরপিএল)-এর লগ্নির ইচ্ছাও এ দিন পর্ষদকে জানানোর কথা। তবে এ নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি কোনও পক্ষই। তবে রাজ্যের এই ‘শো-পিস’ প্রকল্প হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস-এর গভীর আর্থিক সঙ্কটের সময়েও আইনি বিবাদ পিছু ছাড়ছে না। সোমবারই নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছে সংস্থার অন্যতম বিনিয়োগকারী এবং চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর শাখা সংস্থা উইনস্টার। তাদের অন্যতম অভিযোগ, সাত বছর আগে লগ্নি করেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পেট্রোকেম তার পরিচালন পর্ষদে উইনস্টারের প্রতিনিধি মনোনীত করতে পারেনি। এ ছাড়াও লগ্নিকারী হিসেবে প্রাপ্য অধিকাংশ অধিকার থেকেই তারা বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। তাদের দাবি, প্রথমত, কোনও শেয়ার যেন এই মুহূর্তে হস্তান্তর না-হয়। দ্বিতীয়ত, পর্ষদের সব সিদ্ধান্ত যেন ঠিক মতো নথিভুক্ত হয়। এখন তা হচ্ছে না বলেই উইনস্টারের অভিযোগ। আজ মঙ্গলবারই এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা। অন্য দিকে এম আর পি এল-এর লগ্নি নিয়ে পর্ষদের বৈঠকে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী কী অবস্থান নেয়, সেটা এখন দেখার।
আর্থিক সংস্থাগুলি আরও টাকা ঢালার আগে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস-এর আগামী দু’বছরের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা জানতে
চায়। এই লক্ষ্যেই খরচ কমানো ও আয় বাড়ানোর নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করেছে সংস্থা। সংস্থা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ৫০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। ন্যাপথা কেনার জন্য এখনই প্রয়োজন ৩০০ কোটি টাকা।
ঋণ পাওয়ার জন্য সক্রিয় হয়েছে রাজ্য সরকারও। চলতি মাসের গোড়ায় শিল্পমন্ত্রী তথা সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঋণদাতা সংস্থাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেও সংস্থার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের তরফে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন মন্ত্রী। প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি মাসেই পেট্রোকেমের আর্থিক স্বাস্থ্য খতিয়ে দেখতে প্রথম বার রাজ্য সরকার ঋণদাতা ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল।
পার্থবাবুর সঙ্গে বৈঠকের পরে গত সপ্তাহে পেট্রোকেম কর্তৃপক্ষকে আলোচনায় ডাকে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, আইডিবিআই, আইসিআইসিআই, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-সহ বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থা। কারখানা চালু রাখতে ন্যাপথা কেনার জন্য আপাতত ৫০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে তারা। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ের আর্থিক সহায়তার শর্ত হিসেবে সংস্থার আগামী দু’বছরের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা দেখতে চায় ঋণদাতা সংস্থাগুলি।
সংস্থা সূত্রের খবর, সেই পরিকল্পনা আজ মঙ্গলবার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে পেশ করা হবে। সংস্থার দাবি, এই পরিকল্পনা ঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে লোকসানের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে না। অন্তত কর দেওয়ার আগে পর্যন্ত সংস্থা বাকি তিনটি ত্রৈমাসিকে লাভের জায়গায় থাকবে। আন্তর্জাতিক ও দেশের বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য উৎপাদন করবে সংস্থা। এত দিন ন্যাপথা প্রক্রিয়াকরণের সময়ে তৈরি পণ্য সি ফোর র্যাফেনেট থেকে এলপিজি উৎপাদন করা হত। কিন্তু বাজারে সি ফোর র্যাফেনেট-এর চাহিদা বাড়ায় সরাসরি এই পণ্য বাজারে বিক্রি করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। এর ফলে টন প্রতি ১০ হাজার টাকা বেশি আয় করছে সংস্থা। মাসে ৯ কিলো টন উৎপাদন হচ্ছে। তার মধ্যে আড়াই কিলো টন দেশের বাজারে বিক্রি করা যাবে। বাকিটা রফতানি করা হবে। সংস্থা সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে বছরে ১০০ কোটি টাকা বেশি আয় হবে।
এ ছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে খরচ বাঁচাতে সচেষ্ট হচ্ছে সংস্থা। ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করত ‘কনডেন্সড স্টিম টারবাইন জেনারেটর’। কিন্তু তা অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ। এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে খরচ দাঁড়াত ১৫ টাকা। তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থা সূত্রের খবর। তার বদলে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া হবে। এর ফলে বছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একই ভাবে দু’টি গ্যাস টারবাইনের মধ্যে একটি বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। পরিবর্তে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া হবে। বাঁচবে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। পাশাপাশি সংস্থার দাবি, বর্তমান বাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী ১০০ শতাংশ উৎপাদন করতে পারলে ঘুরে দাঁড়াবে সংস্থা। |