‘ইউরোজোন’ আপাতত অটুট
দেশ বাঁচাতে সংস্কারই পথ, রায় দিল গ্রিস
পাতত ‘ইউরোজোন’-এ ভাঙনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিল আথেন্স।
পার্লামেন্ট নির্বাচনে দেশের আর্থিক সংস্কারে পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণের পক্ষে রায় দিয়ে অর্থ সঙ্কটে ভুগতে থাকা ইউরোপকে স্বস্তি দিলেন গ্রিক নাগরিকরা। আর সেই সংস্কারের দায়িত্বও নিতে চলেছেন এক প্রবীণ অর্থনীতিবিদ। জয়ী নিউ ডেমোক্র্যাসি দলের নেতা অ্যান্টনি সামারাস। তিন দিনের মধ্যে তাঁকে সরকার গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন গ্রিসের প্রেসিডেন্ট। জয়ের পরে সামারাস বলেছেন, “গ্রিক নাগরিকেরা ইউরোজোন-এর মধ্যেই থাকতে চান। আমাদের হাতে সময় নেই। দেশকে বাঁচাতে এ বার আমাদের জাতীয় স্তরে ঐকমত্যের ভিত্তিতে উন্নয়নের কাজ করতে হবে।”
তবে এই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী না সাময়িক, সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। কারণ পুনর্বাসন প্রকল্পের সমর্থক নিউ ডেমোক্র্যাসি দলের জয় এসেছে ‘কান ঘেঁষে’। ঋণ নিয়ে অর্থনীতি বাঁচানোর এই নীতির প্রবল বিরোধী বামপন্থী সাইরিজা দলের পক্ষেও ভোট পড়েছে প্রচুর। ফলে মে মাসের নির্বাচনের মতো এ বার ত্রিশঙ্কু ফল না হলেও মন্দায় জর্জরিত গ্রিসকে বাঁচাতে নতুন সংস্কারবাদী সরকার কতটা কার্যকরী হতে পারবে, কত দিনই বা অক্ষত থাকবে ১৭ দেশের অভিন্ন মুদ্রার জোট, সেই নিয়ে অর্থনীতিবিদরা ধন্দে রয়েছেন। গ্রিসের ফলাফলে সোমবার সকালে ইউরোপ-সহ এশিয়ার শেয়ার বাজার কিছুটা চাঙ্গা হলেও দিনের শেষে সেই প্রবণতাও অটুট থাকেনি।
জার্মানি, স্পেন, ইতালি-সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য সদস্য দেশগুলি যদিও গ্রিসের নির্বাচনের ফলাফলে আশাবাদী। তাদের মতে, গ্রিসকে আর্থ-সামাজিক দুরবস্থা থেকে বেরোতে হলে অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত সংস্কারের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই একমাত্র উপায়। তাতে ফের ইউরোজোন-এর এক শক্তিশালী সদস্য হিসেবে উঠে আসবে তারা। জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল সোমবার সকালেই টেলিফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সামারাসকে।
অনেক দিন ধরেই এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা বিশ্ব। মেক্সিকোয় জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়া রাষ্ট্রপ্রধানরাও এ দিন চোখ রেখেছিলেন ভোটের ফলের দিকে। কারণ ইউরোজোন-এ ভাঙন ধরলে ইউরোপের পক্ষে সেটা খুব ক্ষতিকর হবে, সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ ছিল প্রায় সব মহলই। রবিবার নির্বিঘ্নেই ভোট দেন গ্রিক নাগরিকেরা। সোমবার ফল বেরোতে দেখা যায়, ‘ইউরোজোন’-এর মধ্যে থেকেই পুনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সংস্কারের পক্ষে রায় দিয়েছে গ্রিস। ৩০০ আসনের গ্রিক পার্লামেন্টে অ্যান্টনি সামারাসের নেতৃত্বাধীন নিউ ডেমোক্র্যাসি দল সবথেকে বেশি (১২৯) আসন পেয়েছে, যা মোট ভোটের ২৯.৭ শতাংশ। একই আর্থিক নীতির সমর্থক সমাজবাদী পাসক দলও ১২.৩ শতাংশ ভোট (৩৩টি আসন) পেয়েছে। সামারাস জানিয়েও দেন, তিনি দেশের উন্নয়নে বৃহত্তর জোট সরকার গড়তে চান। তার জন্য বাকি রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কথা বলতেও আগ্রহী তিনি।
মন্দায় আক্রান্ত গ্রিসকে বাঁচাতে ২০১০ সালে পুনর্বাসন প্রকল্পে ১১ হাজার কোটি ইউরো ঋণ দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তে আরও ১৩ হাজার কোটি ইউরো ঋণ পায় গ্রিস। কিন্তু রাজনৈতিক অচলাবস্থার ফলে সেই প্রকল্পে কার্যত কোনও কাজই হয়নি। জার্মানি এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছে, আর্থিক পুনর্বাসন প্রকল্পের যাবতীয় পূর্বশর্ত মেনে ব্যয়সঙ্কোচ ও সংস্কার শুরু করে গ্রিস যদি মন্দা থেকে বেরনোর পথে পা বাড়াতে পারে, তবে তাদের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার সময়সীমা বাড়ানোর কথাও ভাবা হতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিশ্বব্যাঙ্কও চায়, দ্রুত সংস্কার শুরু করুক গ্রিস। আমেরিকাও সামারাসের জয়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, গ্রিসের ইউরোজোন-এ থেকে যাওয়া সবার জন্যই প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু এর পরেও চিন্তা বাড়িয়েছে পুনর্বাসন প্রকল্পের বিরোধী সাইরিজা দল। তাদের প্রাপ্ত ভোট সামারাসের দলের থেকে সামান্যই কম, ২৬.৯ শতাংশ (৭১টি আসন)। সাইরিজা দলের নেতা অ্যালেক্স সাইপ্রাস সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিরোধী আসনে বসে পুনর্বাসন প্রকল্প ও ব্যয়সঙ্কোচের বিরুদ্ধেই সরব হবেন তাঁরা। এ ছাড়াও পুনর্বাসন প্রকল্প-বিরোধী আরও কিছু দল রয়েছে, যাদের একাংশ চায় গ্রিস ইউরোজোন-এর বাইরে গিয়ে নিজের চেষ্টায় অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠুক। আর নীতিগত এই সংঘাতের ফলেই ইউরোপের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব নিশ্চিত হতে পারছেন না কেউ। কিছু মহলের আশঙ্কা, গ্রিসের রাস্তায় ফের আগুন জ্বলতে পারে। তবে আপাতত সামারাসেই আস্থা রাখতে চায় ইউরোজোন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.