সরকারি কৃষি শ্রমিকের অভাবে ধুঁকছে কালনা মহকুমার কৃষি খামারগুলি। শুধু তাই নয়, কৃষি আধিকারিক এবং প্রযুক্তি সহায়কের সংখ্যাও কমে গিয়েছে অনেক। ফলে চাষিদের প্রয়োজনে স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন বা নতুন চাষের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা, ভাটা পড়েছে সব কাজেই।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমা কৃষি খামারগুলোতে গত এক দশক ধরেই ক্রমশ কমে আসছে চাষাবাদের পরিমাণ। অবস্থা এমনই যে বর্তমানে কোনও খামারের এক চতুর্থাংশ, কোথাও বা তারও কম জমিতে কৃষিকাজ হচ্ছে। এমনকী কোনও কোনও মরসুমে খামারে চাষই হচ্ছে না। সঙ্কটের কারণ হিসেবে কৃষি দফতর সরাসরি সরকারি শ্রমিকের কমে আসাকেই দায়ী করছে। সাধারণত, খামারগুলিতে প্রতি একর জমির জন্য এক জন করে শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এই হিসেবে মোট ৭৮ জন শ্রমিকের দরকার থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৩৫ জন। তাঁদের মধ্যে আবার আগামী বছরের শুরুতে অবসর নেবেন তিন জন। বাকিদের অনেকেরই বয়স ৫৫ বছরের বেশি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের কর্মক্ষমতা কমেছে। |
খামারগুলি পরিচালনার জন্য অভাব রয়েছে উপযুক্ত সংখ্যক আধিকারিকেরও। যেমন, মহকুমা কৃষি দফতরে বিশেষজ্ঞের পদে রয়েছেন পার্থ ঘোষ। কিন্তু একই সঙ্গে পূর্বস্থলী-২ ব্লকের কৃষি আধিকারিকের দায়িত্ব ও মডেল ফার্মের দায়িত্বও পালন করতে হয় তাঁকে। মহকুমা কৃষি করণের নিলয় করকে দেখভাল করতে হয় মহকুমা গবেষণা কেন্দ্রের। পাশাপাশি তিনি কৃষি বিশেষজ্ঞও। পূর্বস্থলী-২ ব্লকের বীজফার্ম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন গৌতম রায় নামে এক কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক। মন্তেশ্বরের বীজফার্ম দেখাশোনা করেন ব্লকের কৃষি আধিকারিক রঞ্জন বন্দোপাধ্যায়।
সরকারি কৃষি শ্রমিক এবং আধিকারিক না থাকার এই সমস্যার কথা মেনে নিয়েছে মহকুমা কৃষি দফতরও। দফতরের আধিকারিক স্বপনকুমার বারিক বলেন, “সীমিত সামর্থ্যে যতটা পারা যায় খামারগুলিতে সেইমত চাষাবাদ করা হয়। সমস্যার কথা উচ্চ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
কৃষি খামারগুলের দুর্দশার পাশাপাশি তলানিতে ঠেকেছে কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের সংখ্যাও। মহকুমা কৃষি দফতর জানিয়েছে, পঞ্চায়েত পিছু একজন করে প্রযুক্তি সহায়ক থাকার কথা থাকলেও পাঁচটি ব্লক মিলিয়ে রয়েছেন মাত্র ১৪ জন। যদিও প্রয়োজন ৮৪ জন কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের। তার মধ্যে কালনা-২ ব্লক চলছে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক ছাড়াই। এই সহায়কেরা চাষিদের সমস্যার কথা জানান ব্লক স্তরে এবং প্রয়োজনে পরামর্শও দেন। এলাকাভিত্তিক চাষের বিস্তারিত তথ্যও এদের কাছ থেকেই জানা যায়। আধিকারিক স্বপনবাবু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যা চলছে। কৃষি প্রযুক্তি সহায়কেরা না থাকায় এলাকাভিত্তিক চাষের নিখুঁত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।” তাঁর আশা কর্তৃপক্ষ শীঘ্র সমস্যার সমাধান করবে।
কবে, কীভাবে তার কোনও আশ্বাসই পাচ্ছে না খামারগুলো। |