ধৃত ৪২, পুলিশকেই দোষ দিচ্ছে সিপিএম
নেতা মার খাওয়ার পরে পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে ভাতার থেকে সিপিএমের ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ জন মহিলা। কিন্তু সোমবার রাত পর্যন্ত মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীদের ধরা হয়নি। পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম।
রবিবার সন্ধ্যায় ভাতারের নাসিগ্রামে তৃণমূলের লোকজন সিপিএম নেতা শ্রীজিৎ কোঙার ও তাঁর চার সঙ্গীকে মারধর করে বলে অভিযোগ। শ্রীজিৎবাবু গত বিধানসভা নির্বাচনে ভাতার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে শ’তিনেক ভোটে হেরেছিলেন। তাঁদের মার খাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ গেলে সিপিএমের লোকজন ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলে গাড়ি ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। পুলিশ ৪২ জনকে গ্রেফতার করে। এ দিন বর্ধমান আদালতে তোলা হলে সিজেএম ইয়াসমিন আহমেদ মহিলাদের জামিন দিয়েছেন। কিন্তু ১৮ জন পুরুষকে ১ জুলাই পর্যন্ত জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভাঙচুর হওয়া সেই গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের অভিযোগ, “পুলিশ অভিযুক্তদের ধরার নামে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে অত্যাচার চালিয়েছে। মহিলাদের শ্লীলতাহানিও করা হয়েছে। পুলিশ যে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিল, তার মধ্যে দু’পেটি মদও পাওয়া গিয়েছে। দলের তরফে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত ভাবে গোটা ঘটনা জানানো হচ্ছে।” একই অভিযোগ করেছেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের সিপিএম সাংসদ সাইদুল হকও। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা অবশ্য দাবি করেন, “সব অভিযোগ মিথ্যা। পুলিশই আক্রান্ত হয়েছিল। কাউকে মারধর করা হয়নি।”
ভাতারের নাসিগ্রামে সিপিএমের প্রতিনিধি দল।
সিপিএমের অভিযোগ, রবিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় মাধপুরে দলীয় সভা সেরে নাসিগ্রামে ফিরছিলেন বড়বেলুন ২ পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রীজিৎবাবু। সঙ্গে ছিলেন কৃষকসভার স্থানীয় নেতা অনুপম রায়-সহ চার জন। মাধপুর ও নাসিগ্রামের মাঝে একটি নতুন রাস্তার কাজ শুরু হওয়া উপলক্ষে তৃণমূলের কিছু লোকজন খাওয়া-দাওয়া করেছিল। তারাই তেড়ে এসে পাঁচ জনকে রাস্তায় ফেলে পেটায়। তাঁদের প্রথমে ভাতার গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। পরে তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসার পরে অবশ্য রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
ভাতার থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, সিপিএম নেতা-কর্মীদের মারধরের খবর পেয়ে একটি গাড়িতে সাত পুলিশকর্মী নাসিগ্রামে তদন্তে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে স্থানীয় সিপিএম সমর্থকেরা তাঁদের ঘিরে ফেলেন। মারমুখী লোকজনের হাত থেকে পালাতে গিয়ে চালক নয়ানজুলিতে গাড়ি নামিয়ে ফেলেন। দক্ষিণপাড়ার বেশ কিছু সিপিএম সমর্থক, বিশেষত মহিলারা ওই গাড়ি ঘিরে ধরে ইট ছুড়তে থাকেন। গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভাতারের ওসি সঞ্জয় কুণ্ডুর দাবি, আহত কৃষক নেতা অনুপম রায়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে সাত পুলিশকর্মী প্রাণে বাঁচেন। তিন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। মলয় রায় নামে এক এএসআই-কে ভাতার হাসপাতালে ভর্তিও করাতে হয়েছিল।
বর্ধমান আদালতে পুলিশ ভ্যান থেকে নামছেন ধৃত মহিলারা।
এই গণ্ডগোলের খবর পেয়েই ডিএসপি (ক্রাইম) মহম্মদ আজিম এবং সিআই সমরেশ দে বর্ধমান থেকে বিশাল বাহিনী নিয়ে নাসিগ্রামে যান। ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। শ্রীজিৎবাবুর অভিযোগ, “আমাদের মারধরের ঘটনায় জড়িত স্থানীয় তৃণমূল নেতা অরবিন্দ রায়-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ভাতার থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে পুলিশ তাদের কাউকেই গ্রেফতার করেনি।” অরবিন্দবাবু আবার পাল্টা বলেন, “আমাদের উপরেই তো হামলা চালিয়েছে সিপিএমের লোকেরা। আমাদের এক সমর্থক আহত হয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন। গোলমাল তো হয়েছে সিপিএমের সঙ্গে পুলিশের। আমরা পঞ্চায়েতপ্রধান শ্রীজিতবাবুর দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলনে নামায় তিনি গ্রেফতার হয়ে জেল খাটেন। তারই শোধ নিতে সিপিএম আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করছে।” তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অলক দাসের বক্তব্য, “সিপিএম পরিকল্পিতভাবে ভাতারে অশান্তি সৃষ্টি করছে। যে ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা জড়িত নন, সেটাও তাদের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।”

সোমবার ছবিগুলি তুলেছেন উদিত সিংহ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.