এমএএমসি
নজর ঘোরাতেই গুদামে আগুন, ধারণা পুলিশের
সিআইএসএফ চলে যাওয়ার পরে কারখানা চত্বরে চোরেদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। চুরি গিয়েছে লোহার নানা যন্ত্রপাতি। কয়েক জন ধরাও পড়েছে। চুরি আটকাতে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা হয়েছে। এরই মধ্যে আগুন লাগল দুর্গাপুরের এমএএমসি কারখানায়। রবিবার গভীর রাতে কারখানার একটি গুদামে আগুন লাগে। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভায়। কী ভাবে আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানালেও পুলিশের অনুমান, তাদের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরাতেই আগুন লাগানো হয়ে থাকতে পারে।
২০০২ সালে বন্ধ হয়ে যায় এই এমএএমসি কারখানা। ২০০৭-এ এই কারখানা অধিগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করে ‘মউ’ স্বাক্ষর করে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড (বিইএমএল), কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিআইএল) এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের (ডিভিসি)। কলকাতা হাইকোর্টে নিলামে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা দর দিয়ে এমএএমসি-র দায়িত্ব পায় ওই তিন সংস্থার কনসর্টিয়াম। ২০১০-এর ১৮ অগস্ট কনসর্টিয়াম লিক্যুইডেটরের হাত থেকে কারখানার দায়িত্ব বুঝে নেয়। তার পরে কারখানা খোলা নিয়ে নানা টানাপোড়েন চলছে। পাশাপাশি, বিস্তর টালবাহানার পরে গত ৩০ মে কারখানার পাহারার দায়িত্ব ছেড়ে চলে যায় সিআইএসএফ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর পরেই কারখানার জিনিসপত্র চুরি করতে কার্যত দুষ্কৃতীদের লাইন পড়ে যায়। শহরে পুরভোট থাকায় পুলিশও সে ভাবে নজরদারি চালাতে পারেনি। তবে ভোট মেটার পরে পুলিশি প্রহরা বাড়ানো হয়। তাতে চোরেদের রমরমা খানিকটা কমে। পুলিশ বেশ কয়েক জন চোরকে ধরেও ফেলে। চুরি যাওয়া কিছু সামগ্রী উদ্ধার হয়। কিন্তু চুরি যে একেবারে বন্ধ হয়নি, তা কারখানার আশপাশে গেলেই বোঝা যায়।
তখনও বেরোচ্ছে ধোঁয়া। সোমবার সকালে তোলা —নিজস্ব চিত্র।
এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, কারখানার পিছনের দিকে জঙ্গলের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে মোরাম বিছানো সরু রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে সাইকেল বা রিকশা ভ্যান যাতায়াত করতে পারে। কারখানার সীমানা পাঁচিলের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে সরাসরি গাড়ি বা লরি এনে চোরেদের দল কারখানা থেকে মালপত্র সরাত। পুলিশি প্রহরা বেড়ে যাওয়ার পরে সাইকেল বা ভ্যানে করে যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিয়ে গিয়ে জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে তা বোঝাই করা হচ্ছে। বাসিন্দাদের আরও দাবি, রবিবার গভীর রাতে গুদামে যখন আগুন জ্বলছে, সেই সময়ে দু’টি লরি নিয়ে কারখানায় ঢুকেছিল চোরের দল। পুলিশের নজর তখন আগুনের দিকে। সেই সুযোগে চোরের দল ‘কাজ’ সারতে শুরু করে। তবে টহলদার পুলিশ বিষয়টি আঁচ করে ফেলায় তড়িঘড়ি চম্পট দেয় তারা।
এক পুলিশ আধিকারিকের দাবি, কারখানার ভিতরে বিদ্যুতের সংযোগ স্বাভাবিক করার কাজ চলছে। দু’এক দিনের মধ্যেই তা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। আলোয় ‘কাজ’ করতে চোরেদের অসুবিধা হবে। তাই মরিয়া হয়ে এ দিন গুদামে আগুন লাগিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আমাদের অনুমান, পুলিশকর্মীদের কোনও ভাবে ব্যস্ত রেখে চুরির মতলব করেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু পুলিশ সজাগ থাকায় শেষ পর্যন্ত তারা পালিয়ে যায়।” গুদামে আগুন লাগার খবর পেয়ে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আগুন নেভানোর কাজ চলে। তবে সোমবার সকাল ৭টা পর্যন্ত গুদামের ভিতর থেকে অল্পস্বল্প ধোঁয়া বেরোতে দেখা গিয়েছে। এডিসিপি (পূর্ব) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেন, “এটা ঠিক যে, পুলিশি প্রহরা বাড়ায় চোরেরা সমস্যায় পড়েছে। কিন্তু গুদামে আগুন কী ভাবে লেগেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।”
কারখানার আইএনটিইউসি নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “যেনতেন প্রকারে দুষ্কৃতীরা মালপত্র সাফ করে দিতে চাইছে। কারখানা বাঁচাতে গেলে পুনরায় সিআইএসএফ পাহারাই একমাত্র উপায়।” একই দাবি সিটু নেতা বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তীরও। কিন্তু ব্যারাক সংস্কার না করলে সিআইএসএফ প্রহরা চালু করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্র মন্ত্রক। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সম্প্রতি আশ্বাস দিয়েছেন, ব্যারাক সংস্কারের কাজ এক মাসের মধ্যে সেরে ফেলবে তিন সংস্থা।
কারখানা নিয়ে নানা মন্ত্রীর আশ্বাস আগেও শুনেছে এমএএমসি। শিল্পমন্ত্রীর আশ্বাসেও তাই আশঙ্কা কাটছে না কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.