লড়াই করে জয়
বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় আবিল
মুদিখানার দোকান চালান বাবা শেখ মহিমুদ্দিন। তাতে যা আয় হয় তা দিয়ে দুবেলা ভরপেট খাবারও জোটে না পরিবারের ৫ জনের। ছেলেকে টিউশন পড়ানোর সামর্থ্য ছিল না। দেড় কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যেতে হত। নিত্য অভাবের সঙ্গেও নিরন্তর লড়াই চালিয়েও ৮৯.৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে শেখ আবিল হোসেন। মালদহের রতুয়ার নরোত্তমপুর কাহালা বিবি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল সে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬২৭। ইংরেজি বাদে সবকটি বিষয়ে লেটার পেয়েছে আবিল। ৫টি বিষয়ে পেয়েছে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর। তার বিষয় ভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বর হল, বাংলায় ৮৭, ইংরেজিতে ৬৭, অঙ্কে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৫, জীবন বিজ্ঞানে ৯১, ভূগোলে ৯৭, ইতিহাসে ৯০। এ বছর স্কুলের ২৩৯ পরীক্ষীর্থীর পাশ করেছে ২০৭ জন। বাসিন্দা ও পরিবারের পাশাপাশি খুশীর হাওয়া আবিলের স্কুলেও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, “অভাবি পরিবারের হলেও আবিল মেধাবী ছাত্র। বাবার টিউশন পড়ানোর সামর্থ ছিল না। শিক্ষকরা ওকে সবরকম সাহায্য করেছে। ও যা করেছে নিজের চেষ্টায় করেছে।” আবিলের বাড়ি কালুটোলা গ্রামে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে বড় আবিল। তাই বাবার অবর্তমানে দোকানও চালাতে হত তাকে। ভাঙাচোরা মাটির বাড়ি। বিপিএল তালিকায় নাম থাকায় একবছর আগে বাড়িয়ে অবশ্য বিদ্যুতের সংযোগ মিলেছে। তার আগে ভরসা ছিল হ্যারিকেনের আলো। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় আবিল। অভাবের সংসারে কীভাবে তা সম্ভব হবে তা নিয়ে পরিবারের পাশাপাশি দুঃশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে তাকে। আবিল বলে, “টিউশন পেলে ইংরেজি সহ অন্য বিষয়ে আরও ভাল ফল করতে পারতাম। স্কুল শিক্ষকরা সাহায্য না করলে এই ফল করা সম্ভব হত না। বাবা মহিমুদ্দিন বলেন, “ভাল করে খওয়াতে পারি না। ও যা করেছে তাতেই আমরা খুশি।”

শতকরা ৯১.৭১ ভাগ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে মিন্টু রায়
জলপাইগুড়ি সদর থানার ক্ষেত্রমোহন হাইস্কুল থেকে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৪২ (শতকরা ৯১.৭১ ভাগ) নম্বর পেয়ে পাশ করেছে মিন্টু রায়। তার বাবা নর্মদা রায় পেশায় রাজমিস্ত্রি। মন্ডলঘাট এলাকার বরুয়াপাড়ায় তার বাড়িতে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসার। কোনও স্থায়ী আয় নেই। মন্ডলঘাট এলাকায় এবং জলপাইগুড়িতে যখন যেমন কাজ পান করেন। সারা বছর কাজ থাকে না। তাও ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার অদম্য প্রচেষ্টা নিয়ে লড়াই করছেন। সেই চেষ্টার এবং ইচ্ছার ফল মিন্টুর মাধ্যমিকের ফল মিন্টুর প্রাপ্ত নম্বর। বাংলায় ৯১, ইংরিজিতে ৮১, অঙ্কে ৯৩, ভৌত বিজ্ঞানে ৯০, জীব বিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৪ এবং ভূগোলে ৯৫। দরমার বেড়া। ওপরে টিনের চাল এতটাই পুরানো, যে কোনও সময়ে ভেঙে যেতে পারে। মঙ্গলবার দুপুরে মিন্টুর বাবা নর্মদাবাবু বাড়ি ছিলেন না। মা বীণা রায় বলেন, “আমরা দুজনেই চাই আমাদের ছেলে আরও শিক্ষিত হোক। কিন্তু কী করে তা সার্থক হবে জানি না। মাধ্যমিকের পরে মিন্টুর ইচ্ছা জলপাইগুড়ির ফণীন্দ্রদেব বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সেটা কীভাবে সম্ভব হবে তাই নিয়ে চিন্তিত মিন্টু। বাংলা সাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় পড়া বরুয়াপাড়ার এই ছেলেটির প্রিয় খেলা ক্রিকেট। প্রিয় খেলোয়াড় বিরাট কোহলি। ক্ষেত্রমোহন হাইস্কুলে বরাবর প্রথম হয়েছে মিন্টু। স্কুলের প্রধানশিক্ষক সুনীল মল্লিক বলেন, “মিন্টু মেধাবী তার পরিবার অসচ্ছল তার উচ্চ শিক্ষার জন্যে অর্থের প্রয়োজন সহৃদয় ব্যাক্তিদের সাহায্য পেলে সে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.