অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
তিন বন্ধুই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চায়। তিন বন্ধুই পড়তে ভালোবাসে থ্রিলার। তিন বন্ধুরই নামের প্রথম অক্ষর একই। আর কাকতালীয় ভাবে তিন বন্ধুরই মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরে ৩ এর পার্থক্য। অর্পণ, অর্কপ্রভ, অমিতাভ, এই তিন বন্ধুর কৃতিত্বে মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় নজর কেড়েছে জলপাইগুড়ি। রাজ্যের মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রকাশিত মেধা তালিকা অনুযায়ী মোট ৬৭৩ নম্বর পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র অর্পণ ঘোষ। প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী তৈরি মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে জলপাইগুড়ির ফণীন্দ্রদেব ইনস্টিটিউশনের ছাত্র অর্কপ্রভ সাহা। প্রাপ্ত নম্বর ৬৭০। এবং নম্বরের ভিত্তিতে অষ্টম স্থানে রয়েছে এই স্কুলেরই ছাত্র অমিতাভ ভট্টাচার্য। যার প্রাপ্ত নম্বর ৬৬৭। তিনজনই জলপাইগুড়ি শহরের ছাত্র। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে থেকেই অর্পণ এবং অর্কপ্রভর বন্ধুত্ব। মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে কৃতী তালিকায় থাকা জলপাইগুড়ির তিন ছাত্রই একই সঙ্গে একই গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা শুরু করেছে। মেধা তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা অর্পণের কথায়, “আমরা সকলেই বন্ধু।
একসঙ্গে তিন বন্ধু মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া খুবই ভাল খবর।” জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধীরাজমোহন ঘোষের ছেলে অর্পণ। প্রথম শ্রেণি থেকেই জেলা স্কুলের ছাত্র। এদিন ছেলের ভাল ফলের খবর পেয়ে ধীরাজবাবু বললেন, “খুবই ভাল লাগছে। তবে ছেলের বাবা হিসেবে নয়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবেই আমার গর্ব বেশি। দীর্ঘদিন পরে আমাদের স্কুলের এক ছাত্র মেধা তালিকার প্রথম দিকে স্থান অর্জন করেছে। এতে স্কুলের নবম-দশম শ্রেণি ছাত্ররা বেশি করে উদ্বুদ্ধ হতে পারবে।” নোট মুখস্থ করে পরীক্ষার দেওয়ার বিরোধী অর্পণের সাফল্যের চাবিকাঠি পাঠ্যবই ভাল ভাবে পড়া। মা শর্মিলা দেবীও লাটাগুড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। |
অঙ্ক ও বিজ্ঞানের পড়াশোনা বাবা-মায়ের কাছে। অন্যান্য বিষয়ে গৃহশিক্ষক ছিল অর্পণের। গোয়েন্দা বোমকেশ বক্সির অনুরাগী অর্পণ পরীক্ষার আগেও ব্যোমকেশের সিনেমা দেখার সুযোগ ছাড়েনি। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে না পারলে সন্ধেয় পড়ায় মন বসে না বলে জানিয়েছে অর্পণ। তার কথায়, “বরাবরই ক্লাসে প্রথম হই। তবে মাধ্যমিকে সারা রাজ্যে তৃতীয় হতে পারব তা ভাবতে পারিনি।” অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞান এবং জীবন বিজ্ঞানে ৯৯ করে পেয়েছে অর্পণ। অন্যান্য বিষয়ে অর্পণের প্রাপ্ত নম্বর বাংলায় ৯৩, ইংরেজিতে ৯২, ইতিহাসে ৯৩ এবং ভুগোলে ৯৮। জলপাইগুড়ির অরবিন্দনগরের বাসিন্দা অর্কপ্রভর বাবা অমিতবাবু পূর্ত দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার। মা অনিমা দেবী গৃহবধূ। পড়াশোনার বাইরে খেলাধুলো বা টিভি দেখাতে বেশি সময় নষ্ট করার পক্ষপাতী নয় অর্কপ্রভ। এদিন সকালে বাড়িতে বসে অর্কপ্রভ বলে, “মাধ্যমিকের আগে খেলাধুলো বা টিভি দেখার সময় পাইনি। পরীক্ষার পরে অবশ্য খেলেছি।” পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকা ও ক্যুইজে অর্কপ্রভ কতটা দড়, তার প্রমাণ আলমারিতে রাখা জেলা ও রাজ্য স্তরে হরেক প্রতিযোগিতায় পাওয়া বিভিন্ন পুরষ্কার। অঙ্কে ১০০ পাওয়া অর্কপ্রভ ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েই পড়তে চায়। বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৯৪, ইতিহাসে ৯৪, ভুগোলে ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯৭, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৮ পাওয়া অর্কপ্রভ জানায়, সাত জন গৃহশিক্ষক ছিল তার। দিনে প্রায় ১০ ঘন্টা পড়াশোনা করেছে সে। তোড়লপাড়ার বাসিন্দা বিএসএনএল বাস্তুকার অলক ভট্টাচার্যের ছেলে অমিতাভও বাবার মতো ইঞ্জিনিয়র হতে চায়। ফণীন্দ্রদেব ইনস্টিউশনের ছাত্র অমিতাভ প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধা তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছে। থ্রিলার পড়তে ভালবাসা অমিতাভ অঙ্কে ১০০ পেয়েছে। বাকি সব বিষয়েও নব্বইয়ের ঘরেই নম্বর। মা অমৃতা দেবীকে পাশে বসিয়ে এদিন অমিতাভের খোলাখুলি বক্তব, “ফল ভাল হবে ভেবেছিলাম। তবে এতটা ভাল হবে ভাবিনি। আর অর্পণ, অর্কপ্রভ আর আমি একসঙ্গেই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ি। আমরা তিনজন বন্ধু। ওদের শুভেচ্ছা জানাই।”
|