শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় কোচবিহার জেলায় সম্ভাব্য প্রথম স্থান পেয়েছে মাথাভাঙা গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী সম্প্রীতি গঙ্গোপাধ্যায়। মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৬২। বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৯৩, অঙ্কে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞানে ১০০, জীবন বিজ্ঞানে ৯৫, ভূগোলে ৯৬ ও ইতিহাসে ৯০ পেয়েছে সম্প্রীতি। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের অধ্যাপিকা হতে চায় সে। নিজের রেজাল্টে খুশি সম্প্রীতির কথায়, “টেস্টে ৬৩২ নম্বর পেয়েছিলাম। তারপর দৈনিক পড়শোনায় আরও জোর দিয়েছিলাম। গড়ে ৮ ঘন্টা পড়েছি। ৬৭০ পাব ভেবেছিলাম। তবে আমার ফলে আমি খুশি।” উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে মাথাভাঙার বিবেকানন্দ হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করেছে সে। ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক তার বাবা জীবন গঙ্গোপাধায়। জীবনবাবু বলেন, “জন্ম থেকেই মেয়ের ডান হাতের কনুইয়ের পরের অংশ নেই। ছোটবেলা থেকে বাঁ হাত দিয়ে লেখালেখি করে। ওই প্রতিবন্ধকতা ওকে কখনও হার মানাতে পারেনি। ফলে ওর ভাল ফল নিয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম। তবে কোচবিহার জেলায় সম্ভাব্য প্রথম হিসাবে ওর নাম উঠে আসায় বেশি ভাল লাগছে।” সম্প্রীতির মা রুণা দেবী কোচবিহার ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের সদস্য। একমাত্র মেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে তিনিও সাহায্য করতেন। সেই সঙ্গে অবশ্য তার ৪ জন গৃহশিক্ষকও ছিল। মাথাভাঙার পূর্বপাড়ার বাসিন্দা গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারে এদিন ফল ঘোষণার পর থেকেই ছিল খুশির বাতাবরণ। রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন মঙ্গলবার বিকেলে সম্প্রীতির বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানান শরৎচন্দ্রের উপন্যাস সমগ্র ও মিষ্টিও ওই কৃতি ছাত্রীর হাতে উপহার হিসাবে তুলে দেন তিনি। বনমন্ত্রী বলেন, “অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে কোনও সমস্যা হতে পারে না তা সম্প্রীতি প্রমাণ করেছে। ওকে দেখে অন্যরাও উসাহিত হবে।” মাথাভাঙা তৃণমূল শ্রমিক কংগ্রেসের নেতা আলিজার রহমান বলেন, “সম্প্রীতির সাফল্যে আমরা আনন্দিত। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে জেলায় সম্ভাব্য প্রথম হওয়ার জন্য ওকে ৫ জুন নজরুল সদনে সংবর্ধনা জানানো হবে। এদিন ওর বাড়িতে গিয়েও আমরা তা জানিয়ে এসেছি। সম্প্রীতির সাফল্যে খুশি তার স্কুলের শিক্ষিকা, সহপাঠীরাও। মাথাভাঙা গার্লস হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা দাস জোয়ারদার বলেন, “পঞ্চম শ্রেণি থেকে সম্প্রীতি আমাদের স্কুলে পড়ছে। বরাবর ক্লাসে প্রথম স্থান ওর দখলে থেকেছে। মাধ্যমিকে ভাল ফল করবে তা জানাই ছিল। জেলায় সম্ভাব্য সর্ব্বোচ নম্বর পেয়েছে বলে অবশ্য আরও বেশি আনন্দ হচ্ছে।” |