আইপিএল-জয়ী কলকাতা নাইট রাইডার্সকে নিয়ে রাজ্য সরকারের ‘বিজয় উৎসব’ এবং ‘উন্মাদনা’কে কটাক্ষ করল প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। সেই সূত্রেই তারা প্রশ্ন তুলল রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও।
ইডেন গার্ডেন্সে মঙ্গলবার কেকেআরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই হাজির ছিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা এক বছর আগে যার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই ‘পরিবর্তন’ এসেছে। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের ওই মন্তব্যের সূত্র ধরেই প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। নাইট-বরণ অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বরানগরে দলীয় এক জনসভায় বিমানবাবুর বক্তব্য, “রাজ্যপাল আজকের অনুষ্ঠানে বলেছেন, এটাই প্রকৃত পরিবর্তন। উনি রাষ্ট্রপতি দ্বারা নিয়োজিত। কোন শাসক দলের কোন পরিবর্তন, তা নিয়ে উনি কথা বলছেন কী ভাবে? রাজনীতির সঙ্গেই বা মিশছেন কী ভাবে?”
গোটা অনুষ্ঠানে রাজ্যপালের উপস্থিতি এবং তাঁকে ঘিরে যা হয়েছে, তা নিয়েও তির্যক মন্তব্য করতে ছাড়েননি বিমানবাবু। তাঁর কথায়, “রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে সরকারের মন্ত্রী-সান্ত্রীরা বলছেন, ওরে গর্ভনরকে নিয়ে আয়, গভর্নরকে নিয়ে আয়! এটা কোনও কথা হল! এক বার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের হাত ধরে টানছেন! কখনও রাজ্যপাল আবার মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে টানছেন! এটা কোনও সংসদীয় রীতি?”
রাজ্য কোষাগারের এত টানাটানির মধ্যেও আইপিএল-জয়ীদের সংবর্ধনার পিছনে সরকারি ‘খরচ’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। গোটা দিনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আলিমুদ্দিনে প্রশ্নের জবাবে প্রথমে বিমানবাবু বলেন, তিনি কোনও মন্তব্য করতে চান না। পরে নিজেই বলেন, “এর মধ্যে দিয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিই প্রতিফলিত হচ্ছে। এক দিকে সরকার বলছে অর্থাভাব, রাজ্য কোষাগারের দৈন্যদশা। ভালবাসা, আন্তরিকতা ছাড়া জয়ী দলকে কিছু দেওয়ার নেই। অথচ খেলোয়াড়দের সোনার হার পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে! আমরা তো সে কালের মানুষ। খেলাধুলোর সঙ্গে ছোটখাটো স্পনসররা থাকে। কিন্তু এই খেলা তো আর সাধারণ পর্যায়ে নেই। আইপিএলকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক পর্যায়ে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এই টাকা কোথা থেকে আসছে, তা সরকারের দেখা উচিত।” বিমানবাবুর মতে, “কিন্তু তার থেকেও উদ্বেগজনক ঘটনা যে, রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীও এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন।” পয়সার বিনিময়ে খেলতে-আসা বিদেশি ক্রিকেটার-সমৃদ্ধ কেকেআরের জয়কে তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার কেন ‘মা-মাটি-মানুষের জয়’ হিসাবে দেখাতে চাইছে, তা নিয়ে কটাক্ষ করে বরানগরের সভায় বিমানবাবু দাবি করেছেন, রাজ্যের শাসক শিবিরের এই পৃষ্ঠপোষকতার জন্য কারা টাকা জোগাচ্ছে, সে সবই মানুষকে জানাতে হবে। আলিমুদ্দিনে বিমানবাবুর কাছে প্রশ্ন ছিল, সারা দিন যা হয়েছে, তা কি ‘বাঙালি সংস্কৃতি’র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত? সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের জবাব, “যার যেমন রুচি, সে তেমন করছে!” |