রাজ্যে পাশের হার ৮১.০৬ শতাংশ।
আর জেলবন্দি পরীক্ষার্থীদের পাশের হার ৯৭ শতাংশ।
অন্তত মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের দিনে জেল-এর ‘সংশোধনাগার’ নাম যেন সার্থক। রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারে বসে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন ১১১ জন। তাঁদের মধ্যে ১০৮ জনই সফল। তাঁদের বয়স ২০ থেকে ৪৭ বছর।
আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন সাত জন। সবাই সফল। অর্থাৎ সেখানে পাশের হার ১০০ শতাংশ। পাঁচিল ঘেরা একঘেয়ে পরিবেশে এই পাশের খবর যেন এক রাশ আলো নিয়ে এসেছে। জেলের ভিতরে যে বেশ খুশির হাওয়া, তা জানিয়েছেন সুপার মধুসূদন সর্দারই। তিনি জানান, এঁদের মধ্যে বেশি নম্বর পেয়েছেন টিঙ্কু মণ্ডল (৩৭২)। এ ছাড়াও সফলদের মধ্যে আছেন সোমাশ্রী দাস (৩৪২), রীনা দেব (৩৩১), স্বাতী নন্দী (৩২৯), বানো আনসারি (২৯৯), সুলতানা খান (২৯৮), সোমা দাস (২৯৩)।
জেল সূত্রের খবর, রাজ্য স্তরের কবাডি চ্যাম্পিয়ন টিমের সদস্য ছিলেন টিঙ্কু। এখনও বছরখানেক সাজা খাটতে হবে। সেটা যদি মকুব হয়ে যায়, বাড়ি ফিরে লেখাপড়ায় আরও মন দিতে চান টিঙ্কু। ওই জেলের অন্য পরীক্ষার্থী রীনা দেবের বয়স এখন ৪৭। পাশের খবর পেয়ে তিনি সুপারকে জানান, বাড়িতে থাকলে হয়তো সংসারের চাপে লেখাপড়া হতই না। জেলে থাকতে থাকতে মাধ্যমিক দেওয়াই মনস্থ করেন। জেলে আসার কয়েক মাসের মধ্যেই মা হন সোমাশ্রী দাস। মেয়ে সামলে, সেলাই করে পড়াশোনা চালিয়ে এখন তিনি মাধ্যমিক পাশ।
জেল সুপার মধুসূদনবাবু বলেন, “এদের মনে উৎসাহ ছিলই। আমি একটু উস্কে দিয়েছি।” তিনি জানান, এ ব্যাপারে তাঁদের খুব সাহায্য করেছেন বেলুড় মঠের সারদাপীঠের সম্পাদক স্বামী দিব্যানন্দ। তিনিই উদ্যোগী হয়ে বই-খাতা কিনে দিতেন। নিয়ম করে নরেন্দ্রপুর বা বেলুড়ের শিক্ষকদের পাঠাতেন।
প্রেসিডেন্সি জেলেও ১০ জন পরীক্ষার্থীই পাশ করেছেন। বহরমপুর জেলের ২১ জন পরীক্ষার্থীর সকলেই উত্তীর্ণ হয়েছেন। ইংরেজি, অঙ্ক ও ভৌতবিজ্ঞানে লেটার-সহ সানি শেখ পেয়েছেন ৫২১। মেদিনীপুর জেলেও ১৬ জন পরীক্ষার্থীর সকলেই উত্তীণর্র্ হয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের কিশলয় হোমের গোপাল মণ্ডল ও সুবীর আচার্য এ বার মাধ্যমিক পাশ করল প্রথম বিভাগে। গোপাল পেয়েছে ৪৬১ এবং সুবীর পেয়েছে ৪২০।
জেলের সফল পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মহাকরণে তিনি বলেন, “ওঁরা যাতে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে পারেন, তার বন্দোবস্ত করা হবে।
|
(প্রতিবেদন: সংবিদা লাহিড়ী, শুভাশিস সৈয়দ, বরুণ দে, অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য) |