এত দিন সব পরীক্ষায় সে প্রথম হয়েছে। তা বলে মাধ্যমিক! ভাবেনি হুগলির চন্দননগর শ্রী অরবিন্দ বিদ্যামন্দিরের ছাত্র সুহার্ত মল্লিক।
অথচ সেটাই হয়েছে। ৬৭৬ পেয়ে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধাতালিকায় সবচেয়ে উপরে নাম রয়েছে সুহার্তর। টিভিতে সকালে খবর দেখে তাই প্রথমটায় বিশ্বাস হয়নি চুঁচুড়ার ষণ্ডেশ্বরতলা দত্ত লেনের মল্লিক পরিবারের। বাবা সুব্রত মল্লিক পুলিশকর্মী। কালনায় কর্মরত। তবে, মঙ্গলবার বাড়িতেই ছিলেন। সুহার্তের কথায়, “ফল ভাল হবে জানতাম। কিন্তু প্রথম হব ভাবিনি।” সে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিয়েছে চন্দননগরের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে। বড় হয়ে সে চায় ইঞ্জিনিয়ার হতে।
মাধ্যমিকের ফলে কলকাতাকে আরও এক বার টেক্কা দিয়েছে জেলা। মেধা তালিকার প্রথম তিন স্থানেও কলকাতার কেউ নেই। শীর্ষে হুগলি। আর ৬৭৫ নম্বর পেয়ে যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলের ছাত্র শৌর্য রায় এবং জামালপুর হাইস্কুলের সুপ্রভ ঘোষ।
শৌর্য এ বার প্রথম হওয়ারই স্বপ্ন অবশ্য দেখেছিল। এক নম্বরের জন্য স্বপ্ন সত্যি হয়নি। বাবা-মা দু’জনেই চাকরি করেন। শৌর্যর মন খারাপ সদ্য প্রয়াত কাকা পার্থ রায়ের জন্য। বলল, “কাকার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল মাধ্যমিকে প্রথম তিন জনের মধ্যেই থাকব।” অর্থনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখা শৌর্য জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার সাফল্য কাকাকেই উৎসর্গ করেছে। |
মাত্র এক নম্বরের জন্য প্রথম না হওয়ার একটু আক্ষেপ রয়েছে সুপ্রভরও। মা অর্চনা ঘোষ প্রধান শিক্ষিকা। বাবা, সিপিএমের জামালপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক সময় ঘোষ দলের সর্বক্ষণের কর্মী। ছ’জন গৃহশিক্ষক পড়িয়েছেন সুপ্রভকে। দাদা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। আর সুপ্রভ চায় ডাক্তার হতে। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তমকুমার চৌধুরী বলেন, ‘“জামালপুরকে ও গর্বিত করেছে।”
৬৭৩ পেয়ে জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র অর্পণ ঘোষ এ বার তৃতীয় স্থানে। জেলা স্কুলেই প্রথম শ্রেণি থেকে পড়া এবং বরাবর প্রথম হওয়া, ক্রিকেট পাগল অর্পণ ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চায়। বাবা ধীরাজমোহনবাবু ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক। লাটাগুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে রসায়নের শিক্ষিকা, মা শর্মিলাদেবীর কাছে বিজ্ঞান ও অঙ্কের তালিম নিয়েছে অর্পণ।
মেধা তালিকার প্রথম তিনে নাম না থাকলে কী হবে, ৬৭০ নম্বর পেয়ে পঞ্চম স্থান দখল করে রাজ্যে এ বার মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছে বাঁকুড়া মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অনন্যা মণ্ডল। তার ইচ্ছা ডাক্তার হয়ে গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা করার। বাবা ষষ্ঠিচরণ মণ্ডল রাজ্য সরকারের কর্মী। ফল শোনার পরে অনন্যার প্রতিক্রিয়া, “ক্লাস ফোরে এক বার প্রথম হয়েছিলাম। এ বার অন্তত মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছি। খুশি তো হবই।”
|
(প্রতিবেদন: রানা সেনগুপ্ত, সুশান্ত বণিক, তাপস ঘোষ, অনির্বাণ রায় ও রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়) |