|
|
|
|
পুরকথায় পাঁশকুড়া/৩ |
পুর-শহর হয়ে ওঠা ঢের বাকি |
আনন্দ মণ্ডল • পাঁশকুড়া |
পাকা রাস্তা, পথবাতি, পরিস্রুত পানীয় জল, নিকাশি-সাফাইয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। একটা পুর-শহরে নাগরিকদের এ-সবই ন্যূনতম চাহিদা। ১০ বছর হল পুরসভা হয়েছে পাঁশকুড়া। পরিষেবার প্রশ্নে এবং পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পাঁশকুড়ার পুর-কর্তৃপক্ষের গত ১০ বছরের কাজকর্ম কিন্তু খুশি করতে পারেনি পুরবাসীকে। এই দশ বছরের মধ্যে ৫ বছর করে পুর-ক্ষমতায় থেকেছে বাম এবং তৃণমূল-জোট। দু’তরফের কাজের তুলনাই আসছে প্রাক-পুরভোট আলোচনায়।
পুরসভার তরফে রুটিন-মাফিক ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে কিছু পাকা রাস্তা, পথবাতি ও পানীয় জলের অস্থায়ী ব্যবস্থা হলেও শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সাফাই-ব্যবস্থা চালুই হয়নি। শেষ ৫ বছরে পুর-ক্ষমতায় আসীন তৃণমূল ও কংগ্রেস জোটের বোর্ড জঞ্জাল-সাফাইয়ের পরিকাঠামো-প্রস্তুতিতে অবশ্য প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা খরচ করে ফেলেছে। কিন্তু সাফাই চালু হয়নি। একই ভাবে পুর-ভবন বা এক সময়ে প্রস্তাবিত হাসপাতাল তৈরির কাজও এগোয়নি। শহরের বাসিন্দাদের অবসর বিনোদনের জন্য পার্ক কিংবা খেলাধুলার মাঠ তৈরির ক্ষেত্রেও পুরসভার উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
স্টেশনবাজার, পুরাতন বাজার, প্রতাপপুর, নারান্দার মতো এলাকা যথেষ্টই ঘনবসতিপূর্ণ। রানিহাটি, চাপাডালি, রূপদয়পুর, গড়পুরুষোত্তমপুর, জপড়া, তিলন্দপুর, পশ্চিমকল্লা পুর-এলাকায় এখনও অনেকটাই গ্রামীণ পরিবেশ। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের গৃহস্থালির আবর্জনা-বর্জ্য ছাড়াও বাজার এলাকার প্রচুর জঞ্জালও জমা হয় নিয়মিত। কিন্তু সাফাই হয় না। বহু ব্যবসায়ী আবার স্টেশনবাজার এলাকার সুরারখালেও আবর্জনা ফেলে নিকাশির বারোটা বাজাচ্ছেন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জঞ্জাল-সাফাই ব্যবস্থা চালু এবং ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির জন্য প্রথম বারের বাম-পুরবোর্ড ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৫ একর জমি চিহ্নিত করেছিল। গত পুর-নির্বাচনে বামেদের হটিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট। এই বোর্ড প্রস্তাবিত ডাম্পিং গ্রাউন্ডে গাড়ি যাতায়াতের জন্য একটি কালভার্ট-সহ পাকা রাস্তা তৈরির জন্য ১৯ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। জঞ্জাল সংগ্রহের জন্য গাড়ি ও যন্ত্রপাতি খরিদেও আরও প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু সাফাই-কর্মীই নিয়োগ হয়নি! ফলে যন্ত্র ও গাড়ি কেনাই সার। পুরপ্রধান আব্দুল হাকিম খানের অবশ্য দাবি, “সাফাই-কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলতে চলতেই পুরভোট এসে পড়েছে।” বিরোধী বামেদের অভিযোগ, কর্মী নিয়োগ নিয়েও তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরেই পুরো প্রক্রিয়াটা থমকে রয়েছে।
পুর-এলাকার অনেক জায়গাতেই রাস্তা পাকা হয়নি। আবার যে-সব রাস্তা পাকা হয়েছে, তার মান নিয়েও রয়েছে বহু প্রশ্ন। এমনকী পুরভোট ঘোষণার অব্যবহিত আগে কিছু রাস্তা পাকা করার হঠাৎ উদ্যোগ শুরু হয় বলেও অভিযোগ। বিরোধী দলনেতা সিপিএমের নকুল চাউলিয়ার আরও অভিযোগ, “তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে প্রকল্প মঞ্জুর ও বরাদ্দ হয়েছে বেশি। বাম কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডগুলি বঞ্চনার শিকার হয়েছে। পথবাতির ক্ষেত্রেও এই বৈষম্য হয়েছে।” স্টেশনবাজার এলাকায় বাহারি ও ব্যয়সাপেক্ষ, অথচ উপযোগিতার দিক থেকে খাটো ত্রিফলা-বাতি লাগানো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এত দিনেও পুর-ভবন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। কাজ চলছে সেই ত্রাণ-দফতরের ঘর ভাড়া নিয়ে। অথচ পুরভবন তৈরির উদ্যোগও বামবোর্ডের আমলেই। পুরাতন বাজার সংলগ্ন ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ৫ একর জমি চিহ্নিত হয়েছিল পুরভবন ও হাসপাতালের জন্য। কিন্তু পরের তৃণমূল-জোটের বোর্ড মধুসূদনবাড়ে তমলুক রেলগেটের কাছে পুরভবন তৈরির নতুন পরিকল্পনা করে। ৯ লক্ষ টাকা খরচ করে ১৩ ডেসিমেল জমি কেনা হয়েছে তিন বছর আগে। কিন্তু ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়নি। অথচ রাজ্য সরকার এ জন্য ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দও করেছিল। পুরপ্রধানের জবাব, “পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।” এ দিকে, ২০১০-এর এপ্রিল থেকে পুরবাসীর কাছে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় শুরু করেছে পুরবোর্ড। এ ছাড়া ট্রেড লাইসেন্স-সহ অন্য কয়েকটি খাত মিলিয়ে বছরে ১২-১৩ লক্ষ টাকা পুরসভার নিজস্ব আয়। কিন্তু নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বামবোর্ডের আমলে তৈরি বাসস্ট্যান্ড তৃণমূল বোর্ডের আমলে চালু হওয়া ছাড়া গত ৫ বছরে উল্লেখযোগ্য আর কিছু হয়নি বলেই অভিযোগ। হাসপাতাল, পার্ক, কমিউনিটি হল তৈরির দাবিও থেকে গিয়েছে দাবি হয়েই। পুরপ্রধানের অবশ্য বক্তব্য, “বামবোর্ডের আমলে বাসস্ট্যান্ডের জন্য নেওয়া ব্যাঙ্ক-ঋণ পরিশোধ খাতেই মোটা টাকা চলে যাচ্ছে। তবে এ বার হাসপাতাল-পার্ক তৈরির পরিকল্পনা হচ্ছে।”
ক্ষমতায় যারাই আসুক, আগামী ৫ বছরে পরিকাঠামো ও পরিষেবার উন্নয়নে কতটা কী কাজ হয়তার উপরেই নির্ভর করবে পাঁশকুড়ার সত্যিকারের পুর-শহর হয়ে ওঠা। |
|
|
|
|
|