|
|
|
|
লড়াইয়ে ‘একা’ তমালিকা, ‘পরিবর্তন’ দেখছে তৃণমূল |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
সেই ১৯৯৭-এ পুরসভা গঠনের সময় থেকে তিন দফায় টানা ১৫ বছর হলদিয়ার পুরপ্রধান। কবি ও পত্রিকা সংগঠক। রাজ্যের শিল্পী-সাহিত্যিক মহলে পরিচিত।
কিন্তু সিপিএমেরই নেতা-কর্মীদের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে বলে থাকেন, রাজনীতিক হিসাবে এত দিনেও সে ভাবে ‘স্বতন্ত্র পরিচিতি’ গড়ে ওঠেনি তমালিকা পণ্ডাশেঠের। শিল্প শহরের একদা ‘শেষকথা’, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ স্বামী লক্ষ্মণ শেঠেই ‘ছায়াচ্ছন্ন’ থেকেছেন। পুরপ্রধান পদ-প্রাপ্তি বা দলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হওয়াও ‘স্বামী-সৌজন্যে’ বলে গুঞ্জন দলের একাংশে। নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে জড়িয়ে লক্ষ্মণবাবু জেলে। হলদিয়ার পুরভোটের আগে জামিন পেতে আর্জি জানিয়েছিলেন হাইকোর্টে। আবেদন মঞ্জুর হয়নি। এই প্রথম তাই পুরভোটের লড়াই তমালিকাকে একাই লড়তে হচ্ছে। লড়াইয়ে ‘সাফল্য’ মানে লক্ষ্মণ-জায়া পরিচয়ের ‘গণ্ডি’ ভেঙে রাজনীতিতেও স্বতন্ত্র-পরিচয় প্রতিষ্ঠা। কিন্তু লড়াই যে ‘কঠিন’, একান্তে মানছেন সিপিএম নেতারাও। এমনকী, তমালিকার কাউন্সিলর হওয়া নিয়েও ‘সংশয়’ কাটছে না। |
|
ভোটের প্রচারে তমালিকা পণ্ডাশেঠ হলদিয়ায়। ছবি: আরিফ ইকবাল খান |
গত বিধানসভা ভোটে লক্ষ্মণবাবু ছিলেন। কিন্তু মহিষাদল থেকে স্ত্রী-কে জেতাতে পারেননি। বিধানসভা ভোটে হলদিয়া পুর-এলাকার ওয়ার্ড-ভিত্তিক ফলের বিশ্লেষণও বাম নেতৃত্বকে উদ্বেগে রাখার পক্ষে যথেষ্ট। ২৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টিতেই এগিয়ে তৃণমূল। নন্দীগ্রাম-পর্বের মধ্যেও ২০০৭-এর পুর-নির্বাচনে ১৯টি ওয়ার্ডে জিতেছিলেন বাম-প্রার্থীরা। ৭টি ওয়ার্ডে বাম-বিরোধীরা। বিধানসভার ফলাফলে বামেরা তাঁদের দখলে থাকা ৮টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েন। শিল্পতালুক, উদ্বাস্তু কলোনি, বন্দর আবাসন-সহ পুর-শহরের বিভিন্ন বর্গের বসবাসের এলাকায় বামেদের ভোট কমেছিল। এ বার আবার হলদিয়ায় ভোট পরিচালনার দায়িত্ব বর্তেছে বিধানসভা ভোটের মতো ‘পরীক্ষা’য় সফল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর উপরে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব তাই জোর গলায় দাবি করছেন, পুর-ক্ষমতায় ‘পরিবর্তন’ আর মাত্র কয়েকটি দিনের অপেক্ষা।
বাম-নেতারা এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’কেই প্রচারে তুলে ধরছেন। তমালিকারও বক্তব্য, “প্রকাশ্য প্রচারে তৃণমূল বাধা দিচ্ছে। পতাকা ছিঁড়ে দিচ্ছে। আমি কর্মীদের কোনও সংঘর্ষে না-যেতে অনুরোধ করেছি।” এর পরেও অবশ্য তাঁর দাবি, “লক্ষ্মণ শেঠদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জবাব ভোটেই দেবেন মানুষ।” পাশাপাশিই বাম-নেতারা অঙ্ক কষছেন ভোট ভাগের। মনে করাচ্ছেন, গত বছর বিধানসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিল তৃণমূলের। এই পুরভোটে জোট ভেঙেছে। শরিকি সম্পর্ক তিক্ত থেকে তিক্ততর হয়েছে।
পুরভোটের ময়দানে কংগ্রেস ও বিজেপি-র এই ভোট কাটাকাটির সম্ভাব্য হিসাব নিয়ে কিছুটা ‘উদ্বেগ’ রয়েছে তৃণমূল শিবিরেও। বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল দু’পক্ষই প্রার্থী দিয়েছে ২৬টি ওয়ার্ডেই। কংগ্রেসের প্রার্থী রয়েছে ১৭টি ওয়ার্ডে, বিজেপি-র ১৮টিতে। শিল্প-শহরে অবশ্য এই দু’দলের ট্রেড ইউনিয়নগত অস্তিত্ব তেমন চোখে পড়ে না। তাই এই দু’দল ভোটে দাগ কাটতে পারবে না বলেই দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। ওই দাবির পাশাপাশিই অবশ্য অন্তর্দলীয় ‘কোন্দল’ কিছুটা ভাবনায় রেখেছে তাঁদের। প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিধায়ক শিউলি সাহা যে ভাবে প্রকাশ্যেই সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ‘একাধিপত্য’ কায়েমের অভিযোগ করেছিলেন, তাতে খানিকটা ‘বিড়ম্বনা’য় ছিল প্রধান শাসকদল। তবে তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব কড়াহাতে শিউলির ‘বিক্ষোভ’ দমন করেছেন। প্রকাশ্যে সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষোভ প্রকাশের জন্য শিউলির কাছে ‘কৈফিয়ৎ’ও চাওয়া হয়েছিল। যার ফলে ‘উজ্জীবিত’ শুভেন্দু-শিবির। ফলে দলের ‘বিক্ষুব্ধ’দের কেউ কেউ কংগ্রেস-বিজেপি’র আশ্রয়ে গিয়ে নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গে নেমেছেন বলে যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে তৃণমূলের অন্দরে, তার তোয়াক্কা করছেন না তাঁরা।
সরকারে তৃণমূলের জোট শরিক কংগ্রেসের অভিযোগ, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে শুরু করে প্রচার প্রায় সব ক্ষেত্রেই তারা সিপিএমের থেকেও বেশি ‘বাধা’ পাচ্ছে শাসকদলের কাছে। অভিযোগ উড়িয়ে শুভেন্দু দাবি করেছেন, “প্রচারে বাধা, সন্ত্রাসের অভিযোগ পুরোটাই নাটক। বামেরা ক্ষমতাচ্যুত হবে জেনে আগে থেকেই কাঁদুনি গেয়ে রাখছেন। সঙ্গী হয়েছে ওঁদের দোসরেরা।” দীপা দাশমুন্সি, অধীর চৌধুরীর মতো কংগ্রেস সাংসদদের হলদিয়ায় প্রচারে আসাকে কটাক্ষ করে সাংসদের মন্তব্য, “রায়গঞ্জ, মুর্শিদাবাদ থেকে মার্কসবাদী কংগ্রেসকে নিয়ে এসেও লাভ হবে না। ২৬-০ ফলেই জিতব আমরা।”
দেখার, ২৬-০ দাবির ‘অন্তরায়’ হতে পারেন কিনা লক্ষ্মণ-জায়া। |
|
|
|
|
|