আর কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। আজ বুধবারই জানা যাবে বিশ্বনাথন আনন্দ পর পর তিন বার বিশ্ব দাবা খেতাব পাবে কি না। আনন্দের পক্ষে আর বিপক্ষে কী হিসেব কাজ করতে পারে, জানতে চান অনেকেই। আমার অঙ্ক এ রকম:
পক্ষে
১) র্যাপিড দাবায় গোটা বিশ্ব আনন্দকে সমীহ করে। ফলে, গেলফাঁ কিছুটা টেনশনে থাকবে।
২) এমন স্বল্পমেয়াদি গেমে বাজিমাতের অন্যতম শর্ত হল দাবাড়ুকে বরফশীতল নার্ভ দেখাতে হবে। কোনও পরিস্থিতিতেই চাপে রয়েছেন, শরীরী ভাষায় সেটা বিপক্ষকে দেখানো চলবে না। আনন্দ বরাবর ঠান্ডা। জিতলেও যেমন মুখ, হারলেও তা-ই। নার্ভের লড়াইয়ে গেলফাঁর চেয়ে অবশ্যই এগিয়ে।
৩) এই পর্যায়ের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতায় আনন্দ এগিয়ে। সব মিলিয়ে পাঁচ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেলছে। সেখানে গেলফাঁর এটা প্রথম বার।
৪) র্যাপিড দাবার যুদ্ধে আনন্দ অনেক এগিয়ে। ৩৫ বারে আনন্দ জিতেছে ১১ বার। হেরেছে মাত্র এক বার। লাইটনিং বা ব্লিৎজ দাবাতেও এগিয়ে আনন্দ। সাতটা গেমে তিনটে জিতেছে। হারেনি।
৫) দু’জনেই চল্লিশোর্ধ্ব। কিন্তু গত আট-দশ বছর ধরে বিশ্ব দাবায় আনন্দের যে রকম কর্তৃত্ব, তার অর্ধেকও নেই গেলফাঁর। ফলে, প্রয়োজনে সাত-আট ঘণ্টা খেলারও ধকল, ক্লান্তিকে উপেক্ষা করার মানসিকতা আনন্দেরই বেশি থাকার কথা। গেলফাঁর এ ক্ষেত্রে ‘প্ল্যান এ’ না খাটলে ‘প্ল্যান বি’ রয়েছে কি না আমার সন্দেহ আছে।
বিপক্ষে
১) চুরানব্বইয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মিটে গাতা কামস্কি আর আটানব্বইয়ে করপোভের কাছে টাইব্রেকেই হেরেছিল আনন্দ। ফলে আনন্দের মনের কোথাও খচখচানি থাকতে পারে, এই টুর্নামেন্টেই কিন্তু অতীতে দু’বার এই পর্যায়ে হেরেছি। |
২) গেলফাঁর বিরুদ্ধে বারো রাউন্ডে আনন্দ তেমন প্রাধান্য দেখাতে পারেনি। গেলফাঁ টাইব্রেকও যত বেশি টানতে পারবে, তত চাপ বাড়বে আনন্দের ওপর। তাতে আচমকা ভেঙে পড়তে পারে র্যাপিড দাবার সম্রাটও। যেমন ক্লে কোর্টেও নাদাল এক-এক সময় হেরে যায় জকোভিচ বা ফেডেরারের কাছে।
৩) এ বারে বারো গেমের যে ক’টা তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি গড়িয়েছে, আনন্দকে কিন্তু ক্লান্ত দেখিয়েছে। টাইব্রেকে প্রয়োজনে সাত-আট ঘণ্টাও খেলতে হতে পারে তাঁকে।
৪) র্যাপিড দাবায় আক্রমণাত্মক চাল দেওয়াটা ভীষণ জরুরি। এ বার বারো গেমে আনন্দকে বেশি রক্ষণাত্মক লেগেছে গেলফাঁর তুলনায়। এটা রাতারাতি আনন্দ কতটা পালটে ফেলতে পারবে, আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
৫) আনন্দ যেন কিছুটা হোমসিকনেস-এ ভুগছে। সেটা মোক্ষম সময়ে ওর খেলার ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে সেই প্রশ্নও কিন্তু আছে।
বুধবার দুপুর দেড়টা থেকে ২৫বি পার্ক স্ট্রিটে বড় পর্দায় আনন্দ বনাম গেলফাঁ বিশ্ব খেতাবি লড়াইয়ের টাইব্রেকারের সরাসরি সম্প্রচার। |