অভিভূত বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না। বলতে হবে আশ্চর্যান্বিত। আইপিএল ফাইনাল জিতলে ভালবাসার অত্যাচার যে এই পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, ধারণাতেই ছিল না লক্ষ্মীরতন শুক্লের। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে বাড়িতে ফিরতে গিয়ে দেখেন, বাড়ির সামনে হাজারখানেক জনতা। গোটা পাড়া ভেঙে পড়েছে। টানা পাঁচ বছর শাহরুখ খানের টিমের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা আনন্দবাজারের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল।
প্রশ্ন: বিদেশের ফুটবলে কাপ জিতলে হুডখোলা বাসে ফুটবলারদের ঘোরানো রেওয়াজ। ওয়াংখেড়েতে কাপ জেতার পরে ধোনিদের হুডখোলা বাসে ঘোরানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও আইপিএল জয়ী টিমের এ ধরনের সংবর্ধনা এই প্রথম। অভিজ্ঞতাটা একটু বলবেন?
লক্ষ্মী: অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা, সারা জীবন মনে রেখে দেওয়ার মতো। ২৯ মে দিনটা কোনও দিন ভোলা যাবে না। ভবিষ্যতে নাতি-নাতনিদের বলতে পারব, কী ভাবে আমাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। শাহরুখ খানের সঙ্গে প্রকাশ্যে নেচেছিলাম এক মঞ্চে। |
প্র: ইডেনে শাহরুখের সঙ্গে পা মেলাতে কেমন লাগছিল?
লক্ষ্মী: শাহরুখ বারবার আমার হাত ধরে টানছিল। কিন্তু আমি খুব ভাল নাচতে পারি না। মনোজ পারে। দেবু পারে। ওরা নাচছিল। আসলে শাহরুখ খুব বড় মনের মানুষ। প্রতি ম্যাচের আগে আমাদের জন্য দুয়া করত। আর ফাইনালের দিন ও যে ভিডিওটা দেখায়, তা নিয়ে আমাদের কোনও ধারণা ছিল না। আইডিয়াটা শাহরুখের। শুনেছি, মিউনিখে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের আগে চেলসি ফুটবলারদের এ ধরনের ভিডিও দেখানো হয়েছিল। ভিডিওটা শেষ হল আমার বাবার কথা দিয়ে। বাবা বলল, জিতে আসতে হবে তোমাকে। কলকাতার ইজ্জত বাঁচাতে হবে। শাহরুখ খানের সম্মান রাখতে হবে। মা চলে গিয়েছেন আমার। বাবার ওই কথা শুনে চোখে জল এসে গিয়েছিল। সে জন্যই যখন আউট হয়ে ফিরলাম, মনোজকে বলেছিলাম আমি পারিনি। তুই কিন্তু শেষ করে আসিস। আমি গর্বিত, মনোজ কথা রেখেছে।
প্র: এ বছরই পুণেতে চলে যেতে চেয়েছিলেন আপনি। নিয়মিত টিমে সুযোগ পাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল। পরের বার কেকেআরে থাকছেন?
লক্ষ্মী: আজ বলতে বাধা নেই। আমি সত্যিই এ বছর অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিতে চলে যেতে চেয়েছিলাম। আমাকে আটকায় শাহরুখই। বারবার বলে তোমাকে আমরা কিছুতেই ছাড়ব না। তোমার মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট আছে। দেখে নিও এই নাইট রাইডার্স থেকেই তুমি আবার ইন্ডিয়া খেলবে। আমাদের ছেড়ে যেও না। শাহরুখের মতো স্টার যদি এই কথা বলে কোথাও না কোথাও মনে গভীর দাগ কাটে। এখন তো আর অন্য কোথাও যাচ্ছি না কারণ নাইটদের সঙ্গে আমার চুক্তি আগামী বছর পর্যন্ত।
প্র: সেমিফাইনাল ম্যাচের পর শাহরুখ নাকি আপনাকে প্রায় কোলে তুলেছিলেন?
লক্ষ্মী: হ্যাঁ। ফাইনালের পরেও ও আমাকে যে ভাবে জড়িয়ে ধরেছিল প্রায় আড়াই মিনিট ছাড়েনি। সেমিফাইনালের পর আমাকে বলেছিল, বলেছিলাম না তুমি ম্যাচ উইনার। টিমের লক্ষ্মী। বল পাচ্ছ না বলে দুঃখ কোরো না। বলেছিল, তোমার ১১ বলে ২৪-টা না হলে আমরা জিততাম না।
প্র: ফাইনালের দিন ভোররাত পর্যন্ত চলা পার্টির শাহরুখের মুডটা একটু বলবেন?
লক্ষ্মী: ও যে কী করছিল ও নিজেই জানে না। মাঠে তো মাঝে মাঝে কেঁদে ফেলছিল। আনন্দের কান্না। সবাইকে জড়িয়ে ধরে ধরে আদর করছিল। নিজেকে চিমটি কেটে দেখছিল যা ঘটেছে, সত্যি কি না। এত কাছ থেকে শাহরুখ খানকে না দেখলে জানতে পারতাম না মেগাস্টাররাও মানুষ। তাদেরও দুঃখ-কষ্ট আছে। আনন্দ আছে।
প্র: পরের বার যদি শাহরুখের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না ওঠে, নাইটরা কি ওয়াংখেড়েতে খেলবে?
লক্ষ্মী: আমি অন্তত মনে করি না। শাহরুখকে ঢুকতে না দিলে ওয়াংখেড়েতে খেলা উচিত নয় নাইট রাইডার্সের। ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিককে এ ভাবে ব্যান করা যায় না। ভারতীয় ক্রিকেটে সব ব্যাপারে মুম্বইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমি মুম্বইয়ের ঘটনা কাছ থেকে দেখেছি। বলতে পারি, শাহরুখের জায়গায় আমি থাকলেও একই কাজ করতাম। ও সুপারস্টার বলে লোকে ব্যাপারটার সুযোগ নিয়েছে। তা ছাড়া ওয়াংখেড়েতে খেলতে হবে কেন? শাহরুখের নিষেধাজ্ঞা না উঠলে ব্রেবোর্ন বা ডি ওয়াই পাটিলে খেলতে পারি আমরা, কিন্তু ওখানে নয়। কিছু আসে যায় না নাইটদের। আমরা সবাই শাহরুখের পাশে আছি।
প্র: এ বারের আইপিএলের পর লক্ষ্মীরতন শুক্ল কি জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নতুন করে দেখবে? লক্ষ্মী: নতুন করে দেখার তো কিছু নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমার পারফরম্যান্স দেখুন। আইপিএলে দেখুন, আমি কী করেছি না করেছি। নিশ্চয়ই জাতীয় দলে ফেরার কথা ভাবি। আমার বয়স তিরিশ। কেন ভাবব না? অন্তত দেড়শো ওয়ান ডে আমি জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারি বলে বিশ্বাস করি। আমার কাজ পারফরম্যান্স করে যাওয়া। আর সেটা নিয়মিত করবও। |