চা বাগানের কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কার্যত অনাহারে মৃত্যুর ঘটনায় অসম সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। গত কাল গুয়াহাটির নেডফি হাটে কমিশনের বিচারসভা বসেছিল। ‘ফুল কমিশন’ এর নেতৃত্বে ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান তথা ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কে জি বালকৃষ্ণণ। রাজ্য সরকারকে কমিশনের নির্দেশ, অনাহারে মৃতদের নিকটাত্মীয়র হাতে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণের অর্থ তুলে দিতে হবে। ‘ফুল কমিশন’ এ দিন মোট ১৭টি মামলার শুনানি করে।
ভুবনভ্যালি টি কোম্পানি লিমিটেডের মালিকানাধীন কাছাড় জেলার ভুবনভ্যালি চা বাগান ‘লক আউট’ করে গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে এই বছর ৮ ফেব্রুয়ারি অবধি বন্ধ রাখা হয়। একই সঙ্গে দিদারকুশ ও চেংজুর বাগান দু’টিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে তিনটি বাগানের মোট ৫০০ স্থায়ী ও শ’পাঁচেক অস্থায়ী কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়েন। অর্ধাহারে, অনাহারে, অপুষ্টিতে বাগানের অন্তত ১৩ জন বাসিন্দা মারা যান। অসুস্থ হয়ে পড়েন অন্তত ৫০ জন। বাগান খোলার পর আরও দুই বাগানকর্মীর মৃত্যু হয়। বরাক হিউম্যান রাইট্স প্রোটেকশন কমিটি বাগানের অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে একটি রিপোর্ট তৈরি করে। শেষ পর্যন্ত কাছাড় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাগান খোলে। তবে অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। এমনকী বাগানে ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবাও মিলছে না।
ভুবনভ্যালিতে অনাহার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পি কে চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়। রাজ্যের শুল্ক ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অজিত সিংহ এবং পি কে চৌধুরী বাগানকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, লক আউটের সময় বাগান কর্তৃপক্ষ কর্মীদের খাবার বা চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থাই রাখেননি। এমনকী বাগানে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রকল্পের অধীনে যে হাসপাতালটি রয়েছে সেখানেও কোনও চিকিৎসক বা নার্স ছিল না। গত কাল কমিশনের সামনে ভুবনভ্যালির অনাহার মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে শুনানির পর কমিশনের চেয়ারম্যান বালকৃষ্ণণ রাজ্য সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন। কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, অনাহারে মৃত দুই বাগান কর্মীর পরিবার পিছু দুই লক্ষ টাকা ও অন্য ১৩ জন মৃতের নিকটাত্মীয়কে এক লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। রাজ্য সরকার জানায়, বাগান কর্মীদের জন্য চা নিগমকে তারা খাদ্যশস্য দিয়েছিল। তা বন্টন হয়েছে কি না, সরকারকে তা খতিয়ে দেখতে বলেন বালকৃষ্ণণ। |