মূল ভূখণ্ডকে পিছনে ফেলে এগোলেন মণিপুরের ইসমত
ন্ত্রাসের জন্য তাঁর রাজ্যের খ্যাতি। তাঁর রাজ্য মানবাধিকার ভঙ্গের মামলায় নজির গড়েছে। গত তিন বছরে তাঁর রাজ্যে বছরের অর্ধেক দিন স্কুলে তালা ঝুলেছে। তাঁর রাজ্য এখন ‘মূল ভূখণ্ড’ বনাম উত্তর-পূর্বের লড়াইয়ের সেনাপতি। কার্যত নেতিবাচক দিক থেকেই খ্যাত মণিপুর এই মুর্হূতে ভারতসভায় ‘শ্রেষ্ঠ আসন’ পাওয়ার কথা ভাবার অবস্থাতেই নেই।
আর এই অবস্থাতেই মণিপুরের প্রত্যন্ত এক সংখ্যালঘু গ্রামের ছেলে, স্রেফ হারিকেন ও মোমবাতি সম্বল করে গোটা দেশের সবাইকে একেবারে পিছনে ফেলে সামনের সারিতে বসল। গতকাল প্রকাশিত হওয়া সিবিএসই পরীক্ষায় ৯৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে গোটা দেশের মধ্যে প্রথম হয়ে এমন ‘অঘটনই’ ঘটিয়ে ফেলেছেন মহম্মদ ইসমত। বয়সটা গড়পড়তা উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে অবশ্য বছর তিনেক বেশি, ২১।
হবে নাই বা কেন? থৌবাল জেলার লিলং হাওরেইবি গ্রামের বাসিন্দা বাবা মহম্মদ বশিরুর রহমানের নুন আনতে পান্তা ফুরোবার দশা। একে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। সেখানে বেতন পাওয়ার নির্দিষ্ট কোনও দিনক্ষণ নেই। তার উপর বন্ধের ঠেলায় বছরের অর্ধেক দিন স্কুল বন্ধই থাকে। বাড়িতে স্ত্রী, ছয় মেয়ে, এক ছেলে। এতজনের অন্ন সংস্থানের পরে ছেলেকে ভাল স্কুলে পড়ানোর ক্ষমতা তাঁর ছিল না। তাই বারবার স্কুল বদলাতে হয়েছে। স্থানীয় স্কুলে পাঠ শুরু করা ইসমত পরে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণী অবধি পড়ে। ফের স্কুল বদলে ইম্ফল সৈনিক স্কুল। সেখান থেকে দশম শ্রেণীতে ৯৪.২ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করার পরে ইম্ফলেই আরও ভাল স্কুলে পড়ার ইচ্ছা ছিল ইসমতের। ইসমতের কথায়, “কিন্তু, কিসমত্ সাথ দেয়নি। বাবার আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে ইচ্ছা পকেটে পুরে ফিরে আসতে হয়। অবশ্য পুরো হতাশ হতে হয়নি। আমার ফলাফল দেখে জেনিথ অ্যাকাডেমির পরিচালন সচিব এস এম সিংহ স্যার, আমায় বিনা পয়সায় পড়ার ব্যবস্থা করে দেন। স্কুল বাসের জন্যও আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি।”
স্কুলের সংবর্ধনায় ইসমত।
মেইতেই পাঙ্গাল বা মণিপুরি মুসলিম পরিবারের ছেলেটির এরপর জেদ চেপে যায়। তার কথায়, “আমার মধ্যে একটা অদ্ভুত জেদ কাজ করছিল। নিজেকে বোঝালাম আর্থিক ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু মনের জোরে কিছু একটা করে দেখাতে হবে। যাতে বাবার লড়াই, স্কুলের সহায়তার দাম দিতে পারি।” দাম দিয়েছেন বটে। অঙ্ক, রসায়ন, হোম সায়েন্স ও ফাইন আর্টস-এ পুরো একশোয় একশো। পদার্থবিদ্যায় ৯৭, ইংরাজিতে ৯৮। মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ইসমতের দখলে ৪৯৫। মণিপুর তো দূরের কথা, গোটা উত্তর-পূর্বের কোনও ছাত্রছাত্রীই এর আগে এমন কৃতিত্ব দেখিয়ে দেশের পয়লা নম্বর হতে পারেনি। ইসমতের কথায়, “ফল ভাল করব সেই আত্মবিশ্বাস ছিল। তবে প্রথম হয়ে মনে হচ্ছে স্বপ্নই দেখছি। আমার ফলাফল উত্তর-পূর্বে সেই সব মেধাবী ছাত্রকে উৎসর্গ করছি যাঁরা একটু সাহায্য ও সহানুভূতি পেলেই এভাবে জ্বলে উঠতে পারবে।”
অবশ্য, স্বপ্ন দেখা থামছে না এখানেই। ইসমতের পরিকল্পনা, দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে পড়াশোনা করবে। সেইসঙ্গে চলবে আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতি।
বাবা বশিরুর রহমান আপাতত আত্মহারা। অনটনের কথা চুলোয় যাক। আপাতত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, নেতা, পুলিশ সবাই যে তাঁর ছেলেকে মাথায় তুলে নাচছেন, সম্বর্ধনায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন---এমন দিন দুচোখ ভরে দেখে নিতে চান বশিরুর। তাঁর কথায়, “আমার খুশির সীমা নেই। কত কষ্ট করেছি। কতবার মনে হয়েছে, আর হয়তো পারব না। তারপরেও ছেলের পড়া বন্ধ হতে দিইনি। আলোর অভাবে মোমবাতি জ্বেলেই পড়েছে ইসমত। এখন আমি আত্মবিশ্বাসী, ও একদিন গোটা সমাজের নেতা হয়ে উঠবে। রাজ্যের এমন হাজার হাজার দরিদ্র ছেলেমেয়ে ইসমতের জেদ আর অধ্যবসায়ের কথা জেনে অন্ধকারের মধ্যেও আলোর দিশা পাবে।”
আজ ইসমতের স্কুলেই তাঁকে সংবর্ধনা দেন শিক্ষামন্ত্রী এম ওকেন্দ্র সিংহ। ইসমতকে ৫ লক্ষ টাকা ও জেনিথ অ্যাকাডেমিকে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১০ লক্ষ টাকা দেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.