শহর জনসমুদ্র, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস সামলাতে হিমশিম পুলিশ
য়ের উচ্ছ্বাস তো ছিলই। তার সঙ্গে মহাতারকাকে সামনে থেকে দেখার দুর্দম ইচ্ছে। এই দু’য়ের মিশেল মঙ্গলবার দুপুরে বাঁধভাঙা স্রোতের মতোই আছড়ে পড়ল ইডেন গার্ডেন্সে। সেই অভিঘাতে কার্যত খড়কুটোর মতো ভেসে গেল পুলিশের প্রতিরোধ। জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের শরিক হলেন শাহরুখ-মমতা-টিম কেকেআর।
শুধু ইডেন কেন, শাহরুখ খানকে কাছ থেকে দেখার আশায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই হাজরা মোড়, যদুবাবুর বাজার, এক্সাইড মোড় কিংবা মহাকরণের সামনে উপচে পড়েছিল মানুষ। কিন্তু হাজরা, যদুবাবুর বাজার বা এক্সাইড মোড়ে খোলা ট্রেলারে খেলোয়াড়েরা থাকলেও ছিলেন না মহাতারকা। সাময়িক ভাবে অনেকে হতাশ হয়ে পড়লেন ঠিকই। তার পরেই অবশ্য নতুন উদ্যমে জনস্রোতের বড় অংশটাই আছড়ে পড়ল ইডেনের দরজায়।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল, ইডেনে ঢোকার জন্য কোনও টিকিট লাগবে না। তাই শাহরুখ এবং বিজয়ী খেলোয়াড়দের স্বচক্ষে দেখার জন্য ভোর থেকেই লাইন পড়েছিল। বেলা ১০টার মধ্যেই ইডেন ভর্তি হয়ে যায় কানায় কানায়। কিন্তু তার পরেও ইডেনমুখী মানুষের ঢল দেখে রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কলকাতা পুলিশের কর্তারা। শাহরুখ মহাকরণে আসার পরে পরিস্থিতি অনেকটাই পুলিশের হাতের বাইরে চলে যায়।
হুড়োহুড়িতে পড়ে যাওয়া। হাজরায়। ছবি: সুমন বল্লভ
বেলা সাড়ে ১১টা থেকেই মহাকরণের ৬ নম্বর গেটের সামনে (রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উল্টো দিকে) কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেছিলেন ‘কিং খান’কে দেখতে। ভিড় বাড়ছে দেখে মহাকরণের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্তা এবং হেয়ার স্ট্রিট থানার কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করে। মহাকরণের সামনের রাস্তায় ‘গার্ড রেল’ বসাতে থাকে পুলিশ। এক সময় দেখা যায়, যত লোক ভিড় করেছে, তা সামলানোর মতো যথেষ্ট গার্ড রেলও নেই। ট্রাকে করে আরও গার্ড রেল আনিয়ে রাস্তা আটকে দেয় পুলিশ।
কিন্তু শেষ রক্ষা হল না তাতেও। খেলোয়াড়েরা দু’টি বাসে চেপে মহাকরণের সামনে আসতেই ব্যারিকেডের ভিতরে থাকা লোকজন দৌড়তে শুরু করেন মহাকরণের ভিআইপি গেটের দিকে। ওই গেটের পাশেই তৈরি হয়েছিল মঞ্চ। নিমেষের মধ্যে জনসমুদ্রের আকার নেয় মহাকরণের সামনের রাস্তা। শেষ মুহূর্তে মানবশৃঙ্খল গড়েও জনতাকে আটকানো যায়নি। বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ শাহরুখ আলাদা একটি গাড়িতে সেখানে পৌঁছন। মঞ্চের একেবারে কাছে গিয়ে শাহরুখকে দেখার জন্য তখন মরিয়া হয়ে উঠেছে জনতা। পুলিশকে টপকে মঞ্চের সামনে চলে এসেছেন তাঁরা। সেই ভিড় ঠেলেই বাসের দিকে এগোলেন মমতা এবং শাহরুখ। পৌনে একটা নাগাদ মানুষের সমুদ্র কেটে তাঁদের নিয়ে বাস চলল ইডেনের দিকে।
সেখানে তখন ঠাঁই-নাই অবস্থা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ দর্শকদের ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে। বাইরে দাঁড়িয়ে কয়েক হাজার মানুষ। পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা গলা ফাটাচ্ছিলেন ভিতরে ঢোকার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী ইডেনে ঢোকার সময়ে ওই দৃশ্য দেখে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে ডেকে একটি গেট খুলে দিতে বলেন। কিন্তু এত লোক ঢোকার জায়গা কোথায়? এক পুলিশ কর্তাকে বলতে শোনা যায়, “ভিতরে মেরেকেটে ৭০ হাজার লোককে ঢোকাতে পারি। কিন্তু ম্যাডাম (মুখ্যমন্ত্রী) যা চাইছেন, তাতে তো সওয়া লক্ষেরও বেশি লোক ঢুকে পড়বে!” আর এক জন পুলিশ কর্তাকে বলতে শোনা যায়, “ইডেনে বড় ম্যাচ হলে গোনাগুনতি টিকিট থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা তো বুঝতেই পারছি না কত লোক ঢুকেছে। আরও কত লোক ঢুকবে। ভিতরে কোনও ঘটনা ঘটলে সামলাব কী করে?”
ইডেনের বাইরে বিশৃঙ্খলা। ছবি: সুদীপ আচার্য
শেষ পর্যন্ত অবশ্য আবেগ-উচ্ছ্বাসের কাছে হার মানতে হল পুলিশকে। গেট ভেঙে, পুলিশকে ঠেলে হুড়মুড়িয়ে লোক ঢুকে পড়ল ইডেনে। মরিয়া পুলিশ এক বার চেষ্টা করেছিল লাঠি উঁচিয়ে লোক তাড়াতে। কিন্তু কে যেন নির্দেশ দিলেন, “ম্যাডাম লাঠিচার্জ করতে বারণ করেছেন, খেয়াল রাখবেন!” মানুষ যদিও পুলিশের লাঠির তোয়াক্কাও করেনি এ দিন। তবে হুড়মুড়িয়ে ঢোকার চেষ্টায় পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি যে তৈরি হয়েছিল, তা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই লালবাজারের কর্তাদের। ভিড়ের চাপে অনেকেরই জুতো-চশমা-মোবাইল হারিয়েছে। পড়ে গিয়ে অল্পবিস্তর জখমও হয়েছেন কেউ কেউ। অনেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন পরিবারের অন্যদের থেকে। এক পুলিশ কর্তা পরে বলছিলেন, “পুলিশ যেটুকু প্রতিরোধ করেছে, সেটুকুও না করলে অনেকেই পদপিষ্ট হতে পারতেন!”
শেষমেষ ইডেন থেকে বেরিয়ে শাহরুখ যখন হাত নাড়লেন জনতার উদ্দেশে, তখন অবশ্য সবার সব রাগ গলে জল। আন্দুলের বিদিশা দত্ত সকাল থেকে দাঁড়িয়েছিলেন যদুবাবুর বাজারের সামনে। ভিড়ের চাপে তাঁর এক পাটি জুতো খোওয়া গিয়েছিল। হাজরায় দাঁড়িয়ে বরাহনগরের কণিকা পাত্র হারিয়ে ফেলেছিলেন তাঁর সঙ্গীকে। শাহরুখ-দর্শন হয়নি কারওই। ইডেনের সামনে দাঁড়িয়ে প্রবল উষ্মা প্রকাশ করছিলেন ওঁরা।
কিন্তু শেষ লগ্নে মহাতারকাকে কাছ থেকে হাত নাড়তে দেখে আবেগ চেপে রাখতে পারেননি বিদিশা। শাহরুখের গাড়ি তখনও চোখের আড়াল হয়নি। এক বন্ধুকে মোবাইলে ধরলেন। ২২ বছরের তরুণীকে মনে হচ্ছিল ১০ বছরের কিশোরী, “মনে হল বিশ্বজয় করে ফেললাম। ঠিক আমার উল্টো দিকে শাহরুখ! ভাবা যায়!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.