লোকসান এড়ানোর তাগিদে অনেক সময়ে বিমানসংস্থাগুলি উড়ানে আসনসংখ্যার অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি করে থাকে। যার দরুন বৈধ টিকিট থাকা সত্ত্বেও যাত্রী বিমানে উঠতে পারলেন না এমন ঘটনাও ঘটে যায়। মঙ্গলবার যা ফের ঘটল কলকাতা বিমানবন্দরে।
এ দিন বৈধ টিকিটধারী ওই পাঁচ যাত্রীর এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে কাঠমান্ডু যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁদের বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি। পাঁচ জনকে বিকেলের উড়ানে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। কথা রয়েছে, আজ বুধবার সকালে তাঁদের দিল্লি থেকে কাঠমান্ডু পৌঁছে দেওয়া হবে।
এয়ার ইন্ডিয়া-কর্তৃপক্ষের যুক্তি, ১৪৫-এর পরিবর্তে ১৪০ আসনের বিমান ব্যবহার করতে গিয়ে এই সমস্যা হয়েছে। যদিও বিমানসংস্থারই এক কর্তা জানাচ্ছেন, “এক ঘণ্টা আগেও টিকিট বাতিল করলে প্রচুর টাকা ফেরত দিতে হয়। শেষ মুহূর্তে কিছু যাত্রী যদি টিকিট বাতিল করেন, সেই আশঙ্কায় সংস্থাগুলো হামেশা দু’-তিনটে বেশি টিকিট বিক্রি করে। কারণ, সে ক্ষেত্রে টিকিট বাতিল হলেও আসনটা ফাঁকা যাবে না।”
কিন্তু লোকসান এড়ানোর এই চেষ্টা যে মাঝেমধ্যেই ‘ব্যুমেরাং’ হয়ে যাচ্ছে, এ দিনের ঘটনা তা আর এক বার দেখিয়ে দিল। এ ভাবে বাড়তি টিকিট বিক্রি করাটা কি বেআইনি নয়?
ডিজিসিএ-র সর্বময় কর্তা ভরত ভূষণ দিল্লি থেকে এ দিন জানান, এ ব্যাপারে কোনও আইন এখনও তৈরি হয়নি। বিশ্ব জুড়েই বিমানসংস্থাগুলো এ ভাবে অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি করে থাকে। তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, বিমানে উঠতে না-পারা যাত্রীদের চাহিদামতো ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। সেই সংক্রান্ত নিয়ম-বিধি লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট বিমানসংস্থা শাস্তির মুখে পড়তে পারে।
অর্থাৎ বৈধ টিকিট থাকলেও যে কোনও যাত্রীর কপালে এই হয়রানি জুটতে পারে?
একটি বেসরকারি বিমানসংস্থার এক কর্তা বলেন, “প্রতিটি উড়ানে অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি হয় না। হয় বিশেষ কোনও রুটে, বিশেষ ধরনের বিমানে, বছরের বিশেষ কোনও সময়ে।” দীর্ঘ দিনের সমীক্ষায় যদি দেখা যায়, কোনও বিশেষ রুটের উড়ানে প্রায় রোজই দু’-তিনটে টিকিট বাতিল হচ্ছে, তখনই সেখানে বাড়তি টিকিট বিক্রি করা হয় বলে কর্তাটির দাবি। ফলে কোন রুটে, কোন দিন, কার জন্য দুর্ভোগ অপেক্ষা করে আছে, তা আগাম বলা শক্ত। তাই ওঁর পরামর্শ, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিমানবন্দরে পৌঁছে বোর্ডিং কার্ড নিয়ে বিমানে গ্যাঁট হয়ে বসে যান। এক বার আসনে বসে পড়া যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি কোনও বিমানসংস্থা নিতে চায় না।”
এ দিন বেলা ১টা ৫০ মিনিটে নির্ধারিত এয়ার ইন্ডিয়া’র কাঠমান্ডু-উড়ানের যাত্রী সুমিতা মজুমদার অবশ্য বন্ধুর সঙ্গে বিমানসংস্থার কাউন্টারে পৌঁছে গিয়েছিলেন ১২টা ১০ মিনিটে। সুমিতাদেবীর অভিযোগ, বেশ কিছুক্ষণ সেখানে তাঁকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এর পর বলা হয়, আসন ভরে গিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া’র তরফে জানানো হয়, সুমিতাদেবী এবং তাঁর মতো আরও চার জনকে দিল্লি হয়ে কাঠমান্ডু পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রাতে দিল্লিতে তাঁদের থাকার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। যদিও সুমিতাদেবীর অভিযোগ, “আমার পুরো একটা দিন নষ্ট হয়ে গেল। সেটা তো ওরা আর ফিরিয়ে দিতে পারবে না!”
এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের খবর: মুম্বইয়ে একটি এবং চেন্নাইয়ে সংস্থার দু’টি বিমান বিকল হয়ে পড়ে থাকায় উড়ানসূচিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই কখনও-সখনও বিমান বদলে ফেলতে হচ্ছে। বস্তুত সেই কারণেই এ দিন সুমিতাদেবীরা কলকাতা থেকে সরাসরি কাঠমান্ডু যেতে পারেননি বলে সংস্থা-সূত্রের দাবি। |