তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগে বাড়ছে রহস্য
তিন খুনে ধৃত সিপিএম নেতা
ক্রমেই জটিল হচ্ছে দুবরাজপুর ও খয়রাশোলে তিন তৃণমূল নেতা-কর্মী খুনের রহস্য। একটি খুনে জড়িত অভিযোগে ধরা হল সিপিএমের এক জোনাল নেতাকে। অন্য জোড়া খুনে অভিযোগ হল তৃণমূলেরই নেতা-সহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে।
সোমবার এক ঘণ্টারও কম ব্যবধানে খুন হন খয়রাশোলের তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর তিন নেতা-কর্মী। দুবরাজপুর শহরে সোমবার দুপুর ২টো নাগাদ গুলি করে মারা হয় তৃণমূল নেতা, কাঁকরতলা থানার বড়রা গ্রামের বাসিন্দা গোলাম সাব্বির কাদেরিকে। যিনি ব্লক তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীর লোক বলেই পরিচিত। ওই ঘটনার মিনিট চল্লিশের মধ্যেই দুবরাজপুর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে গুলিতে নিহত হন তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমান ও দলীয় কর্মী সুখেন্দু সরকার। এই দু’জন খয়রাশোলের প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি অশোক ঘোষের অনুগামী ছিলেন।
মঙ্গলবার সকালে তিন খুনের তদন্তে আসেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ এবং ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) বাসব তালুকদার। দুবরাজপুর ও খয়রাশোলের দু’টি ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে দুবরাজপুর থানায় তাঁরা বৈঠক করেন বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা এবং দুবরাজপুর, খয়রাশোল ও কাঁকরতলা থানার ওসিদের সঙ্গে। ঘটনাস্থল ঘুরে আইজি বলেন, “এ পর্যন্ত দু’জনকে গ্রফতার করা হয়েছে। আমরা সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছি।”
খয়রাশোলে তদন্তে আইজি গঙ্গেশ্বর সিংহ, ডিআইজি বাসব তালুকদার ও এসপি হৃষিকেশ মিনা। নিজস্ব চিত্র।
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, কাঁকরতলা থানা এলাকায় বসবাসকারী ওই তিন তৃণমূল নেতা-কর্মীর খুনের পিছনে দু’টি গোঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব, এলাকায় অবৈধ কয়লা কারবারের বখরা এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে নিয়ে বিবাদের সম্ভাবনারই ইঙ্গিত মিলেছিল। কিন্তু, দুবরাজপুর থানায় তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপাধ্যায়ের করা অভিয়োগের ভিত্তিতে সোমবার গভীর রাতে সিপিএমের খয়রাশোল জোনাল কমিটির সদস্য, পেশায় স্কুলশিক্ষক অঙ্গদ বাউড়িকে গ্রেফতারের পরে পরিস্থিতি অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই অভিযোগপত্রে অঙ্গদবাবু এবং কাঁকরতলা থানা এলাকার বাসিন্দা, সিপিএমের বড়রা লোকাল কমিটির সম্পাদক-সহ ১১ জনের নাম রয়েছে। অঙ্গদবাবু ছাড়াও ওই ১১ জনের মধ্যে শেখ সেলিম নামে এক অভিযুক্তকেও পুলিশ ধরেছে।
অন্য দিকে, আনিসুর রহমান ও সুখেন্দু সরকার হত্যাকাণ্ডে তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপাধ্যায়, বড়রা পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান কাঞ্চন অধিকারী-সহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার দুপুরে খয়রাশোল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন আনিসুরের ভাই আব্দুর রহমান। পুলিশের দাবি, মঙ্গলবার দিনভর অশোক মুখোপাধ্যায়ের মোবাইল বন্ধ থাকায় তাঁর হদিস মেলেনি।
জেলা সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে তাঁদের নেতাদের নাম ঢোকানো হয়েছে গোলাম কাদের হত্যাকাণ্ডে। এক নেতার প্রশ্ন, “আমাদের দলই যদি ওই ঘটনায় জড়িয়ে থাকে তা হলে আনিসুর রহমানের পরিবার কেন তৃণমূল নেতাদের নামে অভিযোগ করল? কেনই বা অশোক মুখোপাধ্যায়কে এখনও পুলিশ ধরল না?” সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, “নিজের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের আমাদের নেতাদের উপরে চাপিয়ে সামনের পঞ্চায়েত ভোট থেকে ফায়দা তোলার লক্ষ্যে এটা তৃণমূলের ঘৃণ্য চক্রান্ত। তা ছাড়া, গ্রেফতার হওয়া দলীয় নেতা অঙ্গদ বাউড়ি সোমবার ঘটনার সময় মোটরবাইক চালানোর লাইসেন্স নেওয়ার জন্য সিউড়িতে ছিলেন। আমরা এই চক্রান্তের জোরালো প্রতিবাদ করব।”
খয়রাশোলে প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি অশোক ঘোষ এবং দলের নেতা অশোক মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ অনেক দিনের। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে যুযুধান দুই গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে বসে মীমাংসাসূত্র বার করার চেষ্টা চালাচ্ছিল। সোমবার দুবরাজপুরের কোথাও দুই গোষ্ঠীর বৈঠক হওয়ারও কথা ছিল। সেই বৈঠক হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” আব্দুর রহমানও বলেন, “দাদা (আনিসুর) বলেছিল, সোমবার দুবরাজপুর আদালতে হাজিরা দেওয়ার পাশাপাশি অশোক মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বসার কথা। কিন্ত সেটা কী বিষয়ে আর কোথায়, কখন বৈঠক হয়েছে জানি না। তবে বেলা দুটো নাগাদ খবর পাই, বড়রা খেকে দু’টি গাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কিছু লোক দুবরাজপুরের দিকে যাচ্ছে। তখনই সন্দেহ হয়েছিল কিছু একটা ঘটতে পারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.