ছেলের শাবলের ঘায়ে মৃত্যু হয়েছে বাবার। আবার বাবার রডের আঘাতে নিহত হলেন ঘুমন্ত ছেলে। পারিবারিক বিবাদের জেরে সোমবার রাতে যথাক্রমে ভাতার ও কাঁকসায় এমনই দু’টি ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। প্রথম ঘটনার ক্ষেত্রে দু’জন গ্রেফতার হলেও দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে অভিযুক্ত পলাতক।
প্রায়ই মদ খেয়ে বাড়ি ফেরেন বাবা। সঙ্গে রয়েছে জুয়োয় আসক্তি। মাঝেমধ্যেই মাকে মারধরও করেন। এ সবের প্রতিবাদ করতেন যুবক ছেলে। সোমবার সন্ধ্যাতেও বাবা-ছেলের তুমুল বচসা হয়। তখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেও মাঝ রাতে বাড়ি ফিরে ঘুমন্ত ছেলের মাথায় রড দিয়ে মারেন বাবা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। সোমবার রাতে কাঁকসার ক্যানালপাড় এলাকায় এমনই ঘটেছে বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন নিহতের মা।
পুলিশ জানায়, নিহতের নাম দীপু চৌধুরী (২৪)। ঘটনার পর থেকেই তাঁর বাবা শচীন্দ্র চৌধুরী পলাতক। জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “নিহতের মা পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, তিনি ঘটনার সাক্ষী। পুলিশ শচীন্দ্রকে খুঁজছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শচীন্দ্র ও দীপু, দু’জনেই পানাগড়ের একটি গ্যারাজে গাড়ি সারাইয়ের কাজ করতেন। প্রতিবেশীদের দাবি, দীপু নিজের রোজগারের টাকা বাড়িতে দিলেও শচীন্দ্র সে সব মদ-জুয়ার পিছনে উড়িয়ে দিতেন। বাড়ি ফিরে স্ত্রী ললিতাদেবীকে মারধর, গালিগালাজও করতেন নিয়মিত। দীপু বেশ কয়েক বার বাবাকে এ সব করতে নিষেধ করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। উল্টে দীপুকেও গালিগালাজ করতেন শচীন্দ্র। সোমবার সন্ধ্যায় বাবার সঙ্গে বচসা হয় দীপুর।
ললিতাদেবী পুলিশকে জানান, রাত ১টা নাগাদ শচীন্দ্র বাড়ি ফিরে বারান্দায় রাখা একটি রড তুলে নিয়ে ঘুমন্ত দীপুর মাথায় মারেন। কিছু ক্ষণের মধ্যে মৃত্যু হয় দীপুর। বাড়ি ছেড়ে পালায় শচীন্দ্র। সকালে প্রতিবেশীরা বিষয়টি জানতে পারেন। ভিড় জমে যায় বাড়িতে। ললিতাদেবী প্রতিবেশীদের জানান, তাঁর স্বামীই ছেলেকে খুন করেছে।
পুলিশ সুপার জানান, রাত ১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটলেও পুলিশ খবর পায় প্রায় ৭ ঘণ্টা পরে। তার পরে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে পুলিশ ললিতাদেবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ সুপার বলেন, “ললিতাদেবী জানিয়েছেন, তাঁর সামনেই স্বামী ছেলেকে খুন করে পালিয়ে যায়। তাঁর কথার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।” পুলিশ এই ঘটনায় নিজে থেকেই একটি মামলা রুজু করেছে। তিনি জানান, অভিযুক্ত শচীন্দ্রের খোঁজে এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। যোগাযোগ রাখা হয়েছে আশপাশের থানার সঙ্গেও।
ভাতারের মাহাচান্দা পঞ্চায়েতের গর্দানমারি গ্রামের বাসিন্দা স্যামুয়েল হাঁসদা সোমবার রাত ৯টা নাগাদ বাবা পবনকে শাবল দিয়ে পেটালে তাঁর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ সুপার জানান, এর পরে স্যামুয়েল ও তাঁর স্ত্রী সুমি বাড়ির অন্য সদস্যদের উপরেও চড়াও হন। তাতে দু’জন গুরুতর আহত হন। তাঁদের ভাতার গ্রামিণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। স্যামুয়েল ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, পবনের কেনা মুরগির বাচ্চা স্যামুয়েলের পোষা বেড়াল খেয়ে ফেলাকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোলের সূত্রপাত। এ নিয়ে সুমির সঙ্গে তাঁর ননদের বচসা হয়। তার জেরেই এমন ঘটনা বলে পুলিশের অনুমান। |