প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরবঙ্গের ৪ জেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডুয়ার্সে শিলার আঘাতে ও গাছ চাপা পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও উত্তর দিনাজপুরে ঝড়ের সময়ে আঘাত লেগে অন্তত ২০০ জন জখম। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঝড়ে কমপক্ষে ২০ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে। ঘরদোর হারিয়ে বহু মানুষ আকাশের নীচে থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন পরিষেবা বিপর্যস্ত। বিদ্যুৎ না থাকায় পানীয় জল সরবরাহও বিঘ্নিত হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মৃতদের নাম সুরবালা রায় (৭১) ও অনুপ ডুংডুং (২৫)। সুরবালাদেবীর বাড়ি জলপাইগুড়ির মৌলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ মাটিয়ালিতে। ঝড়ের সময়ে বিন্নাগুড়ি সেনা ছাউনির একটি শেডের উপরে বড় গাছ পড়লে আহত হয়ে মারা যান সেনা জওয়ান অনুপবাবু। ঝড়ে বিঘের পর বিঘের শস্যহানি হয়েছে। |
ক্ষতি হয়েছে চা বাগানেরও। ডুয়ার্সের অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অন্তত ৫০০ গাছ উপড়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে খবর, রাত ৯টা নাগাদ ঝড় ওঠে। সেই সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। মাদারিহাটে লাইনের উপরে গাছ উপড়ে পড়ে। দূর থেকে তা দেখতে পেয়ে শিলিগুড়ি-আলিপুরদুয়ার প্যাসেঞ্জারের চালক ব্রেক কষলেও শেষ পর্যন্ত ট্রেনটির চারটি কামরা বেলাইন হয়ে যায়। কেউ হতাহত হননি। তবে এই ঘটনায় এনজেপি-আলিপুরদুয়ার শাখায় ৪টি ট্রেন বাতিল হয়। বীরপাড়ার উত্তরে গারুচিড়া এলাকায় থাকা বনবিভাগের দু’টি কটেজের টিনের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। কেউ আহত হননি। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত চার জেলার পুলিশ-প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী ক্ষতির বহর ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। |
ময়নাগুড়িতে দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি। |
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “দুর্যোগে বড় মাপের ক্ষতি হয়েছে। জেলাশাসকদের ক্ষতির হিসেব করতে বলা হয়েছে। দুর্গতদের ত্রাণ বিলি ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ শুরু হয়েছে।” ঝড়ের সময়ে রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া জলপাইগুড়ি সার্কিট হাউসেই ছিলেন। তিনি বলেন, “ক্ষতির মোকাবিলার জন্য মুখ্য সচিবকে অনুরোধ জানিয়েছি।” কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “কিছুদিন থেকে জলপাইগুড়ি জেলা-সহ উত্তরবঙ্গে সূর্যের তাপ বেশি ছিল। ছত্তিশগড় থেকে মণিপুর, মিজোরাম পর্যন্ত একটি নিম্নচাপের অক্ষরেখা তৈরি হওয়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে বেশি জলীয় বাষ্প ছড়িয়ে পড়ে। তাতে ঝাড়খণ্ড থেকে ছত্তীসগঢ় পর্যন্ত ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়। এই কারণে উত্তরবঙ্গে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় একই পরিস্থিতি চলবে।” |