নির্বাচনের কাজে ব্যক্তিগত গাড়ি নেওয়া যাবে না বলে স্থায়ী নির্দেশ আছে আদালতের। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এ বার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, প্রসব আসন্ন হয়ে এলে প্রসূতিকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য মোটরযান বিভাগ ব্যক্তিগত গাড়িও ‘হুকুমদখল’ করতে পারবে। এই বিজ্ঞপ্তি নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত বিজ্ঞপ্তিটি খারিজ করে দেওয়ার কথা ভাবছে বলেও জানান বিচারপতি।
ক্ষমতায় এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন জনসমাবেশে বলেছিলেন, নতুন সরকার মা ও সন্তানের স্বার্থে আসন্নপ্রসবাদের বাড়ি থেকে গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যাবে এবং প্রসবের পরে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছেও দেবে। এর জন্য প্রসূতিদের কোনও খরচ দিতে হবে না। খরচ বহন করবে সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গত ২ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় গ্রামীণ মিশনের প্রকল্প রূপায়ণের কথা উল্লেখ করে জানানো হয়, সমস্ত প্রসব যাতে হাসপাতালেই হয়, সেই জন্য আসন্নপ্রসবাদের বাড়ি থেকে গাড়িতে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই সিদ্ধান্ত রূপায়ণের জন্য সরকার যে-কোনও গাড়ি হুকুমদখল করতে পারবে। ব্যক্তিগত গাড়িও বাদ যাবে না।
প্রায় প্রতিটি ভোটেই ব্যক্তিগত গাড়ি দখল নিয়ে একাধিক মামলা হয়। প্রসূতিদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি হুকুমদখলের সরকারি সিদ্ধান্তকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন দেবব্রত মণ্ডল নামে সাঁতরাগাছির এক বাসিন্দা। শুক্রবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে সেই মামলার শুনানি হয়। আবেদনকারীর আইনজীবী স্বরূপ পাল বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি হুকুমদখল করার কোনও আইনই নেই। জনস্বার্থেও ব্যক্তিগত গাড়ি হুকুমদখল করা যায় না। কোনও ব্যক্তি তাঁর নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনে গাড়ি কেনেন। ভাড়া দেওয়ার জন্য নয়। বাণিজ্যিক কারণে যাঁরা গাড়ি কেনেন, তাঁদের গাড়িকে ‘কমার্শিয়াল’ বা বাণিজ্যিক গাড়ি বলা হয়। সেই সব গাড়ি হুকুমদখল করা যায়। কিন্তু কোনও ব্যক্তিগত গাড়িকেই এ ভাবে হুকুমদখল করা যায় না।
সরকারের পক্ষে আইনজীবী সুশোভন সেনগুপ্ত বলেন, প্রসূতি নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত গাড়িও হুকুমদখলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জনস্বার্থেই। সরকার গাড়ির ব্যবস্থা করলেও প্রসূতির কাছ থেকে কোনও টাকা নেবে না। বাড়িতে প্রসব হলে অনেক ক্ষেত্রেই মা ও সন্তানের জীবনসংশয় হতে পারে। তাই সরকার চায়, সব প্রসবই হোক হাসপাতালে। কিন্তু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল অনেকেরই বাড়ি থেকে দূরে। তাই দ্রুত গাড়ির ব্যবস্থা করার জন্যই হুকুমদখলের ব্যবস্থা হয়েছে।
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি হুকুমদখল করার কোনও আইন নেই। সরকার যদি তা করতে চায়, সে-ক্ষেত্রে বিধানসভায় আইন সংশোধন করতে হবে। আইন সংশোধন না-করে ব্যক্তিগত গাড়ি হুকুমদখল করা যায় না। এমনকী ভোটেও ব্যক্তিগত গাড়ি হুকুমদখল করা যাবে না বলে কলকাতা হাইকোর্টের রায় রয়েছে। বলা হচ্ছে, ব্যক্তিগত গাড়ি হুকুমদখল করলেও তার জন্য সরকার ভাড়া দেবে। সরকার এটা করতে পারে না। বাণিজ্যিক গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ি ভাড়া নেওয়া বেআইনি। সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই বেআইনি কাজ করতে পারে না। বিচারপতি জানিয়ে দেন, ওই বিজ্ঞপ্তি খারিজ করে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সরকারি আইনজীবী সুব্রত তালুকদার তখনই আর্জি জানান, তিনি আদালতকে আরও কিছু তথ্য জানাতে চান। তাই বিচারপতি ৯ মে পর্যন্ত চূড়ান্ত রায়দান স্থগিত রাখেন। |