একে একে আগেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন ১২ জন। বাকি ছিলেন এক জন। শুক্রবার সেই নাইট ইনচার্জ সাজিদ হোসেনও জামিন পেয়ে যাওয়ায় ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের মামলায় সেখানকার আর কোনও কর্তাই জেলে রইলেন না। তবে ফেরার ৩ কর্তার খোঁজ মেলেনি।
৮ ডিসেম্বর শেষ রাতে ওই হাসপাতালে আগুন লেগে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। হাসপাতালে সে-দিনের নাইট ইনচার্জ সাজিদ ঠিক সময়ে আগুনের খবর দমকলে জানাননি বলে অভিযোগ। এ দিন শর্তসাপেক্ষে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন আলিপুরের জেলা ও দায়রা জজ অনিন্দ্য ভট্টাচার্য। এর ফলে আমরি-কাণ্ডে ধৃত ১৩ জনেরই জামিন হয়ে গেল। আদালত জানায়, তারা পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত পুলিশের অনুমতি ছাড়া সাজিদ কলকাতা ছাড়তে পারবেন না।
আমরি-কাণ্ডে ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে আমরির ন’জন ডিরেক্টর-সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্ত অন্য তিন ডিরেক্টরের নাগাল পায়নি পুলিশ। ফেরার তিন অভিযুক্তকে ধরার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ দিন সরকার পক্ষের কাছে তা জানতে চায় আদালত। সরকারি আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য বলেন, পুলিশ চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্যতম ফেরার অভিযুক্ত প্রীতি সুরেখা কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন। সেখানে তা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। শক্তিবাবু আদালতে জানান, যে-তিন জন ফেরার, তাঁরা অন্যান্য অভিযুক্ত ডিরেক্টরেরই আত্মীয়স্বজন। কিন্তু ফেরারদের খোঁজখবর দেওয়ার ব্যাপারে অন্য ডিরেক্টরেরা কোনও রকম সহযোগিতা করছেন না। সরকারি আইনজীবী এ দিনও সাজিদের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর অগ্নিকাণ্ডের রাতে সাজিদই ছিলেন ওই হাসপাতালের নাইট ইনচার্জ। কিন্তু আগুন লাগার পরে তিনি সময়মতো দমকলকে খবর দেননি। উপরন্তু বাইরের লোকজন হাসপাতালে ঢুকে আহতদের বাঁচাতে গেলে তিনি তাঁদের বাধা দেন। পুলিশের কাছে সাক্ষীদের দেওয়া জবানবন্দিতেই তা পরিষ্কার।
এর আগেই এই মামলার শুনানিতে আদালত জানতে চেয়েছিল, অভিযুক্ত সাজিদ তৎপর হলে অগ্নিকাণ্ড এড়ানো যেত কি না। কেন দমকলকে খবর দিতে দেরি হল, তা-ও জানতে চেয়েছিল আদালত। সাজিদের আইনজীবীদের জবাবে বিচারক তখন সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তাই সাজিদের আইনজীবীদের এ দিন ফের আদালতে আসতে বলা হয়েছিল। অভিযুক্তের আইনজীবী সুদীপ্ত মৈত্র, সেলিম রহমানেরা এ দিন বলেন, তাঁদের মক্কেল সে-রাতে যথেষ্ট তৎপর হয়েছিলেন। তিনি তাঁর নিজের মোবাইল থেকে দমকল ও পুলিশের কাছে খবর পাঠিয়েছিলেন। বিচারক মন্তব্য করেন, “অভিযুক্ত সাজিদ কি ৯১ জন মারা যাওয়ার পরেই তৎপর হয়েছিলেন!” আইনজীবীরা বলেন, তাঁদের মক্কেলই তো দমকলকে খবর দিয়েছিলেন। বিচারক বলেন, “দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু অনেক দেরিতে।” আদালত সাজিদের আইনজীবীদের জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আইনজীবীরা বলেন, ধৃতদের মধ্যে সাজিদ ছাড়া সকলেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। তাই সাজিদকেও জামিন দেওয়া হোক।
এর পরে বিচারক শর্তাধীনে সাজিদের জামিন মঞ্জুর করেন। |