নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি ও ফাঁসিদেওয়া |
ঝড়ে প্রথমে উড়ে যায় টিনের চাল। আতঙ্কে ৩ ছেলেমেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে চৌকির নিচে আশ্রয় নেন ফাঁসিদেওয়ার লিচুপাখুরির দিনমজুর সাগর রায়। চোখের সামনে ঘরের চারদিকের বেড়া উড়িয়ে নিয়ে যায় প্রবল বেগে বইতে থাকা ঝোড়ো বাতাস। প্রায় রাতভর চৌকির নিতে ৩ ছেলেকে নিয়ে আঁকড়ে ঠকঠক করে কেঁপেছেন ওই দম্পতি। ভোর হওয়ার পরে কী ভাবে সব সামলে নেবেন তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না সাগরবাবু ও তাঁর স্ত্রী। খবর পেয়ে শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক তথা দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার ওই এলাকায় যান। শঙ্করবাবু ওই পরিবারের হাতে নিজেই দেড় হাজার টাকা তুলে দেন। দলীয় অফিস থেকে ত্রিপল পাঠিয়ে রাতের মধ্যে মাথা গোঁজার আশ্রয় তৈরির ব্যবস্থা করান। সাগরবাবু একা নন, শিলিগুড়ি লাগোয়া ফাঁসিদেওয়ার দধিজোত, পালপাড়া, সিয়াভিটা, চন্ডালজোত, লালমোহনসিংহ জোত ও নকশালবাড়ির হাতিঘিষায় এমন অন্তত শতাধিক পরিবার নিরাশ্রয় হয়ে পড়েছেন। |
ওদলাবাড়িতে সব্যসাচী ঘোষের তোলা ছবি। |
বিধায়ক শঙ্করবাবু বলেন, “দুর্দশা চোখে দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসন, পঞ্চায়েতকে বলেছি, দ্রুত সকলের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের দলের নেতা-কর্মীরাও দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে যথাসাধ্য সাহায্য করছেন।” জেলাশাসক সৌমিত্রমোহন জানান, শিলিগুড়ির এসডিওকে ওই সব এলাকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে নকশালবাড়ির হাতিঘিষায়। সেখানে নন্দলাল-সহ লাগোয়া গ্রামের প্রায় দেড়শো একর জমিতে গড়ে তোলা ৩২টি পানের বরজ পুরোপুরি মাটিতে মিশে যায়। পান বিক্রি করেই ওই পরিবারগুলির সংসার চলত। শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের আর্থিক সাহায্যের আর্জি জানিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের দফতরে স্মারকলিপি দেয় সিপিএম। দলের হাতিঘিষা লোকাল কমিটির সম্পাদক মাধব সরকার বলেন, “রাত ৯টা নাগাদ ঝড় শুরু হয় বড় জোর আধঘণ্টা স্থায়ী ছিল। পানের বরজ ছাড়াও প্রায় ২০০ বিঘা জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। প্রশাসন পাশে না-দাঁড়ালে পরিবারগুলির পক্ষে ঘুরে দাড়ানো কঠিন।” |
কোচবিহারের উত্তর খাপাইডাঙা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ভুট্টা খেত। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব |
নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বন কর্মাধ্যক্ষ সুনীল ঘোষ জানান, রাতেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়। কয়েকশো বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। শুক্রবার ব্লক অফিসে জরুরি বৈঠক করে গ্রাম পঞ্চায়েত পিছু ৫০টি করে ত্রিপল বিলির নির্দেশ জারি হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির সূত্রে জানা গিয়েছে, বড় ঝরুজোতে ২০০ বিঘা জমির সবজি নষ্ট হয়। নন্দলাল, ভেল্টা, বেঙাইজোত, রঘুবস্তি, ছোট মণিরাম, মদনজোত, সেফদুল্লাজোতে বহু কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ভেঙে গিয়েছে প্রচুর বিদ্যুতের খুঁটি। হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চা বাগানের প্রচুর শেড ট্রি ভেঙে পড়ে। বাগডোগরার হাঁসখোয়া, গঙ্গারাম, টাইপু চা বাগান এলাকাতেও প্রচুর ক্ষতি হয়। বন কর্মাধ্যক্ষ বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে ক্ষয়ক্ষতির িরিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হবে।” ঝড়ে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের ৯টি বিয়েবাড়ির প্যান্ডেল ভেঙে যায়। বৃহস্পতিবার বিয়ের দিন থানায় ব্লকের নানা জায়গায় বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। রাজগঞ্জের ভাণ্ডারিগছ গ্রামে ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে ৩ জন জখম হন। এলাকার কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য সমিজদ্দিন আহমেদ বলেন, “অর্ধেক গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন। বহু বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়েছে।” রাজগঞ্জ বন্দর এলাকায় ১২টি গরু মারা যায়। মাঝিয়ালির পাথরঘাটা এলাকায় ৩০০ রাবার গাছ উপড়ে পড়ে। |