ঝড়ের সময়ে লাইনে ট্রেন চালানো নিরাপদ নয়। রেল বিধিতে এ কথা স্পষ্ট করে বলা রয়েছে। তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার রাতে মুজনাই স্টেশন থেকে এনজেপি-আলিপুরদুয়ারগামী প্যাসেঞ্জার কেন ছাড়া হয়েছিল। তা নিয়ে তদন্তে নেমে রেল কর্তৃপক্ষ। রেল সূত্রের খবর, ওই রাতে ট্রেনটি আরও বড় মাপের দুর্ঘটনায় পড়তে পারত। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠায় তদন্তের নির্দেশ দিল রেল। আলিপুরদুয়ারের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার সচ্চিদানন্দ বলেন, “ঝড়ের কারণে গাড়িটি ৬৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে চলছিল। অন্য দিন ট্রেনটি এর চেয়ে জোরে চলে। লাইনে একটি মোটা গাছ পড়ে থাকায় ১০০ মিটার দূরে তা দেখে চালক ইর্মাজেন্সি ব্রেক কষেন ইঞ্জিনের চাকায় গাছটি ধাক্কা খাবার পর ১০০ মিটার দূরে ট্রেন থামে। তবে এ ক্ষেত্রে চালকের কোনও রকম গাফিলতি দেখছেন না ডিআরএম। তাঁর কথায়, “৩০০ মিটার আগে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষলে ট্রেন থামানো সম্ভব হয়। তবে এ বিষয়ে তদন্ত হবে। কারও গাফিলতি যদি থাকে তা দেখা হবে।” |
দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দল। শুক্রবার রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি। |
পাশাপাশি বন দফতরকে রেল লাইনের ধারের গাছ কেটে ফেলার জন্য বলা হবে। বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়ে রেল লাইনে গাছ পড়ে যাওয়ায় ওই রাতে প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়লে ২০ জন যাত্রী জখম হন। তাঁদের মধ্যে ৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। গাফিলতির অভিযোগ ওঠায় রেলের তরফে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণে রেল লাইনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ফালাকাটা নিউ কোচবিহার ঘুরপথে ট্রেন চালাচ্ছে রেল দফতর। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২০ মিনিট নাগাদ এনজেপি আলিপুরদুয়ার জংশনগামী ৫৫৭২ আপ প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি মাদারিহাটের কাছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। ইঞ্জিন সহ পাঁচটি বগি বেলাইন হয়ে পড়ে একটি বগি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনার আগে ঝড়ের কারণে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সাত কিলোমিটার দূরে মুজনাই স্টেশনে ট্রেনটি ২০ মিনিট দাঁড় করানো হয়েছিল। টানা আধা ঘণ্টার ঝড়ের দাপটে প্রচুর গাছপালা উপড়ে পড়ার ঘটনা ঘটে। অথচ লাইনে গাছ পড়ে থাকলে বিপত্তি ঘটতে পারে বলে কোনও সম্ভবনা না দেখে ট্রেনটিকে আলিপুরদুয়ার যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রেল দফতরের অফিসারদের একাংশ। ট্রেনের চালক হরেকৃষ্ণ রায় পাখাধরা বলেন, “১০০ মিটার দূরে লাইনের উপর গাছ পড়ে থাকতে দেখে ব্রেক কষি। তারই মধ্যে এ ঘটনা ঘটল।” দুর্ঘটনাস্থলের কাছে প্রধাননগর গ্রামের বাসিন্দা প্রফুল্ল বর্মন বলেন, “ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ঝড়ে সব তছনছ হয়ে যায়। প্রচুর গাছ ভেঙে পড়ে বাড়ির। সকলে মিলে চৌকির তলায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ বাদে বিকট শব্দ শুনতে পাই।” বন দফতরের স’মিলের কর্মীরা যাত্রীদের উদ্ধার করার কাজে মূলত হাত লাগান তোবারক আলি নামে এক কর্মীর কথায়, স-মিলের ৭টি গাছে ভেঙে পড়েছে। সে সময় আমরা কোথায় থাকব তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ বাজ পড়ার মত বিকট শব্দ পেয়ে বাইরে গিয়ে দেখি একটি ট্রেন থেমে আছে। যাত্রীদের চিৎকার শুনে তাদের উদ্ধার করে আনি। এদিকে ঘটনা ঘটনার পর দু ঘণ্টা বাদেও উদ্ধার কার্যের জন্য রেল দফতরের কেউ না আসায় ওই ট্রেনের যাত্রীরা মাদারিহাট স্টেশনে বিক্ষোভ দেখান। নিগৃহীত হন স্টেশন মাস্টার। রাত একটা নাগাদ উদ্ধারকারী টিম পৌঁছয়। বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালের বেডে শুয়ে জখম বিজয় মল্লিক বলেন, “সামনের কামরায় দরজায় দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি চাকা থেকে আগুন বেরোচ্ছে। হঠাইবগিটি উল্টে গেল। তার পর জ্ঞান হারাই।” |
ঝড়-ঝঞ্ঝায় ট্রেন বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বৃহস্পতিবার রাতের ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল শিলিগুড়ি থেকে মালবাজার, মাদারিহাট হয়ে আলিপুরদুয়ারগামী ট্রেন যাতায়াত। ঝড়ের সময়ে রেল লাইনে পড়ে থাকা বড় গাছের গুঁড়িতে ধাক্কা খেয়ে শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ারগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পড়লে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ট্রেন পরিষেবা। শুক্রবার ওই রেলপথে সমস্ত ধরনের ট্রেন চলাচলই বাতিল করে দেওয়া হয়। দূরপাল্লার ৮টি ট্রেন ঘুরপথে কোচবিহার-ফালাকাটা হয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হলেও ধুবুরি-আলিপুরদুয়ার-নিউ জলপাইগুড়ি ইন্টারসিটি, আলিপুরদুয়ার-নিউ জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার-নিউ জলপাইগুড়ি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস-সহ ৪টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে বলে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে জানানো হয়েছে। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুব্রত হাজং জানিয়েছেন, নিউ জলপাইগুড়ি-বামনহাট প্যাসেঞ্জারের যাত্রাপথ আংশিক বাতিল করা হয়েছে। এদিন ট্রেনটি কেবলমাত্র বামনহাট থেকে আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত যাতায়াত করেছে।মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে প্রবল ঝড়ে মালবাজার, মাদারিহাট রুটে রেল লাইনে গাছ পড়ে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। দূরপাল্লার ট্রেন ঘুরপথে যাতায়াত এবং কয়েকটি ট্রেন বাতিলের এই নির্দেশ কেবলমাত্র শুক্রবারের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে।” উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সমস্ত ট্রেন ঘুরপথে এদিন চলাচল করেছে, সেগুলি হল কাঞ্চনকন্যা, মহানন্দা লিঙ্ক, কামাখ্যা-পুরী, ক্যাপিটাল এক্সপ্রেস, ঝাঁঝা এক্সপ্রেস, কবিগুরু এক্সপ্রেস লোকমান্য তিলক এক্সপ্রেস, গুয়াহাটি-দিল্লি। ট্রেনগুলি এদিন আলিপুরদুয়ার-মাদারিহাট রুটের পরিবর্তে নিউ কোচবিহার, ফালাকাটা হয়ে যাতায়াত করেছে। |