|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা... |
|
ঊনচল্লিশের পরেও... |
বিপ্লবকুমার ঘোষ |
নাটকের আঁতুড় ঘর গোবরডাঙায় আরও এক চমক ছিল বিভিন্ন নাটকের সম্মিলিত মেলা ‘রূপান্তর নাট্যোৎসব-১২’। ঊনচল্লিশ বছরের কঠিন লড়াই এবং বাংলার নাট্যদলে নিজেদের ঠাঁই করে নেওয়ার সাফল্য দাবি করতে পারে রূপান্তর নাট্যদল। কলকাতা থেকে দূরে অথচ মফস্সল শহরে থেকেও কলকাতার নাট্যজগতে তাদের প্রযোজনা বহু বার প্রশংসা পেয়েছে। এ বছরে তাদের উৎসবের প্রথম পর্যায়ে ছিল পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অ্যাকাডেমিতে সেমিনার। বিষয় ছিল ‘ইশকুলে থিয়েটার’। দু’জনের আলোচনাতেই মশগুল ছিল উপস্থিত শ্রোতারা। আলোচক ছিলেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও তীর্থঙ্কর চন্দ।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিল ছ’টি নাটক। বাছাই করা নাটকগুলি দর্শকদের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। তার মধ্যে ছিল ইমন মাইম সেন্টার-এর ‘মূকাভিনয়’ (নির্দেশক-ধীরাজ হাওলাদার), দৃষ্টির ‘জুতো আবিষ্কার’ (গার্গী ভট্টাচার্য)। রূপান্তরের নতুন নাটক ‘বদনাম’ বেশ অভিনবত্বের দাবি রাখতে পারে। |
আবারও গোবরডাঙার সাফল্য। নজর কাড়ল নাটক ‘বদনাম’ও। |
নির্দেশক প্রদীপ রায়চৌধুরী। অভিনয় জীবনের পঞ্চাশ বছর পেরোলেন তিনি এই নাটকের নির্দেশনার মধ্য দিয়ে। তাই দর্শকদের কৌতূহল ছিল দেখার মতো। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের নাটককে তিনি যে ভাবে মঞ্চে উপস্থাপন করেছেন তার কিছু কিছু নিদর্শন পাওয়া গেল বিভিন্ন
নাট্য-ব্যক্তিত্বের কাছে।
নাট্যমেলার বড় আকর্ষণ ছিল ‘আমার প্রিয় রবীন্দ্রনাথ’। স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের নির্দেশনায় অভিনয় করেছেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, সোহিনি সেনগুপ্ত, দেবশঙ্কর হালদার প্রমুখ। চল্লিশ মিনিটের এই প্রযোজনা দর্শকদের কাছে শুধু অভিনন্দন নয়, রেশ রয়ে যায় অনুষ্ঠানের শেষেও। আসলে দর্শকদের রুচির কাছে বাঁধা পড়ে প্রযোজনার নির্যাস। নান্দীকার সেই অর্থে বোঝে দর্শকদের চাওয়ার পারদ। সত্যি কথা বলতে কি, পরবর্তী আরও দু’টি নাটক মন কেড়েছে অবলীলায়। তার মধ্যে কোমল গান্ধার-এর ‘চণ্ডালিকা’। নির্দেশক মুরারি মুখোপাধ্যায়। অন্য নাটকটি হল, সীমা মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় রঙরূপ প্রযোজিত ‘মায়ের মতো’। সহজ সরল নির্দেশনা। জটিলতা নেই। আসলে মানুষের মনে দাগ কাটতে একটি নাটকে যা যা থাকার প্রয়োজন তার সব কটি উপাদান থাকলেই তা সহজেই নজরে আসে। এ বার সংস্থা দুই নাট্য-ব্যক্তিত্ব কানাইলাল চৌধুরী ও হৃষীকেশ চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি সম্মানে সম্মানিত করলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্তকে। তাঁকে বরণ করলেন অগুন্তি দর্শকও। তবে সবচেয়ে ভাল লেগেছে, একটি সংস্থা হাজার সমস্যা ও লড়াইকে ফেলে দ্রুত সামনের সারিতে চলে এলেও ভোলেনি সেই সব দিন।
চিত্র প্রদর্শনী ও সমরজিৎ বিশ্বাসের এককে তারই প্রতিফলন। এ বছরে এই নাট্যোৎসবের উদ্বোধক ছিলেন সুভাষ দত্ত।
|
ট্র্যাজেডি না কমেডি |
মনসিজ মজুমদার |
নান্দীকার নাট্যমেলায় ছিল দিল্লির নাট্যদল শ্যু লেস-এর ইংরেজি নাটক ‘ডি ফর ডায়েরি’। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে যুবা বয়স পর্যন্ত নায়কের জীবনযন্ত্রণা নিয়ে এই নাটকের কাহিনি। নায়কের নিজের লেখা নাটকের মতোই এই নাটক না ট্র্যাজেডি, না কমেডি। স্কুলে ছাত্রাবস্থায় সে এক চরম নৈরাশ্যের শিকার। তার মনে হয় সে বাবা-মা, স্কুলের শিক্ষিকা, বন্ধু-বান্ধবী কারও কাছ থেকেই প্রত্যাশিত মনোযোগ পায় না। সে ডায়েরিতে সব ঘটনা লিখে রাখে। সেই ঘটনা প্রযোজনার প্রথম কয়েক দৃশ্য। বয়ঃসন্ধির এই যন্ত্রণা তার প্রাপ্তবয়সেও যায় না, অস্তিত্বের সঙ্কট ঘনিয়ে তোলে। তার উচ্চাশা ট্র্যাজিক নাট্যকার হয়ে বিখ্যাত হবে, কিন্তু যতই ট্র্যাজেডি লেখে ততই দর্শক তাতে পায় কমেডির মজা আর হাস্যরস। সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিন্তু বিষে ভেজাল। তাই মরতে পারে না। শেষে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার।
নাট্যকার-পরিচালক দীপক ধামিজার আইডিয়ার খামতি নেই। কিন্তু নাটকের দুর্বলতা ও পরিচ্ছন্ন পরিচালনার অভাবে নাটক জমে ওঠে না। নায়ক কোনও ব্যক্তিবিশেষ নয়, একটা আইডিয়া মাত্র। সে আইডিয়াই থাকবে, না ব্যক্তিবিশেষ হয়ে ট্র্যাজিক নায়ক হবে পরিচালক মনস্থির করতে পারেননি।
শুরুতে ক্লাউনের পোশাক পরা এক নারী, কখনও তিনি তার শিক্ষিকা, কখনও বান্ধবী এবং শেষে তরুণ নাট্যকারের ট্র্যাজিক নাটক দেখে হাসিতে ফেটে পড়া দর্শক। এই ক্লাউন হয়তো নায়কের বিপ্রতীপ আইডিয়া, কিন্তু তা স্পষ্ট হয় নি নাটকের নিজস্ব ভাষায়। প্রথম অংশের সঙ্গে দ্বিতীয়াংশের কোনও নাটকীয় সংযোগ ঘটেনি। অভিনয়ও খুব দুর্বল। |
|
|
|
|
|