|
|
|
|
শনিবারের নিবন্ধ |
অপু নয়... অমল নয়... ক্ষিদ্দা |
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে। স্বপ্ন। রাগ। বেদনা। খ্যাতি। সত্যজিৎ থেকে দাদাসাহেব ফালকে।
স্মৃতি থেকে বর্তমান। চেনা পথ। অচেনা পরিবেশ। পা মেলালেন শোভন তরফদার |
‘এখন’। মানে, প্রেজেন্ট কনটিনিউয়াস?
হাঁটতে হাঁটতে এক ঝলক তাকালেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর চশমার কাচে ভোরের কচি আলো। আমরা আছি টালা এলাকায়। রাস্তায় এখনও লোক বেশি নেই, হাতেগোনা যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁরা অবাক। এত সকালে, এখানে ইনি!
বললাম, কালের সঙ্গে পাত্রটাকেও জড়িয়ে নিন। এখনকার সৌমিত্র।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মাথার উপরে গাছগুলির দিকে তাকালেন,এবং তাকাতে গিয়েই, দূরে, বিশাল জলাধারটির দিকে দৃষ্টি গেল। টালা ট্যাঙ্ক। তিনি আনমনে, যেন নিজেকেই বললেন, “কাল আর পাত্র না হয় হল, কিন্তু স্থান! এখানে বর্তমান নেই। স্মৃতি আছে।”
সৌমিত্র এক লহমা স্তব্ধ হলেন। কীসের স্মৃতি, তা না বললেও চলে। চিলেকোঠা। লাইনধার। টালার ট্যাঙ্ক। অপূর্বকুমার রায়। সঙ্গে নববধূ অপর্ণার বেশে কিশোরী শর্মিলা ঠাকুর।
সত্যি করে বলুন তো, এই সব স্মৃতির গায়ে হাত রাখলে মনে হয় না, টাটকা, একেবারে জীবন্ত?
সৌমিত্র হাঁটতে হাঁটতে বললেন, “হয়তো এখনও বাস স্টপে / মুখ তার / আঠারো বছরের শ্যামল ইস্পাত / হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। / এক এক দিন ইচ্ছে করে / ফিরতি বাসে উঠে চলে যাই / দেখে আসি তাকে...”
এ তো আপনার লেখা কবিতা! আমরা এখনকার সৌমিত্রর কথা বলছিলাম!
“কে বলল, এখনকার সৌমিত্র শুধু প্রেজেন্ট কনটিনিউয়াস? এখনকারের মধ্যে তখনকারটা জড়িয়ে নেই? সত্যি ইচ্ছে করে, ফিরতি বাসে উঠে চলে যাই, দেখে আসি...! যতই মনে হয়, সেটা অসম্ভব, তত আরও বেশি ইচ্ছে করে!”
সত্যিই অসম্ভব? এই তো, দাদাসাহেব ফালকে-র খবরটা পেয়ে, আমি নিশ্চিত, আপনার ‘অপুর সংসার’-এর প্রথম শটটার কথা মনে পড়েছিল!
“কী জানি!” সৌমিত্র হাসলেন, “তবে ‘অপুর সংসার’-এর প্রথম শটটা কিন্তু টালায় নয়, বেলেঘাটায় ছিল। একটা ওষুধ-কারখানায়। অপু চাকরি খুঁজতে গেছে, গিয়ে দেখছে কিছু লোক যন্ত্রের মতো কাজ করে চলেছে। লেবেলিং, বটলিং। দেখামাত্র অপু বুঝল, এ কাজ তার নয়।
প্রথম শট-ই ওকে!”
|
|
হুঁ, মনে পড়ছে। অপুর দৃষ্টিটাও মনে আছে। তারপরই তো মেসে ফিরে খবর পেল, তার একটা গল্প পত্রিকায় ছাপা হবে।
“ভাবো, চাকরি খুঁজতে গেল, সেটা হল না। এ দিকে, একটা গল্প মনোনীত হয়েছে শুনে মহা খুশি....”
আচ্ছা, এটা কি শুধুই অপু? সেই সৌমিত্রও কি নয়? সাহিত্যের টানে বিজ্ঞান ছেড়ে বাংলা নিয়ে পড়াশোনা...তারপর কবিতা লেখা, নির্মাল্য আচার্যের সঙ্গে
‘এক্ষণ’ সম্পাদনা...
“সেই সৌমিত্র কেন, এই সৌমিত্রও কি নয়? যে খুব আক্ষেপ নিয়ে দেখে, বাংলা সিনেমা বাংলা সাহিত্যের হাতটা ছেড়ে দিয়েছে...! ভেবে দেখো, বাংলা সাহিত্য থেকে কী আশ্চর্য সব ছবি হয়েছে! মানিকদা (সত্যজিৎ রায়), তপনদা (তপন সিংহ), তনুদা (তরুণ মজুমদার)! অবশ্যই, ঋত্বিকদা (ঋত্বিক ঘটক)! সুবোধ ঘোষের লেখা ‘অযান্ত্রিক’ থেকে শুরু করে অদ্বৈত মল্লবর্মনের ‘তিতাস’!”
অর্থাৎ, হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন...
সৌমিত্র হাসলেন। বললেন, “অথচ, তাকেই অবহেলা। আবার, একেবারে মৌলিক চিত্রনাট্য পড়ে সাহিত্যের স্বাদ মিলছে, তেমনও তো এখানে দেখলাম না।”
দাঁড়ান, দাঁড়ান, এটা কিন্তু বিতর্কিত। ‘দাদাসাহেব ফালকে’-প্রাপক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলছেন, বাংলায় ভাল মৌলিক চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছে না। অন রেকর্ড?
“এই সব রেকর্ড-টেকর্ড বললে খুব ফর্মাল ঠেকে! আমি যা মনে করি, তা-ই বলেছি। আমার যতটুকু অভিজ্ঞতা, তার ওপর ভিত্তি করেই বলেছি। ব্যস!”
কিন্তু, আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিটা তো হালকা নয়...এত দিন ক্যামেরার সামনে, তারও আগে মঞ্চে...শতাব্দীর অর্ধেকের বেশি পেরিয়ে গিয়েছে।
“সত্যি, মাঝে মাঝে ভাবি, কতটা দূর চলে এসেছি... কত কিছু শিখতে শিখতে...!”
কথা বলতে বলতে সৌমিত্র একটু আনমনা, বললেন, “একটা ঘটনা হয়েছিল, জানো! ‘অভিযান’-এর আউটডোর-এ।”
ততক্ষণে আমরা একরত্তি একটি চা-দোকানের কাছাকাছি। দোকানিটি মধ্যবয়সিনি, ঈষৎ থতমত খেয়ে দেখলেন, বেঞ্চে স্বয়ং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়! চা এল।
সৌমিত্র চুমুক দিলেন চায়ে। “দুবরাজপুরে তখন প্রচণ্ড গরম! আমার আর জ্ঞানেশের শট। আমাকে আবার শটের আগে দু’ঘণ্টা করে মেক-আপ করতে হত। ওই সব ধড়াচূড়া পরে চড়া রোদে আমার দশা রীতিমত কাহিল। অনিল চৌধুরী, মানিকদার ইউনিটে যিনি প্রোডাকশন ম্যানেজার-এর কাজ করতেন, তাঁর হয়তো মায়া হয়েছিল। মানিকদার কাছে গিয়ে আস্তে করে বললেন, ‘এত রোদ, সৌমিত্রর খুব কষ্ট হচ্ছে...!’ মানিকদা কাজ করছিলেন। নির্বিকার, অনুচ্চ গলায় বললেন, ‘কষ্ট না করলে ভাল অভিনেতা হওয়া যায় না!’ কথাটা এখনও ভুলতে পারিনি!”
শুনে অভিমান হয়নি? একেবারে, তখনই!
“একদম কিছুই হয়নি বললে হয়তো মিথ্যে বলা হবে, কিন্তু সেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার বাইরে বেরিয়ে শিক্ষাটা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। এ রকম শিক্ষা ওঁর কাছ থেকে বহু বার পেয়েছি। যখন তুমি অভিনেতা, তখন তুমি চরিত্রের ভেতরে। পৃথিবীতে আর কোথাও কিছু নেই! পিরিয়ড!”
বললাম, এই তো মাস কয়েক আগে আপনার মাতৃবিয়োগ হল। কোনও কাজ থামেনি। পূর্বঘোষিত অভিনয় যথা সময়ে হয়েছে। নিজের ওপর এতটা নির্মম হতে হয় বুঝি? কোথাও তো একটা রক্ত পড়ে!
“সেটা লুকোতে না পারলে অভিনেতা কীসের? স্টেজ ইজ দ্য হেল অ্যান্ড উই শ্যাল বি মেরি ডেভিলস দেয়ার!”
সেই জন্যেই কি এ বছর আপনার জন্মদিনে অ্যাকাডেমিতে নাটক ফুরোলে দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বললেন, যত দিন বাঁচব, যেন এ ভাবেই আপনাদের আনন্দ দিয়ে যেতে পারি!
“বলেছিলাম। আসলে, মাঝে মাঝে বুঝতে পারি, জানো, আমার এই হাতে নশ্বরতার গন্ধ লেগে আছে...!”
সৌমিত্র আবার আনমনা। তারপর, চকিত হেসে বললেন, “কথা ছিল, এটা কিন্তু একদম ফর্মাল ইন্টারভিউ হবে না!”
বললাম, হবে না-ই তো! কথার পিঠে কয়েকটা কথা এসে গেল, তা-ই! ঠিক আছে, আসুন, অন্য একটা খেলা খেলি...!
“খেলা?”
এই ভাবছিলাম, ধরুন, আপনারই অভিনয় করা ছ’টা চরিত্র দেখা করতে এল আপনার সঙ্গে...
“সিক্স ক্যারেকটারস ইন সার্চ অব অ্যান”
অথর নয়, অ্যাক্টর! নামটুকুতেই যা পিরানদেল্লোর ছায়া! বাকিটা আপনি! সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
“আচ্ছা, অভিনেতা যিনি, তিনি তো এক অর্থে রচনাও করেন চরিত্রকে! তাই না?” সৌমিত্র দৃষ্টিপাত করলেন ভোরের আলো আর মেঘের কাটাকুটির দিকে।
ঠিক। সুতরাং, একটা অর্থে তো অথরও বলা যায়। ইন সার্চ অব অ্যান অথর!
“মজার খেলা! কিন্তু, ছ’টা বাছা খুব মুশকিল, জানো! এতগুলো মনে পড়ছে। কোন ছ’টাকে নেব?”
ওটাই খেলা! কোন ছবির কোন ছ’টা, সেটা আপনাকে বাছতে হবে!
“অর্থাৎ, এখনকার সৌমিত্রকে বাছতে হবে, তার অভিনয় করা কোন ছ’টা চরিত্র তার সঙ্গে, মানে এখনকার সৌমিত্রের সঙ্গে দেখা করতে আসবে?”
বললাম, একদম ঠিক! সরি, বলতে গিয়ে ডিটেলিং-এ গোলমাল থেকে যাচ্ছিল! অভ্যেস নেই তো...
“উঁহু, ডিটেলিং-টা খুব জরুরি। বলো তো, কোনি-র ক্ষিদ্দার চোখে মোটা পাওয়ারের চশমা ছিল কেন?”
চোখ খারাপ, তাই!
“আহ্হ্, সে তো সবাই জানে। কিন্তু, চোখটা খারাপ কেন? শরীর তো পেটানো। গঙ্গার ঘাটে সে যখন ব্যায়াম করে, তখন দেখা যায়, স্বাস্থ্যটি সুঠাম। তা হলে?”
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কয়েক মুহূর্ত চুপ। আমিও। মোটা চশমার সঙ্গে চোখের দোষ ছাড়া আর কী-ই বা মেলাব?
“অপুষ্টি। লোকটার ছোটবেলায় অপুষ্টি ছিল, দারিদ্র ছিল, তাই চোখটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এটা মাথায় না রাখলে তুমি ক্ষিদ্দার জায়গাটা, তার উঠে আসার ইচ্ছেটা, তার লড়াইয়ের জমিটা ঠিক ধরতেই পারবে না। শুধু হিংসুকদের ছলচাতুরিই নয়, লোকটাকে ওই অপুষ্টির সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছে।”
এ ভাবেই এখনও চরিত্রের ভিতরে ঢুকে পড়েন, তাই না?
“অভ্যেস! শিশিরকুমার বলতেন, নাটকে কী লেখা আছে, তা তো সবাই দেখছে, কী লেখা নেই, সেটা খুঁজে বের করাই অভিনেতার কাজ। সেই চেষ্টাটুকু এখনও করি।”
যাক গে, এ বার সেই ছ’টা চরিত্র! প্রথমে... “না! যা ভাবছ, তা নয়।”
মানে?
“মানে, প্রথমটা অপু নয়। নরসিংহ! ‘অভিযান’-এর নরসিংহ! সেই রাজপুত ড্রাইভার-এর চরিত্রটা করতে গিয়ে শিখেছিলাম, অভিনেতা কী করে বড়, খুব প্যাশনেট একটা চরিত্রকে নিজের ভিতরে ধারণ করেন! নরসিংহ দেবতুল্য কিছু নয়। ভাল-মন্দয় মেশানো। সুপারম্যান নয়, রীতিমত মার খায়। তার বেঁচে থাকাটা, সত্যিকার অর্থে, জীবনসংগ্রাম! সেটা ফুটিয়ে তোলাই ছিল চ্যালেঞ্জ! তাই, নরসিংহ এক নম্বর। দুই, গঙ্গাচরণ।”
গঙ্গাচরণ মানে, ‘অশনি সঙ্কেত’!
“ওই হেটো ধুতি, কেরোসিনকে ‘ক্রাসিন’ বলা গঞ্জ-গাঁয়ের মানুষজনকে ছোট থেকেই দেখেছি। ছোটবেলায় দেখেছি দুর্ভিক্ষ! সে সব যেন ফিরে পেলাম, গঙ্গাচরণ করতে গিয়ে। সেই ‘ফ্যান দাও ফ্যান দাও’ রব মনে পড়ল। ওই ডাক যে একবার শুনেছে, সে কোনও দিন ভুলবে না। সখারাম গণেশ দেউস্কর
পড়লাম। ‘অশনি সঙ্কেত’ আমাকে স্মৃতির দিকেই ঠেলে দিল।”
তিন নম্বর? “তরুণ মজুমদারের ‘সংসার সীমান্তে’। অঘোর! এ এমন একটা চরিত্র যার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র চেনা-পরিচয় ছিল না, কস্মিনকালে এমন কাউকে কাছ থেকে দেখিনি। ‘অভিযান’-এর ‘নরসিংহ’-র মতো ড্রাইভার দেখেছিলাম, কাছ থেকেই দেখেছিলাম, কিন্তু ‘অঘোর’ তো ঘোর অচেনা। কী করি, শিখতে হল। হোমওয়ার্ক করলাম। জানলাম, বিড়ি কী, সিগারেট কী!”
সৌমিত্র সামান্য থামলেন, আর সেই অবসরে আমি একটু গুলিয়ে গেলাম। ‘সংসার সীমান্তে’ তো সত্তর দশক, তার আগে কি...
“উঁহু, ধূমপান আগেও করেছি। এ হল কোড ল্যাঙ্গোয়েজ। অপরাধ দুনিয়ার গোপন ভাষা।” সৌমিত্র হেসে ফেললেন, “বিড়ি খাকি, বেঙ্গল পুলিশ। আর সিগারেট কলকাতা পুলিশ। সাদা! ভক্তিপ্রসাদ মল্লিকের বই খুঁটিয়ে পড়েছিলাম। অপরাধ জগতের শব্দকোষ। মানিকদা ‘সংসার সীমান্ত’ দেখে বলেছিলেন, এখনও পর্যন্ত আমার ছবির বাইরে তোমার শ্রেষ্ঠ কাজ।”
তারপর?
“ক্ষিদ্দা! সরোজ দে-র ‘কোনি’! এই চরিত্রটা করতে গিয়ে বুঝলাম, কী ভাবে অন্তরের জোরটা শরীরে ধরা থাকে! সাতাত্তরের সৌমিত্রর শরীরে ক্ষিদ্দার সেই অ্যাথলেটিক ক্ষিপ্রতা নেই, সে আর লাফিয়ে রেলিং টপকাবে না, কিন্তু ওই স্পিরিট! ফাইট, কোনি, ফাইট...”
হ্যাঁ, ওই চিৎকার! ওটা একেবারে প্রবাদের মতো হয়ে গেছে...
সৌমিত্র ইশারায় কাছে ডাকলেন। বললেন, “একটা কথা শোনো। আজ পর্যন্ত কারওকে বলিনি। আজ বলি। মাঝেমধ্যে যখন মনে হয়, আর পারছি না, এ বার হেরেই যাব...তখন একা, নিজের মনে, নিজেকেই বলি, ফাইট, কোনি, ফাইট!”
বললাম, মঞ্চে বা ফিল্মের শু্যটে সাজঘর হয় জানি, জীবনেরও একটা সাজঘর থাকে বোধহয়... লোকচক্ষু থেকে দূরে! সেখানে দাঁড়িয়ে বলেন?
“মাঝেমধ্যে গুলিয়ে যায়, কোনটা সাজঘর, কোনটা জীবন, কোনটা মঞ্চ, কোনটা শু্যটিং জোন...যাক গে, কী যেন বলছিলাম... হ্যাঁ, ওই ফাইট, কোনি, ফাইট!”
আশ্চর্য লাগছে, এখনকার সৌমিত্র যে চরিত্রগুলো বেছে নিচ্ছেন, তার প্রতিটির সঙ্গেই কোনও না কোনও একটা লড়াই জড়িয়ে!
“স্বাভাবিক, কারণ সৌমিত্রের থেকে লড়াই জিনিসটাকে আলাদা করা যাবে না! তখনও না, এখনও না।”
ছ’টার মধ্যে বাকি যে দুটো চরিত্র, তারাও লড়াই করে?
“করে। যে যার নিজের মতো করে, নিজের জায়গা থেকে, কিন্তু লড়াইটা চালিয়ে যায়! মানিকদার ‘শাখাপ্রশাখা’-র প্রশান্ত। আর, তপনদা, তপন সিংহের ‘হুইলচেয়ার’-এর ডাক্তার। দু’জনেই জীবনের কোনও না কোনও গভীর সংকটে জড়িয়ে। আবার, দু’জনেই অসম্ভব মানবিক। খুব অসহায় অথচ সাঙ্ঘাতিক স্পিরিটেড!”
‘হুইলচেয়ার’-এ না হয় আপনিই মুখ্য চরিত্র, কিন্তু প্রশান্ত?
“অবাক হচ্ছ?”
না, মানে, ওই আর কী...আসলে আরও কয়েকটা মনে পড়ছে, গৌতম ঘোষের ‘দেখা’, বা ধরুন তপন সিংহেরই ‘আতঙ্ক’, তাতে মাস্টারমশাই... রাজা মিত্রের ‘একটি জীবন’...
“ঠিক। এই নামগুলো আমারও মনে আছে। তা হলে কেন প্রশান্ত, তাই তো?” সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় খোলা মাঠের দিকে তাকালেন, কিছুটা বাতাস নিলেন, তারপর বললেন, “মানিকদা বলেছিলেন, চরিত্রটা ছোট, খান পঁচিশেক সংলাপ, তোমার কী রকম কাজ-টাজ আছে, একটু করে দেবে? উনি ওই রকমই ভদ্র! আমার তো ‘না’ বলার প্রশ্নই ওঠে না। মানিকদা বললেন, সৌমিত্র, তোমাকে এত দিন আমি প্রচুর স্বাধীনতা দিয়েছি, তুমি নিজের মতো করে নানা রকম চরিত্র করেছ, কিন্তু এই চরিত্রটা আমি আর তুমি একসঙ্গে ভাবব। বললাম, বেশ মানিকদা, তাই হবে। আপনি কিছু ভেবেছেন? উনি বললেন, এদের নানা রকম কম্পালসিভ বিহেভিয়র হয়, জানো, ধরো হাতটা নিয়ে কিছু করছে! আমি
বললাম, ঠিক। আর, আমি যদি তার সঙ্গে কিছু ‘টিকস’ যোগ করি! ‘টিকস’ মানে কিছু বাঁধা গতের আচরণ। যে করে সে হয়তো সব সময় ভেবেও করে না, অভ্যেসবশতই করে। শট রেডি হল। দিলাম। মানিকদা, প্রায় অস্ফুটে বললেন, একসেলেন্ট!” |
ছয় চরিত্রের সন্ধানে এক অভিনেতা |
যে চরিত্রগুলো এখনও সৌমিত্রকে ভাবায় |
অভিযান: ১৯৬২
পরিচালক: সত্যজিৎ রায়
চরিত্র: নরসিংহ। রাজপুত ট্যাক্সি ড্রাইভার। একমাত্র প্যাশন তার ক্রাইসলার গাড়ি। কিন্তু তার পর জীবনে আসে গুলাবি (ওয়াহিদা রহমান)।
কেন? নরসিংহ-র চরিত্র করতে গিয়ে শিখেছিলাম, কী করে বড় একটা চরিত্রকে, খুব প্যাশনেট একটা চরিত্রকে অভিনেতা নিজের ভিতরে ধারণ করে! নরসিংহ মোটেই দেবতুল্য কিছু নয়। ভাল-মন্দয় মেশানো। সুপারম্যান নয়, রীতিমত মার খায়। তার বেঁচে থাকাটা, সত্যিকার অর্থে, জীবনসংগ্রাম! সেটা ফুটিয়ে তোলাই ছিল চ্যালেঞ্জ! |
অশনি সঙ্কেত |
অশনি সঙ্কেত: ১৯৭৩
পরিচালক: সত্যজিৎ রায়
চরিত্র: গঙ্গাচরণ। গ্রামের স্কুল মাস্টার। তার চোখ দিয়ে দেখা ’৪৩-’৪৪-এর মন্বন্তর।
কেন? ওই হেটো ধুতি, কেরোসিনকে ‘ক্রাসিন’ বলা গঞ্জ-গাঁয়ের মানুষজন আমার দেখাশোনার মধ্যেই ছিল। তাদের ফিরে পেলাম, গঙ্গাচরণ করতে গিয়ে। আবার যেন বাংলার মুখটা দেখলাম! দুর্ভিক্ষের কথা মনে পড়ল। সখারাম গণেশ দেউস্কর পড়লাম। তা ছাড়া, আমার নিজের স্মৃতির মধ্যেও দুর্ভিক্ষের স্মৃতি ছিল। |
সংসার সীমান্তে |
সংসার সীমান্তে: ১৯৭৫
পরিচালক: তরুণ মজুমদার
চরিত্র: অঘোর! চোর। স্বপ্ন দেখে বারবণিতা প্রেমিকাকে (সন্ধ্যা রায়) নিয়ে ঘর বাঁধবে। শেষ পর্যন্ত তাকে জেলে যেতে হয়।
কেন? এ এমন একটা চরিত্র যার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র চেনা-পরিচয় ছিল না...শিখতে হল। হোমওয়ার্ক করলাম। জানলাম, বিড়ি কী, সিগারেট কী!... অপরাধ দুনিয়ার গোপন ভাষা। বিড়ি খাকি, বেঙ্গল পুলিশ। আর সিগারেট কলকাতা পুলিশ। সাদা! |
কোনি |
কোনি: ১৯৮৬
পরিচালক: সরোজ দে
চরিত্র: ক্ষিদ্দা। সাঁতারের কোচ। যার জীবনের একমাত্র স্বপ্ন সব বাধা পেরিয়ে তার ছাত্রীটিকে (শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়) চ্যাম্পিয়ন করা।
কেন? এই চরিত্রটা করতে গিয়ে বুঝলাম, কী ভাবে অন্তরের জোরটা শরীরে ধরা থাকে! ৭৭-এর সৌমিত্রর শরীরে ক্ষিদ্দার সেই অ্যাথলেটিক ক্ষিপ্রতা নেই, সে আর লাফিয়ে রেলিং টপকাবে না, কিন্তু ওই স্পিরিট! ফাইট, কোনি, ফাইট... |
শাখা প্রশাখা: ১৯৯০
পরিচালক: সত্যজিৎ রায়
চরিত্র: প্রশান্ত। মানসিক ভারসাম্যহীন। ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিকালের ভক্ত। কিন্তু সে অসংলগ্ন কথার মধ্যে দিয়ে সম্পর্কের অনেক গূঢ় দিক বুঝিয়ে দিতে পারে।
কেন? হাতেগোনা সংলাপ। চরিত্রটাকে ফোটাতে তাই অভিব্যক্তি আর শরীরী ভাষাই ছিল একমাত্র অস্ত্র। সেটা ছিল একটা চ্যালেঞ্জ। আর প্রশান্ত কিন্তু খুবই মানবিক একটা চরিত্র। |
হুইলচেয়ার: ১৯৯৪
পরিচালক: তপন সিংহ
চরিত্র: ডাক্তার। নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের জন্য একটা প্রতিষ্ঠান চালায়। অদম্য লড়াই করার ক্ষমতা। যা সে শুষ্রূষা চাইতে আসা রুগিদের মধ্যেও সঞ্চারিত করে।
কেন? যখন চরিত্রটা পেলাম, মনে হল, এত মানবিক কোনও চরিত্র কি আগে করেছি? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আজীবন, তার যাবতীয় কাজকর্মে, মানুষের কাছে ‘কমিটেড’। যে মানুষ দীনের হতে দীন, নিরাশ্রিত, তার প্রতি ‘কমিটেড’। সেই ‘কমিটমেন্ট’-টা ‘হুইলচেয়ার’-এর ডাক্তারেরও ছিল। |
|
আর, ‘হুইলচেয়ার’-এর ডাক্তার?
“মানবিকতা। অনেকেই জানেন না, তপনদা ‘এক ডক্টর কি মওত’ ছবিটি প্রথমে বাংলায়, আমাকে নিয়ে শুরু করেছিলেন। ছবিটা শেষ হয়নি, পরে পঙ্কজ কপূরকে নিয়ে করলেন, হিন্দিতে। তখন বেশ খানিকটা বদলে গেল ছবিটা। অসামান্য ছবি। আমার মতে, তপনদার সেরা কাজের একটা। তো, পরে যখন ‘হুইলচেয়ার’-এ ‘ডাক্তার’-এর চরিত্রটা পেলাম, মনে হল, এত মানবিক কোনও চরিত্র কি আগে করেছি?”
সেটাই একমাত্র কারণ, এই ছ’য়ের মধ্যে সেটাকে আনার?
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা ছাড়িয়ে সবুজ মাঠে নেমে গেলেন। বললেন, “‘কমিটমেন্ট’ বলে একটা কথা আছে, তাই না? কে কার কাছে ‘কমিটেড’! সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আজীবন, তার যাবতীয় কাজকর্মে, মানুষের কাছে ‘কমিটেড’। যে মানুষ দীনের হতে দীন, নিরাশ্রিত, তার প্রতি ‘কমিটেড’। জানি না, এটার বাংলা কী হবে! সেই ‘কমিটমেন্ট’-টা ‘হুইলচেয়ার’-এর ডাক্তারেরও ছিল।”
এমন কথার পরে কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধতা অনিবার্য।
প্রসঙ্গ বদলে বললাম, ভাবলে একটু অবাকই হই, জীবনের নানা সময়, নানা রকম চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ আপনার কাছে এসেছিল! পাশাপাশি, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘তিন ভুবনের পারে’, ‘ছুটির ফাঁদে’, ‘অপরিচিত’, ‘মণিহার’, ফেলুদা...এ সব তথাকথিত মেনস্ট্রিম কাজ তো আছেই!
সৌমিত্র একটু থামলেন। বললেন, “কথাটা সত্য, কিন্তু শেষ সত্য নয়। ছোট্ট একটা সংযোজন আছে।”
মানে?
“আগে এ ভাবে বলিনি। এখন মনে হয়, একটু বলে রাখা ভাল! তেমন কিছু না, ছোট্ট একটা কথা। এই যে নানা রকম চরিত্রে অভিনয়ের কথা বললে, এর আড়ালে কিন্তু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নামক অভিনেতাটির কিছু স্বার্থত্যাগ ছিল। অর্থত্যাগও ছিল! কিন্তু, ভাল চরিত্র পেয়ে সে দু’বার ভাবেনি, রোলটা নেব কি না! জানত, অমুক চরিত্রটা করতে গেলে তমুকটা করা যাবে না, অর্থপ্রাপ্তি হয়তো অনেকটা কমবে...তবু, ভাবেনি। কোনও দিন ভাবেনি।”
আপনি এতটা প্রস্তুত, আগ্রহী, অথচ, টালিগঞ্জ কি আপনাকে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারল?
“সে আর...,” সৌমিত্র কিছু একটা বলতে গিয়ে থামলেন, তারপর বললেন, “রিনা (অপর্ণা সেন) একবার লিখেওছিল, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে টালিগঞ্জ ব্যবহার করতে পারেনি। সে আক্ষেপ করে আর কী হবে?”
ভেবে দেখুন, দু-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া, কোনও ‘নেগেটিভ’ চরিত্রে আপনাকে সে ভাবে দেখাই গেল না!
“ঠিক, কিন্তু তার একটা কারণ আছে, পরিপ্রেক্ষিত আছে। আসলে, অভিনেতার কিছু কিছু সীমা থাকে, জানো। সীমাবদ্ধতা, মানে লিমিটেশন বলছি না কিন্তু। সীমা! লিমিট। ভানুদা, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতা ‘ভিলেন’ হিসেবে গ্রাহ্য হলেন না। অভিনয় খারাপ? মোটেই না! লোকে ভাবল, ভানু তো হাসায়। সে খারাপ কাজ করতেই পারে না! এটাই সীমা। সৌমিত্র যতই ‘প্রণয়পাশা’ করুক, ‘ঝিন্দের বন্দি’র ময়ূরবাহন করুক, সে খারাপ নয়। হতে পারে না। সে ‘ঘরে বাইরে’র সন্দীপ করলেও লোকে ভুরু কোঁচকায়। সৌমিত্র, এই চরিত্রে? নাহহ!”
তা হলে তো আপনাকে ‘টাইপকাস্ট’-এর যুক্তিও মানতে হয়!
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় খুব গভীর একটি শ্বাস নিয়ে বললেন, “সেটা পুরোপুরি মানতে চাইনি বলেই ‘অভিযান’ করেছি, ‘একটি জীবন’ করেছি, ‘কোনি’ করেছি, ‘আতঙ্ক’ করেছি, ‘অগ্রদানী’র পূর্ণ চক্রবর্তী করেছি! বার বার চেষ্টা করেছি, যাতে কিছুটা হলেও ছাঁচটা ভাঙা যায়! ‘সমাপ্তি’ ছবিটায় ‘অমূল্য’ করার সময় চোখে একটা বড় চশমা ছিল। এক অগ্রজ, খুব নামী অভিনেতা দেখে বললেন, দিল তোর রোমান্টিক ইমেজটার বারোটা বাজিয়ে! শুনেছি, কিন্তু দৃকপাত করিনি! তবে, ওই... খানিকটা তো...! যাক গে, আবার কিন্তু ফর্মাল ইন্টারভিউয়ের দিকে চলে যাচ্ছে জিনিসটা!”
ঠিক আছে। ভাবুন, দাদাসাহেব ফালকে নিতে এই যে দিল্লি গেলেন। ফ্লাইটে, কোনও সহযাত্রিণী আপনার অটোগ্রাফ নিতে এলেন, আর জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, এই যে এখন মাল্টিপ্লেক্স-এর দৌলতে একটা ছোট্ট, যাকে বলে ‘নিশ অডিয়েন্স’-এর কথা ভেবেও ছবি-টবি হচ্ছে, কখনও মনে হয় না, এই সময় যৌবনকালটা থাকলে ভাল হত?
“বলতাম, মোটেই না! যে সব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল, যে সব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে দেখেছি, তাতে নিজেকে অতি সৌভাগ্যবান বলেই মনে করি।”
যদি সেই ভদ্রমহিলা বলেন, কোথাও লিখব না, মনে রেখে দেব, শুধু যদি এইটুকু বলেন যে, এখন কাজ করে তেমন চ্যালেঞ্জ পান না, তাই না?
“আমি উত্তর দেব না। বরং, অন্য একটা কথা বলব। জিম করবেটের কথা।” সৌমিত্র হাসলেন, “করবেট বলেছিলেন, নরখাদক আছে জেনেও জঙ্গলে ঢুকলে শিরার মধ্যে রক্তটা জোরে দৌড়বেই। তবে, প্র্যাকটিস করতে করতে এখন জানি যে, বুলেটটা ঠিক যেখানে চাইব, সেখান দিয়েই পাঠিয়ে দিতে পারব, ব্যস!”
এ বার হাসি। তৃপ্তির হাসি। পরক্ষণেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আনমনা। বললেন, “এখন তো বয়সটা বেড়েছে, অভিনেতা হিসেবেও আরও অনেক পরিণত... যদি আর এক বার ওই ছ’টা চরিত্র আসে... ঠিক ওই ভাবে নয় হয়তো, কিন্তু দেখতাম, কী ভাবে অন্য রকম করে ফুটিয়ে তোলা যায়!”
ফেরার সময় হল। গাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে সৌমিত্র বললেন, “টালার ওই রেললাইনের ধারটা খুব মনে পড়ে! মানিকদা কত বার রিহার্স করিয়েছিলেন। তারপর অন্ধকারে শট নেওয়া হল। ওই সিনেই আমার কয়েকটা ক্লোজ-আপ আবার অনেক পরে, স্টুডিওতে নেওয়া।”
বললাম, যাক, অন্তত শেষটায় অপুর কাছেই ফিরে এলেন!
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাকালেন। স্থির দৃষ্টি। বললেন, “‘চারুলতা’র অমলের মতো, অপু আর কোনও দিন আমার কাছে ফিরবে না।”
কেন?
“কেননা, সেই অপু কিছুতেই এই সৌমিত্র নয়। সে তার ওই তরুণ বয়সের ফ্রেম-এ স্থির হয়ে আছে। এই বৃদ্ধ অভিনেতার থেকে অনেক দূরে! সে বাসের ভিড়ে হারিয়ে যায়, খ্যাতির বোঝা নেই তার। স্বপ্ন আছে, রাগ আছে, বেদনা আছে...”
কিন্তু, একদিন তো আপনিই ছিলেন অপু! তা হলে কি এখনকার সৌমিত্র সবচেয়ে বেশি তখনকার সৌমিত্রকেই মিস করেন? এই সাম্রাজ্য চাই না, সেই সময়টা ফিরিয়ে দাও!
সৌমিত্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “গল্পের মলাটে বাঁধা পৈঁঠা মাড়িয়ে / ক্রমাগত উঠে যায় কারা / তাদের ছলছল ছবি তুমি ধরে রেখে দিতে চাও বারবার / নীরবিম্ব ভেসে যায় বারবার / তোমারই দুঃখের তটে তুমি শুধু থেকে যাও...”
বললাম, এ তো আপনার কবিতা! প্রশ্নের উত্তর নয়।
“কিন্তু, এটাও তো ইন্টারভিউ নয়, তাই না!”
তা হলে এটা কী? কাগুজে ভাষায়, আপনার প্রতিক্রিয়া?
“এটা? ‘এখন’। মানে, প্রেজেন্ট কনটিনিউয়াস!”
গাড়ির কালো কাচ উঠে গেল।
আলতো হেসে অপুর সংসার ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
|
ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
|
|
|
|
|