|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
সমস্যা জমির |
অঙ্গনেই ঠাঁই |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
দোতলা বাড়ির বাইরে আড়াই ফুট মতো খালি জায়গা। পাশেই সেপটিক ট্যাঙ্ক। সেখানে শতরঞ্চি পেতে বাচ্চারা দিদিমণির সঙ্গে হাত-পা নেড়ে ছড়া বলছে। চলছে অক্ষর চেনার চেষ্টা।
প্রাথমিক স্কুলের বারান্দায় বাচ্চাদের নিয়ে চলছে পড়াশোনা। দিদিমণি জানালেন, বর্ষায় বারান্দার ভাঙা টালি দিয়ে জল পড়ে। তখন প্রায়ই স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। ছবিগুলি বজবজ ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির অর্ন্তগত চকমানিক গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের।
ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, মিড ডে মিল তৈরির কর্মী থাকলেও এই কেন্দ্রগুলির নির্দিষ্ট কোনও বাড়ি নেই। ক্লাবে অথবা কারও বাড়িতে স্কুল চলে। কোনও অনুষ্ঠান থাকলে স্কুল ছুটি দিতে হয়।
চকমানিক গ্রাম পঞ্চায়েতের চকমানিক, ভেট্টাখালি, মুচিশা, চকদৌলত, মনসাতলা এই পাঁচটি গ্রামে মোট ১৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। |
|
ছ’টি কেন্দ্রের নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। বাকি আটটি কেন্দ্র এলাকার ক্লাবঘরে কিংবা কারও বাড়িতে চলে। কয়েকটি ক্ষেত্রে জায়গার অভাবে এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকালে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের স্কুল চালাতে হয়। কোথাও এক স্কুলে এক সঙ্গে দু’টি কেন্দ্রও চলে।
চকমানিক গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রসূতি মা, সদ্যোজাত বাচ্চা এবং ছ’বছর পর্যন্ত শিশু মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির উপরে নির্ভরশীল। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের নার্সারি এবং প্রি-নার্সারি স্তরে পড়ানো হয়। পাশাপাশি প্রসূতি মা এবং ছ’বছর পর্যন্ত শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য দেওয়া হয়। অভিযোগ, স্কুল বাড়ি না থাকায় ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। তাই অনেকে বাবা-মা শিশুদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাঠাতে রাজি হচ্ছে না বলে অভিযোগ এক পঞ্চায়েত কর্মীর। অভিযোগ, নিজস্ব বাড়ি না থাকায় গরমে এবং বর্ষায় তীব্র সমস্যা হয়। কোনও বেঞ্চ নেই। |
|
আগে পলিথিন, ছেঁড়া মাদুরের উপরে বসে বাচ্চারা পড়াশোনা করত। শৌচাগারও নেই। সম্প্রতি পঞ্চায়েত থেকে কয়েকটি কেন্দ্রে শতরঞ্চি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্ষায় মেঝেতে শতরঞ্চির উপর বসে পড়াশোনা বা খাওয়ায় বেশ সমস্যা হয়। তাই এই সময়ে অভিভাবকরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠান না। ফলে বাচ্চাদের পড়াশোনারও ক্ষতিও হয়।
অভিযোগ, রান্নার সুব্যবস্থা নেই। কয়েকটি জায়গায় বাঁশে ঘেরা প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া ঘরে রান্না হয়। ফলে খাবারে কিছু পড়ে বিষক্রিয়ার আশঙ্কা থেকেই যায় বলে জানালেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী।
সমস্যার কথা স্বীকার করে চকমানিক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সজল মাইতি বলেন, “বাড়ি তৈরির টাকা পাওয়া গেলেও জায়গার জন্য সমস্যা হচ্ছে। জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করা সম্ভব নয়।” সরকারি স্কুলের ফাঁকা জমিতে বাড়ি করা হচ্ছে না? সজলবাবু বলেন, “উচ্চমহলে খোঁজ নিয়ে দেখব।” পঞ্চায়েত সমিতির এক আধিকারিক জানান, জায়গার অভাবেই বাড়ি করা যাচ্ছে না।
নারী-শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “সমস্যাটি দীর্ঘ দিনের। জমির সমস্যায় কেন্দ্র তৈরি আটকে আছে। রাজ্য সরকার বাড়ি করার অর্থ দিলেও জমি কেনার অর্থ দেয় না। তবুও কী করা যায় দেখছি।” |
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|