|
|
|
|
|
|
বঙ্গে বাণিজ্য |
পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে... |
গৌতম বসুমল্লিক |
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের আহ্বানে মোটা বেতনের চাকরির লোভ ছেড়ে সিঁদুর-আলতার ব্যবসা শুরু করেছিলেন কলকাতায় পড়াশোনা করতে আসা চিত্তরঞ্জন দাস। সেখান থেকেই শুরু ‘রাঙাজবা’ নামের সেই সিঁদুর-আলতার ইতিহাস।
১৯২০-র দশকে পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর থেকে এ শহরে আসেন চিত্তরঞ্জন। উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার অঞ্চলে একটি একান্নবর্তী পরিবারে বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়ানোর বদলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হল তাঁর। তিনি ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ (পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)-এ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেন। পাশ করে সে যুগের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান বার্ন স্ট্যান্ডার্ডে চাকরির ডাক পেয়েও যোগ না দিয়ে শুরু করলেন ব্যবসা।
|
|
বিংশ শতাব্দীর প্রথম পর্বেই ভারতে, বিশেষ করে বাংলায় স্বদেশি শিল্পের জোয়ার আসে। ভাসলেন চিত্তরঞ্জনও। পড়াশোনার খরচ জোটাতে অবসরে ডিম, গামছা ইত্যাদি বিক্রি করতেন। পরে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছিলেন নতুন ব্যবসায়। শ্যামবাজার অঞ্চলেরই একটি বাড়ি থেকে ১৯২৪-এ আলতা, সিঁদুর বিক্রি শুরু করলেন। পরে দক্ষিণ কলকাতার ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটে ‘অনুম্পা কেমিক্যাল’ নামে কারখানা খুলে দেশীয় পদ্ধতিতে নিজেই আলতা, সিঁদুর তৈরি শুরু করলেন। পরে সেটি ‘রাঙাজবা সোপ অ্যান্ড কেমিক্যাল প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে পরিচিত হয়। অচিরেই বাজারে সুনাম ছড়ায় ‘রাঙাজবা’-র। ১৯৪৪-এ টালিগঞ্জ অঞ্চলে ৪/২ চণ্ডীতলা লেনে তিন বিঘা জমির উপর তৈরি হল সংস্থার নতুন কারখানা ও কার্যালয়।
|
|
প্রথম দিকে শুধু আলতা, সিঁদুর আর কুমকুম তৈরি হত। চিত্তরঞ্জন দেখলেন মহিলাদের নানা প্রসাধনীর বেশির ভাগই আমদানি হচ্ছে বিদেশ থেকে। তিনি তখন দেশীয় পদ্ধতিতে সে সব তৈরিতে উদ্যোগী হলেন। তার পরে বিভিন্ন সময়ে নারকেল তেল, বডি-পাউডার, ফেস পাউডার, সাবান, নেলপালিশ, গোলাপজল, আয়ুর্বেদিক তেল, কালি, ফিনাইল প্রভৃতিও তৈরি শুরু হয়। চিত্তরঞ্জনের ছোট ছেলে, ‘রাঙাজবা’-র বর্তমান কর্ণধার স্বপনকুমার দাস বলেন, “এক সময়ে সিঁদুর-আলতার পাশাপাশি আমাদের অন্য সামগ্রীরও কদর ছিল সারা ভারতে। পরে বহুজাতিক কোম্পানিগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে পড়ি। ফলে এখন আলতা এবং সিদুঁরই প্রধান। পাশাপাশি গ্লিসারিন, গ্লিসারিন সাবান, ধূপ, ফিনাইল আর চানাচুর তৈরির উপরেও জোর দিয়েছি আমরা। আমাদের নিজস্ব বিপণন ব্যবস্থাও আছে।”
পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, দিল্লি, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, অসম, ত্রিপুরা ও ওড়িশাতেও রাঙাজবার নিজস্ব বিপণন-ব্যবস্থা রয়েছে। আলতা ও সিঁদুরের নানা মান রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণির ক্রেতার জন্য। দেশীয় পদ্ধতিতে সূচনা হয়েছিল ‘রাঙাজবা’-র ব্যবসার, এখনও সেই ধারাই বহন করে চলেছে এই সংস্থা। |
ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী |
|
|
|
|
|