আজ পকেটে ইডেনের টিকিট মানেই ‘ডন’
‘হবে?’ ‘আছে’? ‘অন্তত একটা?’
ময়দানে কান পাতলে অবধারিত ভাবে উঠে আসছে এই শব্দগুচ্ছ।
আজ পকেটে একটা টিকিট মানে আপনি এই শহরের ‘ডন’। কালোবাজারে পাঁচশোর টিকিটের দাম পাঁচ হাজার টাকা। আর ক্লাবহাউস? দেখলে হবে, খরচা আছে! গুণে-গুণে দিতে হবে চল্লিশ হাজার! পুলিশের নজরদারি রয়েছে, ধরাও পড়েছে জনা কুড়ি। কিন্তু তাতে দমবার কোনও লক্ষণ নেই কালোবাজারিদের। বড়বাজারে উপযুক্ত জায়গায় খোঁজ করলেই মিলছে টিকিট।
পোয়াবারো ‘ফ্লাইং’-দেরও। আইপিএলের ম্যাচে ময়দানি হকারদের বলা হয় ‘ফ্লাইং।’ শুক্রবার রাত থেকেই ময়দানের বাঁশের ব্যারিকেডের আশপাশের দখল নিয়ে মারকাটারি প্রতিযোগিতা। লজেন্সওয়ালা-প্যাটিসওয়ালারা এসে পড়ছেন রাত থেকেই। ‘ফ্লাইং’-দের রমরমা ব্যবসা বলতে আটটা দিন। কেকেআরের আটটা হোম ম্যাচ। তা প্যাটিসের বাক্স হাতে জনৈক ফ্লাইং ক্লাবহাউসের ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে উল্লসিত, “দু’ট্রাঙ্ক ভর্তি প্যাটিস আনব। আশা করছি দুপুর দু’টোর মধ্যে উড়ে যাবে। রিজার্ভ থাকবে আরও দুটো ট্রাঙ্ক।”
মহাযুদ্ধের আগে শহরের রাজপথে শিল্পীর তুলিতেও দাদা বনাম খান। ছবি: পিটিআই
‘ফ্লাইং’-দের অতি উৎসাহী হওয়ার কারণ আছে। শুধু দাদা বনাম খান দিয়েই দশ দিনের বাজার এক দিনে টেনে দেওয়ার গল্প আছে। আবার একই সঙ্গে রয়েছে আশঙ্কার তিরতিরে স্রোত। “দেখবেন দাদা, ওপর থেকে ঢালবে না তো?” প্রকৃতির উপদ্রব যদি এমন অভূতপূর্ব ম্যাচের শত্রু হয়ে দাঁড়ায়, তার ঢাল হয়ে উঠতে যাবতীয় প্রস্তুতি সারা সিএবি-র। শনিবার ইডেনে ম্যাচ বাঁচাতে সিএবি-র অস্ত্রভাণ্ডারে থাকছে চারটি সুপার সপার। বৃষ্টি পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চালু হয়ে যাবে ন’টি জলনিকাশি পাম্প। যা দ্রুত ইডেনের মাঠ শুকিয়ে ফেলবে। কালবৈশাখীর উড়ো ধাক্কা যদি আসেও, বৃষ্টি থামলে ম্যাচ দ্রুত শুরু করার চেষ্টা হবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল ও বোর্ড কর্তাদের সামনে আর মুখ পোড়াতে চায় না সিএবি। হাজির থাকার কথা প্রাক্তন আইপিএল চেয়ারম্যান চিরায়ু আমিনেরও। বিকেল চারটের ম্যাচের ‘কাট অফ’ টাইম হল সন্ধে সাতটা কুড়ি। যেখানে ন্যূনতম পাঁচ ওভারের একটা ম্যাচ করা যেতে পারে। তা হলে কিন্তু বাড়ি বসে টিভি-তে ম্যাচ দেখার সম্ভাবনা শেষ। কারণ সাতটা কুড়িতে ম্যাচ শুরু হলে তা সরাসরি দেখানো যাবে না পরের ম্যাচ আটটায় শুরু হবে বলে।
শনিবার ইডেনে ম্যাচ যদিও একটা নয়। একজোড়া। একটা দেখলে, একটা ফ্রি! কেকেআর বনাম পুণে-র পর হওয়ার কথা দু’টো টিমের সেলিব্রিটি ম্যাচও। যেখানে কেকেআরের ক্যাপ্টেন নাকি শাহরুখ। সবটাই অবশ্য কিং খানের মর্জির উপর। পুরোপুরি ক্রিকেটের নিয়ম মেনে খেলা। টেনিস নয়, ক্রিকেট বলে। টলিউডের নামীদামিরা খেলবেন কেকেআরের হয়ে। পুণে-র যদি তারকা সমাবেশ সে ভাবে না ঘটে, তা হলে জাতীয় দলের হকি প্লেয়ারদের নামিয়ে দিতে পারে সহারা। নাইট মালিকের জন্য থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা। ‘বি’ ব্লকের যে কোণটায় বরাবর থাকেন শাহরুখ তার চারপাশে থাকবেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী।
এ যদি হয় মাঠের ভেতরের ছবি, বাইরেটাও কম রংচঙে নয়। সিএবি-র জায়ান্ট স্ক্রিন বসানোর নীলনকশায় ম্যাচ শুরুর চব্বিশ ঘণ্টা আগে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীর থাবা! বৃহস্পতিবারই কলকাতা পুলিশের আপত্তিতে শহিদ মিনার ও চাঁদপাল ঘাটে সিএবি-র বড় স্ক্রিন বসানোর ভাবনা ভেস্তে যায়। এ দিন সকাল থেকে কর্তারা চেষ্টা চালিয়েছেন যদি কোনও ভাবে পুলিশকে রাজি করিয়ে অন্তত দু’টো স্ক্রিন বসানো যায়। তাতে অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। উল্টে মহাকরণে বিকেল নাগাদ ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র ঘোষণা করে বসেন, রাজ্যের ৬৪টা মহকুমাতে বসবে জায়ান্ট স্ক্রিন। বসবে জগুবাবুর বাজার, যাদবপুর, বেলঘরিয়া, বরাহনগরের মতো শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেও। আর বসাবে সিএবি নয়, রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদ। গাঁটের কড়ি অবশ্য সরকারকে খরচ করতে হচ্ছে না। স্পনসর একটি বেসরকারি সংস্থা। রাতে এই খবর পেয়ে সিএবি কর্তাদের মাথায় হাত। আফশোস ও আক্ষেপ ধরা পড়ছে কর্তাদের গলায়। “আমরাই তো আগে বসাতে চেয়েছিলাম। রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়েই। পুলিশ আপত্তি করল। তারাই এখন কী করে অনুমতি দিচ্ছে?” প্রশ্ন যুগ্ম-সচিব বিশ্বরূপ দে-র। মন্ত্রী-আমলাদের টিকিটের চাপে নাভিশ্বাস উঠেছে কর্তাদের। অধিকাংশই ফোন নম্বরই বদলে ফেলেছেন।
এত সব অবশ্য নাইটদের জানার কথা নয়। দুপুরে রুটিনমাফিক ঘণ্টা তিনেকের প্র্যাক্টিস। তার পর টিম বাসে ওঠা এবং হোটেলে ফেরা। ক্লাবহাউসের ঠিক বাইরে উৎসাহী জনতার পরিচিত উল্লাসধ্বনি। লিগ টেবলে দু’নম্বরে থাকা সুখী পরিবারের দুশ্চিন্তার সামান্য কাঁটা শুধু ব্রেট লি-র জ্বর। শুক্রবার প্র্যাক্টিসে আসেননি লি, যেমন আসেননি ইউসুফ পাঠানও। দু’দিনের ছুটি নিয়ে যিনি বাড়ি থেকে ঘুরে এলেন। সব মিলিয়ে শাহরুখের নাইটরা তৈরি। চার বছরে যে শিরস্ত্রাণ থেকে কদাচিৎ ফুলকি উঠেছে, সেখান থেকে এখন আগুন ছুটছে। ‘নিউ ডন, নিউ কেকেআর।’
অপেক্ষা শুধু কয়েক ঘণ্টার। সঙ্গে স্লোগান চাই? ব্রিগেড নয়, আজ ‘ইডেন চলো’।

ডেকানকে হারিয়ে ধোনিরা এখন চারে
ডেকান চার্জার্সকে ১০ রানে হারিয়ে চার নম্বরে উঠে এল চেন্নাই সুপার কিংস। ঘরের মাঠে চেন্নাই এ দিন ২০ ওভারে করেছিল ১৬০-৬। জবাবে ডেকান করতে পারে ১৫০-৫। চেন্নাইয়ের হয়ে দু’প্লেসি সর্বোচ্চ ৪২ করেন ৩৫ বলে। ধোনি (৩৪) ও ম্যাচের সেরা রায়না (৩২) গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। কিন্তু চেন্নাই খুব দ্রুত রান তুলতে পারেনি। বাংলার অভিষেক ঝুনঝুনওয়ালা ৩ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে এক উইকেট নেন। পাশাপাশি নিয়মিত উইকেট হারিয়ে ১৬০-এর বেশি তুলতে পারেননি ধোনিরা। একটা সময় মনে হয়েছিল ডেকানই ম্যাচ জিতে যাবে। ক্রিজে তখন দুরন্ত ব্যাটিং করছেন ক্যামেরন হোয়াইট (৭৭) এবং শিখর ধাওয়ান (৩৬)। হোয়াইটের রান আউটে স্বপ্নভঙ্গ হয় ডেকানের। সঙ্গকারা (১) এ দিনও ব্যর্থ। শেষ দিকে মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ান (২৭)। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.