‘নীচে লুকিয়ে থেকে
এ ভাবে ক্রিকেট হয় না’
রাত দশটা নাগাদ যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দমদম বিমানবন্দরে পা দেবেন, তাঁকে দেখে বোঝার উপায় নেই শুক্রবার দুপুর দেড়টাতেও তাঁকে কতটা বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিল। ম্যারিয়ট হোটেলের পনেরো তলার কোনার ঘরটার বাইরে ঝুলছে ‘প্রাইভেসি প্লিজ’। অর্থাৎ বিরক্ত করবেন না। সেটা অগ্রাহ্য করে টোকা দেওয়ায় যে ভদ্রলোকের সাক্ষাৎ পাওয়া গেল, তিনি তখনও অঘোরে ঘুমোচ্ছিলেন। মুখচোখের চেহারা বলে দিচ্ছে, এই লোকটা কাল সারা রাত্তির ঘুমোয়নি। দ্রুতই অবশ্য ভেতর থেকে লাল টি-শার্ট পরে চলে এলেন। একান্ত সাক্ষাৎকারের জন্য কথা বলার ভঙ্গিটাও যেন গেল বদলে...

প্রশ্ন: একটা ধারণা ছড়াচ্ছে, শনিবার ইডেনে সৌরভের শেষ বড় ম্যাচ। সত্যি?
সৌরভ: জানি না। ভাবিনি।

প্র: সে কী! ভাবেননি?
সৌরভ: না।

প্র: ইডেন ম্যাচে ভিড় করে আপনার যে ভক্তবৃন্দ আসবে এবং যারা মাঠের বাইরে থাকবে, তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
সৌরভ: নাহ্, ইডেন ম্যাচ নিয়ে কিছু বলতেই চাই না।

প্র: জীবনের মহা গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে কেমন উইকেট চান?
সৌরভ: কোনও পছন্দ নেই। যা দেবে, তাতেই খেলব। ওদের মাঠ। ওদের ইচ্ছে।

প্র: সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কাল রাত্তিরের পর থেকে তুমুল আলোড়ন শুরু হয়ে গিয়েছে। আজকেই দেখছিলাম আপনার আউট হওয়ার ছবি দিয়ে এক ভক্ত পোস্ট করেছে ‘ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট’। কেউ কেউ ফেসবুক ওয়ালে লিখেছে, ‘দাদা সঙ্গে আছি’।
সৌরভ: ফর্ম হারাইনি তো। আগের ম্যাচটাতেই তো রান করলাম।

প্র: তবু দেখে মনে হচ্ছে ব্যাটিংয়ে পরিষ্কার অস্বাচ্ছন্দ্য হচ্ছে। বাঁ-হাতি স্পিনার আপনার বরাবরের প্রিয় খাদ্য। তাকেও স্টেপ আউট করছেন না?
সৌরভ: কী করে করব? কাল প্রজ্ঞানকে যখন বল করতে দিল, ৪০-এর ঘরে ৪ উইকেট চলে গেছে আমাদের। ওটাই যদি ফর্টি ফর ওয়ান হত, দেখতেন ওকে দু’বার গ্যালারিতে ফেলে দিয়েছি।
শহরে পা ওয়ারিয়র্স অধিনায়কের। শুক্রবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
প্র: তবু এ বারের টুর্নামেন্টে স্পিনারদের আপনি প্রচুর ডট বল খেলেছেন। তুলনায় পেসারদের বিরুদ্ধে স্বচ্ছন্দ দেখাচ্ছে।
সৌরভ: ডেল স্টেইন আর মর্কেল, দু’জনের বিরুদ্ধেই রান করেছি। এর থেকেই তো প্রমাণ হয় আমার রিফ্লেক্স কমেনি। রিফ্লেক্সই যদি কমে যেত, ডেল স্টেইনকে পয়েন্টের উপর দিয়ে মারতে পারতাম না।

প্র: মাত্র ১২১ তাড়া করতে গিয়ে হাতে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ হারা কি আপনার জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক আইপিএল হার?
সৌরভ: বেঙ্গালুরু ম্যাচটা আর এটা, দুটো।

প্র: কখনও কি মনে হচ্ছে না, এই টিমটা জেতা অবস্থায় থাকলে দারুণ মনোবল নিয়ে আপনি কলকাতার চূড়ান্ত বক্স অফিস ম্যাচে যেতে পারতেন?
এখন তো টিমের মনের জোরটাই ভেঙে গেছে।

সৌরভ: মনের জোর ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারটাই থাকত না যদি আমরা অন্য টিমগুলোর মতো ভেসে উঠতে পারতাম। সমস্যা হচ্ছে ডুবছে সবাই। আশেপাশের টিমগুলোকে দেখুন। অন্যরা ডুবে আবার কিছুক্ষণ পর ভেসে উঠছে। আমরা সেটা পারছি না।

প্র: আর একটা মতবাদ হল আপনি ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে বড় আগে রাখছেন। নিজে অহেতুক চাপ নিচ্ছেন। তাই দোষের ভাগীও আপনাকে হতে হচ্ছে।
সৌরভ: আমার খেলাটাই ও রকম সামনে খেলা। আমি, সহবাগ, সচিন--- আমরা সামনে খেলার প্লেয়ার। দেখছেন তো, রাহুলও সেই ওপেনই করছে। এখনও ওপেন করলে পাঁচটা ম্যাচে দুটো আমি জিতিয়ে দেব।

প্র: কিন্তু কালকেই তো আপনি চার নম্বরে স্টিভ স্মিথকে পাঠাতে পারতেন? আপনি নিজে আগে গেলেন বলে এত ডট বল খেলার কথা হচ্ছে?
সৌরভ: তখন টার্ন করছিল। স্পিনাররা বল করছিল। আমি যদি ওই সময়টা না ধরতাম, তা হলে খেলাটা হয়তো শেষ ওভার অবধিও যেত না। টি-টোয়েন্টি মানেই তো অবিরত মার নয়, আপনাকে পরিস্থিতিটাও বুঝতে হবে।

প্র: তবু ফিল্মে বয়স হয়ে যাওয়া একজন স্টার পুরো ঝুঁকিটা নিজের ঘাড়ে রাখেন না। নতুন তারকাকে এগিয়ে দেন। ফুটবলে দুই স্টপারের মধ্যে যে প্রবীণ, সে পিছনে চলে আসে। প্রথম ট্যাকলটা সাধারণত করে কমবয়সি স্টপার। যে অভিজ্ঞ সে পিছন থেকে খেলে অভিজ্ঞতা আর অ্যান্টিসিপেশনকে মূলধন করে। আপনি কেন এখনও তরুণের কাজটা নিজে করতে চাইছেন? আপনি তো অনায়াসে ছয়-সাতে গিয়ে টিমটাকে গাইড করতে পারেন?
সৌরভ: দুটো কথা বলব। আমার খেলাটা ওপরে খেলার। নাইট রাইডার্সের হয়ে যত ম্যাচ জিতিয়েছি, সব ওপেন করে। এই প্রজ্ঞান ওঝা, যার কথা বলছিলেন তার সঙ্গে একটা ম্যাচে ৯১ করেছিলাম। আর একটা ম্যাচে বোধহয় ৮৮। সেই ম্যাচে পরিস্থিতিটা সে রকম ছিল। আর সেকেন্ড কথা বলি। পিছনে লুকিয়ে থেকে ক্রিকেট এ ভাবে হয় না। নীচে থেকে অন্যকে এগিয়ে দিলাম, সেই স্টাইলটা আমার নয়। এ ভাবে কখনও ভাবিনি।

প্র: কিন্তু সামনে খেলায় তো স্পটলাইটটা আরও বেশি পড়ছে?
সৌরভ: স্পটলাইট তো পড়বেই। সেটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। প্রেসার, সেটাও আমার জীবনেরই অংশ। প্রেসার আমার কাছে নতুন কিছু নয়।

প্র: কলকাতা আপনাদের টানা চার ম্যাচ হারা সত্ত্বেও উত্তাল।
সৌরভ: আমি শহরের ছেলে। কলকাতায় তো একটু আবেগ হবেই।

প্র: সে তো দ্রাবিড়ও বেঙ্গালুরুর ছেলে। আরসিবির বিরুদ্ধে খেলার সময় এ রকম আবেগ তো হয়নি?
সৌরভ: হুম...গত পনেরো বছরে তো ইন্টারভিউতে অনেক কথাই বলেছি। ইডেন নিয়ে না হয় না-ই বা বললাম।

প্র: কেকেআর সূত্রে বলা হচ্ছে, তারা আপনাকে মোটেও বাতিল করেনি। নিলামের আগে আপনাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, মেন্টর হয়ে যান। প্লেয়ার হিসেবে নিতে পারব না। কিন্তু টিমের সঙ্গে স্বাগত। সুতরাং খান চরম অবিচার করেছেন, এটা ঠিক নয়।
সৌরভ: এটা কে বলল?

প্র: নামটা এই মুহূর্তে বলছি না। কিন্তু শুধু বলুন এটা সত্যি কি না যে, আপনি বলেছিলেন আমাকে মেন্টর-কাম-প্লেয়ার করে রাখো। প্রয়োজনে সাইডলাইনে বসিয়ে দাও। কিন্তু প্লেয়ার হিসেবে ধরো। কেকেআর নাকি মেন্টর-কাম-প্লেয়ার কনসেপ্টে রাজি হয়নি। তাদের যুক্তি ছিল মেন্টর নিজে বাদ পড়লে সহ-খেলোয়াড়কে কী ভাবে উদ্দীপ্ত করবে? এটা সত্যি?
সৌরভ: এ সব নিয়ে একটা কথাও বলতে চাই না।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.