|
|
|
|
|
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন |
কংগ্রেস-প্রশ্নে ফের বিতর্ক সিপিএমে
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
|
পার্টি কংগ্রেসে সদ্য বিজেপি এবং কংগ্রেসের থেকে শত যোজন দূরত্ব বজায় রাখার ‘লাইন’ গৃহীত হয়েছে। তার অল্প দিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে সিপিএমের মধ্যে আবার বিতর্ক মাথা চাড়া দিচ্ছে!
প্রশ্ন উঠেছে রাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেসের তরফে কোনও ‘গ্রহণযোগ্য’ নাম এলে তাঁকে সমর্থনের প্রশ্নে কি পার্টি কংগ্রেসের লাইন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে?
নবনির্বাচিত পলিটব্যুরোর প্রথম বৈঠক বসছে কাল, রবিবার ও পর দিন সোমবার। দিল্লির ওই বৈঠকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনই অন্যতম আলোচ্য হতে চলেছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। কংগ্রেস এবং বিজেপি, দু’দলকেই একেবারে ‘ব্রাত্য’ ঘোষণা করে ‘বন্ধ দরজার রাজনীতি’ কতটা ‘বাস্তবসম্মত’, তা নিয়ে এমনিতেই কেন্দ্রীয় কমিটির অন্দরে প্রশ্ন আছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে। দলের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক লাইন মেনে চলতে গেলে রাষ্ট্রপতি পদে ইউপিএ এবং এনডিএ বাদে অন্য দলগুলির তরফে কোনও তৃতীয় প্রার্থী খাড়া করতে হয়। অঙ্কের বিচারে যাঁর জয়ের কোনও সম্ভাবনা নেই! আবার কংগ্রেসের ঘোষিত প্রার্থী ‘গ্রহণযোগ্য’ হলে পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইনের সঙ্গে আপাতত ‘আপস’ করতে হয়! এই দোলাচল নিয়েই প্রকাশ কারাটদের ফের দলের মধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে।
পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “কখনও কোনও পরিস্থিতিতেই কংগ্রেসকে সমর্থন করা যাবে না, এমন একটা অবস্থান রাজনীতিতে কানা গলিতে গিয়ে পড়ার সামিল! রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেই এই অবস্থানের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তা ছাড়া, এমন অবস্থান নিয়ে চললে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের আন্তরিকতার প্রশ্নেও সংশয় তৈরি হতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে, সাম্প্রদায়িক বিজেপি-কে ঠেকানোর জন্য আমরা যথেষ্ট করণীয় করছি কি?” রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী নিয়ে আলোচনা সারতেই শুক্রবার সমাজবাদী পার্টির সর্বোচ্চ নেতা মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন কারাট ও পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। যে মুলায়মের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আলোচনা করেছেন ইউপিএ-র শরিক, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বভাবতই, কারাটেরা এখন বুঝতে পারছেন, ইউপিএ-এনডিএ’র ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলার ‘নীতি’ বাস্তবের রাজনীতিতে অনুশীলন করা কত কঠিন! আনুষ্ঠানিক ভাবে সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য আর সব দলের মতোই বলছেন, তাঁরা চান ‘সর্বসম্মত’ রাষ্ট্রপতি-প্রার্থী হোন। তা হলে তাঁদেরও ‘বিড়ম্বনা’ বাঁচে!
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অঙ্ক অনুযায়ী, চার বাম দলের মোট ভোট এখন ৫১ হাজার ৬৮২। অর্থাৎ ৫%। যা এখনও তৃণমূলের ভোটের (৪৮ হাজার ৪৯ অর্থাৎ ৪%) চেয়ে বেশি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের মতে, “আমাদের শক্তি কমে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনও আমরা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাইনি। তর্কের খাতিরে ধরা যাক, কংগ্রেসের তরফে কোনও গ্রহণযোগ্য সংখ্যালঘু প্রার্থীর নাম এল রাষ্ট্রপতি পদে। বা মুলায়মদের প্রস্তাবিত কোনও নাম কংগ্রেস আনুষ্ঠানিক ভাবে আনল। সেখানে আমরা উল্টো অবস্থান নিলে তো সংখ্যালঘুদের কাছে ভুল বার্তা যাবে!” দলের একাংশের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোট এখন প্রায় ২৬%। কংগ্রেসের হাত ধরে গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে যার সিংহভাগই ঘরে তুলেছেন মমতা। কেরলেও সংখ্যালঘু ভোটের হার প্রায় ২৩%। ‘কট্টরপন্থী’ কোনও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে চললে সংখ্যালঘু মন পুনরুদ্ধার দুরূহ হয়ে পড়বে বলেই দলের এই অংশের বক্তব্য।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে পলিটব্যুরোর এক সদস্যের অবশ্য বক্তব্য, “কংগ্রেস কার নাম প্রস্তাব করবে, সেটা আগে দেখতে হবে।” চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কারাটরা অবশ্যই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতামত নেবেন। শারীরিক কারণে যিনি এ বারও দিল্লির বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন না। পলিটব্যুরো যে দিন
বসবে, সে দিন বুদ্ধবাবু থাকবেন খড়দহে এক জনসভায়। তবে দলের অন্দরে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁর শরীরের অবস্থা আগের চেয়ে ভাল। স্বাস্থ্যের অগ্রগতি ঠিক থাকলে অদূর ভবিষ্যতে কলকাতার বাইরে পলিটব্যুরোর বৈঠকে তিনি যোগ দিতে যেতে পারেন। তবে কলকাতায় থেকেও তিনি দলের সর্বভারতীয় বিষয়ে ‘সক্রিয়’।
কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “এখনই না-পারলেও কিছু দিন পর বুদ্ধবাবু কলকাতার বাইরে এই ধরনের কর্মসূচিতে যেতে পারবেন বলেই মনে হচ্ছে।” ইতিমধ্যেই বাঁকুড়ায় যুব সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনে যাওয়ার ব্যাপারে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। যাবেন গাড়িতে। তবে স্টেশনের সিঁড়ি ভাঙতে হবে বলে ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনে আলিপুরদুয়ার যাওয়ার আমন্ত্রণ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি। |
|
|
|
|
|