রাজধর্ম পালনে আগ্রহের প্রমাণ দিয়েই হস্তক্ষেপ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁর সেই হস্তক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল সুরেন্দ্রনাথ সান্ধ্য কলেজে। শুক্রবার ওই কলেজে ফের ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানান, এ দিন কলেজে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ভালই ছিল।
তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর ঝগড়ায় পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে, কলেজ-কর্তৃপক্ষ ১৫ মে পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। দুষ্কৃতীদের নামে পুলিশের কাছে বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলেও কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। এই অবস্থায় শিক্ষিত সমাজ তো বটেই, সাধারণ মানুষের কাছেও যে ভুল বার্তা যেতে পারে, সেটা অনুধাবন করে মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে জানিয়ে দেন, কলেজ যাতে কোনও ভাবেই বন্ধ না-হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করে সে-কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন তিনি। উচ্চশিক্ষা দফতরের মাধ্যমে সেই বার্তা কলেজ-কর্তৃপক্ষকেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
সুরেন্দ্রনাথ সান্ধ্য কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতি শুক্রবার বলেন, “অন্য দিনের তুলনায় এ দিন বরং বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত হয়েছেন। যে-সব ক্লাস হওয়ার কথা, সেগুলি হয়েছে। কলেজের বাইরে পুলিশকর্মীদেরও পাহারা দিতে দেখা গিয়েছে। সব মিলিয়ে এ দিন স্বাভাবিক ভাবেই কলেজ চলেছে।”
শুধু ক্লাস হওয়াই নয়। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে যে আরও কিছু কাজ হয়েছে, এ দিন ওই কলেজে গিয়ে তা দেখা গেল। কলেজের মূল দরজার সামনে নোটিস ঝুলিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রথম বর্ষে ছাত্র ভর্তির পুরোটাই হবে অনলাইনে। সুরেন্দ্রনাথ দিবা কলেজের অধ্যক্ষ চিন্ময়শেখর সরকার বলেন, “কলেজের ওয়েবসাইটে ১০-১২ দিন আগেই এই নোটিস দেওয়া হয়েছে। এ বার কলেজের সামনেও তা ঝুলিয়ে দেওয়া হল। এতে ছাত্রছাত্রীদেরই সুবিধা হবে।” স্থানীয় সূত্রের খবর, কলেজে ছাত্র ভর্তির লাগাম কার হাতে থাকবে, তা নিয়েই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধেছিল। কলেজ-কর্তৃপক্ষ অবশ্য আগেই অনলাইন ভর্তির কথা জানিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও ঝগড়া মেটেনি। এখন মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পরে বিবদমান কোনও পক্ষই আর এই ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার সাহস পাবে না বলে এলাকার মানুষ মনে করছেন।
সিটি কলেজেও তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে শুক্রবার পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ ছিল। কিছু বিশেষ ক্লাস হওয়ার কথা ছিল সেখানেও। সুরেন্দ্রনাথের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের জেরে লাভ হয়েছে সিটি কলেজেরও। শুক্রবার কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকের পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুকুলকান্তি মান্না বলেন, “বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এ বছর ছাত্র ভর্তি হবে অনলাইনে। কারণ ছাত্র ভর্তিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে গোলমাল বাধে। আর যে-হেতু কলেজের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, তাই আগামী সোমবার থেকে কোনও বিভাগ চাইলে বিশেষ ক্লাসও নিতে পারে।” |